২০১১ সালে
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারি-বেসরকারি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ১১ ধরনের শারীরিক ও দুই ধরনের মানসিক
শাস্তি নিষিদ্ধ করে। ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক
শাস্তি রহিত করাসংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১১’ নামের এই নীতিমালায় নিষিদ্ধ
শারীরিক শাস্তিগুলো হলো শিক্ষার্থীদের শরীরে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা
বেত্রাঘাত, চক বা ডাস্টার জাতীয় বস্তু ছুড়ে মারা, আছাড় দেওয়া ও চিমটি কাটা,
শরীরের কোনো স্থানে কামড় দেওয়া, চুল টানা বা কেটে দেওয়া, হাতের আঙুলের
ফাঁকে পেনসিল চাপা ও মোচড় দেওয়া, ঘাড়ধাক্কা দেওয়া, কান টানা বা উঠবস করানো,
চেয়ার, টেবিল বা কোনো কিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাঁটু গেড়ে দাঁড়
করে রাখা, রোদে দাঁড় করিয়ে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়
করানো এবং শ্রম আইনে নিষিদ্ধ কোনো কাজ শিক্ষার্থীদের দিয়ে করানো। নীতিমালা
অনুযায়ী, কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের শাস্তি দেওয়ার অভিযোগ উপস্থাপন
এবং ওই শিক্ষক অভিযুক্ত হলে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা,
১৯৮৫-এর আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও ব্যবস্থা নেওয়া
যাবে তাঁদের বিরুদ্ধে। নতুন এই নীতিমালা সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক,
নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক
কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদরাসাসহ (আলিম পর্যন্ত) অন্য সব ধরনের
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
২০১১ সালে
জারি করা নীতিমালা যে ২০২১ সালেও মানা হচ্ছে না, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত
খবরেই তা স্পষ্ট। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে,
মাদরাসাছাত্রদের ব্যঙ্গ করে ডাকা ও অসদাচরণের প্রতিবাদ করায় বরিশালের
গৌরনদীর এক কওমি মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১০ ছাত্রকে হাতুড়িপেটা করার
অভিযোগ উঠেছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ আবাসিক
শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা
মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে? স্কুলগুলোতে চাইল্ড
সাইকোলজিস্ট নিয়োগ করার বিধান থাকলেও তা করা হয় না? শিক্ষাব্যবস্থা
শিক্ষার দর্শন অনুযায়ী গড়ে ওঠেনি? আর কওমি মাদরাসাগুলো যেহেতু সরকারের
নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই তারা সরকারের নির্দেশও মানতে চায় না?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা রোধ করা না গেলে
শিক্ষার্থীদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ পড়বে? শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ ও আতঙ্কের
মধ্যে থাকলে মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে? আর তাই অবিলম্বে এ প্রবণতা রোধ
করতে হবে।