ভাগ্য গণনা ও ভবিষ্যৎ জিজ্ঞাসার বিধান
Published : Friday, 5 November, 2021 at 12:00 AM
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ||কোনো গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া, তাদের হাত দেখানো, ভবিষ্যদ্বাণী জানতে চাওয়া শিরক। মহান আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর কেউ জানে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর গায়েবের চাবি তাঁরই কাছে আছে, তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা জানে না। স্থল ও সাগরের অন্ধকারে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত আছেন, তাঁর অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোনো শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোনো বস্তু নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)
গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের ভিত্তিতে কারো ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার বিশ্বাস একটি কল্পনাপ্রসূত ভিত্তিহীন কুফরি বিশ্বাস। গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত কোনো প্রভাব বা ইঙ্গিত থাকলেও তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই জ্যোতির্বিদরা যা কিছু বলে থাকেন সবই কাল্পনিক। কেননা জ্যোতিষশাস্ত্র কোরআন-হাদিস, যুক্তি বা চাক্ষুষ প্রমাণ কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত নয়; বরং এ শাস্ত্রের সব কিছু অনুমাননির্ভর ও কাল্পনিক। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯০৫, ইহইয়াউল উলুম : ১/৩০)
মানুষের মধ্যে যেসব লোক অদৃশ্য ও ভবিষ্যৎ-জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবি করে, তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমনÍগণক, ভবিষ্যদ্বক্তা, জাদুকর, ভবিষ্যদ্রষ্টা, জ্যোতিষী, হস্তরেখা বিশারদ প্রভৃতি। অনেকে জিনকে বশ করে বিভিন্ন ধরনের হাজিরা দেয়। অথচ মানুষ জিনদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। কেননা এ বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা শুধু সুলায়মান (আ.)-কে প্রদান করা হয়েছিল। এ অবস্থায় আছর বা আকস্মিক ঘটনা ছাড়া বেশির ভাগ সময় জিনদের সঙ্গে যোগাযোগ সাধারণত ধর্মদ্রোহী ও নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড সম্পাদনের মাধ্যমে করা হয়। এভাবে জিনকে উপস্থিত করা বা ডাকায় জিনেরা তাদের সঙ্গীদের পাপকাজে লিপ্ত হতে ও স্রষ্টায় অবিশ্বাস করতে সাহায্য করতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে শরিক করার মতো জঘন্য পাপকর্মে লিপ্ত করতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে আকৃষ্ট করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য। রাসুল (সা.) কর্তৃক ইসলাম প্রচারের আগে জিনেরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহ করতে সক্ষম ছিল। পরবর্তী সময়ে তা আর পারেনি। এ কারণে তারা তাদের সংবাদের সঙ্গে অনেক মিথ্যা মিশ্রিত করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘জিনেরা সংবাদ পাঠাতেই থাকবে-যতক্ষণ না এটা জাদুকর বা গণক পর্যন্ত পৌঁছে। মাঝেমধ্যে সংবাদ পাঠানোর আগেই একটি উল্কাপিণ্ড আঘাত করবে। আর উল্কাপিণ্ড দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই যদি সংবাদটি পাঠাতে সক্ষম হয়, তাহলে এর সঙ্গে এক শ মিথ্যা যোগ করে পাঠাবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২)
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.)-কে গণকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এরা কিছুই না।’ তারপর গণকদের কথা মাঝেমধ্যে সত্য হওয়ার ব্যাপারে আয়েশা (রা.) উল্লেখ করলেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘এটা সত্য সংবাদের একটি অংশবিশেষ, যা জিনেরা চুরি করে এবং এ তথ্যের সঙ্গে এক শ মিথ্যা যুক্ত করে তার বন্ধুর কাছে প্রকাশ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭; মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩৫)
মণি, মুক্তা, হিরা, চুন্নি, পান্না, আকিক প্রভৃতি পাথর ও রত্ন মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না। গণকের যেকোনো ধরনের দর্শনের ব্যাপারে রাসুল (সা.) সুস্পষ্টভাবে নীতি নির্ধারণ করেছেন। হাফসা (রা.) থেকে সাফিয়া বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ কোনো গণক, গায়েবি বিষয়ের সংবাদদাতা বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গমন করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে ৪০ দিবস পর্যন্ত তার সালাত কবুল করা হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৪০)
ভবিষ্যতে কী ঘটবে সে সম্বন্ধে গণক ওয়াকিফহাল-এ বিশ্বাসে গণকের কাছে গমন করা কুফরি কাজ। আবু হুরায়রা এবং আল-হাসান উভয়ে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি কেউ কোনো গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গমন করে তার কথা বিশ্বাস করে, তাহলে সে মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ দ্বিনের প্রতি কুফরি করল।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৯৫)
কেউ কোনো জ্যোতিষী, গণক, রাশিবিদ, পীর, ফকির, সাধু-দরবেশ প্রমুখ গোপন জ্ঞানের দাবিদারকে গোপন জ্ঞানের অধিকারী বলে বিশ্বাস করলে শিরক আকবার (বড় শিরক) সংঘটিত হবে। গণকদের লেখা বই, পত্র-পত্রিকা বা গবেষণাপত্র পড়া এবং তাদের অনুষ্ঠান রেডিওতে শ্রবণ করা বা টিভিতে দেখা ইত্যাদির মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান থাকায় এসব কর্মকাণ্ড কুফরির অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা পরিষ্কারভাবে ইরশাদ করেছেন, ‘তিনি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কেউ অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না, এমনকি রাসুলও না। সব গায়বের চাবিকাঠি তাঁর (আল্লাহর) কাছে, তিনি ছাড়া আর কেউ তা জানে না...।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৫৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না আল্লাহ ছাড়া...।’ (সুরা নামল, আয়াত : ৬৫)
অতএব ভবিষ্যদ্বক্তা, গণক এবং অনুরূপ ব্যক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত নানা পন্থা ও পদ্ধতি মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ।