স্থানীয়
সরকারসহ দেশের সব নির্বাচনই উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আবার
এটাও ঠিক যে নির্বাচনের আগে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অস্থিতিশীলতা,
দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হানাহানি বেড়ে যায়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটে।
অস্ত্রের ঝনঝনানি বেড়ে যায়। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে,
পটুয়াখালী সদর উপজেলার বড় বিঘাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ
মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ব্যক্তিগত মোটরসাইকেলচালক তথা কর্মীকে
কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নির্বাচনকে কেন্দ্র
করে গুলিবিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায়
মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে গুলি করার পাশাপাশি
কুপিয়েছে। এ ছাড়া পটুয়াখালীর বাউফল, শরীয়তপুর, নওগাঁর রানীনগর, মাদারীপুরের
ডাসার ও কালকিনি এবং বগুড়ার ধুনটে নির্বাচনী সহিংসতায় অন্তত ৮০ জন আহত
হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে নরসিংদী সদরের দুর্গম
চর আলোকবালীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক নারীসহ তিনজন নিহত
হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ইউপি সদস্য পদপ্রার্থীসহ আহত
হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। কক্সবাজারে প্রার্থীসহ দুই ভাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর
এসেছে সংবাদমাধ্যমে। নোয়াখালীতে প্রার্থীর সমন্বয়কের বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা
হয়েছে।নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে অতীতে যেসব স্থানীয় সরকার
নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতেই সহিংসতার নজির রয়েছে। ইউপি নির্বাচন ঘিরে
ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। জানিয়েছিলেন, সহিংসতা রোধে
ব্যাপক পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের আগেই
তালিকা করে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান
পরিচালনা না করলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন করে সহিংসতা দেখা দিতে পারে,
এমন আশঙ্কা অনেক আগেই করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দলীয়
প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণেই সংঘাত বাড়ছে। রাজনৈতিক দাপটে আচরণবিধি আর
ধোপে টিকছে না। অথচ দেশের মানুষ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও
শক্তিশালী ভূমিকা প্রত্যাশা করে।
নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থার সেই
জায়গাটি কতটা ধরে রাখতে পেরেছে, এটা এখন একটা বড় প্রশ্ন। নির্বাচনে
সহিংসতার ঘটনা কেন ঘটছে? মাঠ পর্যায়ে কি কমিশনের নিয়ন্ত্রণ নেই? একের পর এক
ঘটে যাওয়া সহিংসতার ঘটনায় এমন প্রশ্ন ওঠা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। আবার এটাও
ঠিক যে কোথাও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখা দিলে বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলে
নির্বাচন কমিশনের অবহেলাকেই দায়ী করা হবে। যদিও নির্বাচন কমিশন বলছে, মাঠে
তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। মাঠ পর্যায়ে প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের মধ্যে
সহনশীলতা নেই। আর সে কারণেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বা
প্রতিযোগিতামূলক না হয়ে প্রতিহিংসামূলক হচ্ছে।
দেশের মানুষ যেকোনো
পর্যায়ের নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপরই আস্থাশীল থাকতে চায়।
আর নির্বাচন অনুষ্ঠানে দলনিরপেক্ষভাবে নির্বাচন কমিশনের শক্ত ভূমিকাও থাকা
প্রয়োজন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থার সেই জায়গাটি ধরে রাখতে এখন
থেকেই সহিংসতা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।