সপ্তম
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আজ বুধবার মুখোমুখি হচ্ছে
ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠার লক্ষ্য নিয়ে সেমিতে
খেলতে নামবে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের ফাইনালে উঠার অভিজ্ঞতা থাকলেও
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট কখনো হাতে নিতে পারেনি
নিউজিল্যান্ড। তাই প্রথমবারের মতো ফাইনালের মঞ্চে উঠতে মরিয়া নিউজিল্যান্ড।
আবুধাবির
জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় শুরু হবে
ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম সেমিফাইনাল। ২০০৭ ও ২০০৯ আসরের
দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। তবে ২০১০ সালে প্রথমবারের
মতো ফাইনালে উঠে ইংলিশরা। সেখানে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের
মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় ইংল্যান্ড।
এরপর ২০১২,
২০১৪ সালে দ্বিতীয় রাউন্ডে থামলেও ২০১৬ সালে আবারো ফাইনাল খেলে ইংল্যান্ড।
কিন্তু শেষ ওভারের এক ঝড়ে শিরোপা বঞ্চিত হয় ইংলিশরা। ২০তম ওভারের প্রথম চার
বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কালোর্স ব্র্যার্থওয়েটের চার ছক্কায় ফাইনালে ৪ উইকেটে
পরাজিত হয় ইংল্যান্ড।
এবারের আসরে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে
আবারো সেমিফাইনালে ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সুপার
টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই জয় তুলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে পা
রাখে ইংলিশরা। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলংকা-বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায়
তারা। গ্রুপ পর্বে তাদের একমাত্র হার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।
অন্যদিকে
সুপার টুয়েলভে ইংল্যান্ডের রানের চাকা ঘুড়েছে ওপেনার জশ বাটলারের ব্যাটে। ৫
ইনিংসে একটি হাফ-সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরিতে এখন পর্যন্ত এবারের আসরে দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ ২৪০ রান করেন তিনি। সর্বোচ্চ ২৬৪ রান পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর
আজমের। বাটলারের ব্যাটিং গড়-১২০, স্ট্রাইক রেট-১৫৫.৮৪। এবারের আসরের
একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান বাটলার। শ্রীলংকার বিপক্ষে ৬৭ বলে অপরাজিত ১০১ রান
করেছিলেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বাটলার।
ইংল্যান্ডের
পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ওপেনার জেসন রয়। কিন্তু দুভার্গ্য
নক-আউট পবে দেখা যাবে না রয়কে। বাঁ-পায়ের মাংসপেশীর (কাফ মাসল ইনজুরি)
ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপের বাকি পর্ব থেকে ছিটকে পড়েছেন রয়। একটি
হাফ-সেঞ্চুরিতে ৫ ইনিংসে ১২৩ রান করেছেন রয়।
বাটলার ও রয় ছাড়া,
ইংল্যান্ডের পক্ষে আর কোনো ব্যাটারই তিন অংকে পা রাখতে পারেননি। তাই
সেমিফাইনালে ব্যাট হাতে অধিনায়ক ইয়ন মরগান, ডেভিড মালান, জনি বেয়ারস্টো ও
মঈন আলির জ্বলে উঠা দেখতে চায় ইংল্যান্ড।
বল হাতে ইংল্যান্ডকে বেশিরভাগ
সাফল্যই এনে দিয়েছেন দুই স্পিনার আদিল রশিদ ও মঈন আলি। বল হাতে ইনিংস শুরু
করে বেশিরভাগ ম্যাচেই সাফল্য পেয়েছেন মঈন। আর প্রতিপক্ষের ইনিংসে মাঝের
ওভারগুলোতে দারুণ বল করেছেন রশিদ। ওভার প্রতি ৫.৫০ ইকোনমিতে ৪ ইনিংসে ৭
উইকেট নিয়েছেন মঈন। ওভার প্রতি ৫.৮৩ ইকোনমিতে ৫ ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়েছেন
রশিদের। দুই স্পিনারের সাথে দুই পেসার ক্রিস জর্ডান ও ক্রিস ওকসের দিকে
তাকিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত জর্ডান ৬ ও ওকস ৫ উইকেট শিকার করেছেন। ৪
ইনিংসে ৭ উইকেট নেয়া আরেক পেসার টাইমাল মিলসকে ইনজুরির কারণে সুপার টুয়েলভ
পর্বেই হারিয়েছে ইংল্যান্ড।
ইনজুরিতে রয় ও মিলসকে হারানো ইংল্যান্ডের
জন্য বড় ধাক্কা। তবে দলে যারা আছেন তারা তাদের পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে
পারলে, তৃতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলা অসম্ভব কিছু নয় বলে জানান ইংল্যান্ডের
ব্যাটার মালান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা যেভাবে খেলছি, এভাবে খেলতে
পারলে, সেমিফাইনালেও জয় অসম্ভব কিছু না। নিউজিল্যান্ড খুবই ভালো দল। তাদের
বিপক্ষে পরিকল্পনা ছাড়া জয় পাওয়া কঠিন হবে। আমরা সেমির জন্য নিউজিল্যান্ডের
বিপক্ষে সকল পরিকল্পনা তৈরি করেছি। মাঠে সেগুলোতে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
২০০৭
সালের প্রথম আসরেই সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু শেষ চারে
পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটে ম্যাচ হারে তারা। তাই ফাইনাল খেলার আশা ভঙ্গ হয়
কিউইদের।
এরপর পরের চার বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়
নিউজিল্যান্ড। ২০১৬ সালে আবারো সেমির মঞ্চে উঠেও ইংল্যান্ডের কাছে ৭ উইকেটে
হেরে আবারো ফাইনাল খেলার আশা মাটিতে মিলে যায় কিউইদের। ২০১৯ ওয়ানডে
বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল নিউজিল্যান্ড। সেখানেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে
শিরোপা বঞ্চিত হয় কিউইরা।
তাই ২০১৬ ও ২০১৯ সালের দুই বিশ্বকাপের দু’টি
হার এখনো পীড়া দেয় নিউজিল্যান্ডকে। এবার সেই দুই হারের প্রতিশোধ নেয়ার
সুযোগ নিউজিল্যান্ডের সামনে। তবে প্রতিশোধের চাইতে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
প্রথমবারের মতো ফাইনালের দিকে আপাতত চোখ নিউজিল্যান্ডের।
দলের ওপেনার
মার্টিন গাপটিল বলেন, ‘আমরা ফাইনাল খেলতে চাই। তাই সেমিফাইনাল নিয়েই বেশি
ভাবছি। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিট চাই আমাদের। তবে
সেই স্বপ্ন সহজে পূরণ হবে না। ইংল্যান্ড খুবই শক্তিশালী দল। তাদের আটকাতে
হলে, সেরা ক্রিকেটই খেলতে হবে।’
এবারের আসরে সুপার টুয়েলভে সেরা
ক্রিকেটই খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ৫ ম্যাচে ৪ জয় ও ১ হারে গ্রুপ রানার্স-আপ
হয়ে সেমিতে উঠে কিউইরা। ভারত-আফগানিস্তান-নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডকে
হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। তবে গ্রুপের সেরা দল পাকিস্তানের কাছে হেরেছিলো
কিউইরা।
সুপার টুয়েলভে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারদের চাইতে বেশি আলো
ছড়িয়েছে বোলাররা। ৫ ইনিংসে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান গাপটিলের। ১টি
হাফ-সেঞ্চুরিতে ১৭৬ রান করেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অল্পের জন্য
সেঞ্চুরি মিস করেন গাপটিল। ৯৩ রানে আউট হন তিনি। তার ব্যাটিং গড়- ৩৫.২০ ও
স্ট্রাইক রেট-১৩১.৩৪।
গাপটিলের পর নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বলার মতো রান
করেছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। পাঁচ ইনিংসে উইলিয়ামসন ১২৬ ও
মিচেল ১২৫ রান করেন। তবে সেমির মঞ্চে জেমস নিশাম-গ্লেন ফিলিপস-ডেভন কনওয়ে ও
টিম সেইফার্টকে জ্বলে উঠতে হবে।
বল হাতে দারুন ফর্মে রয়েছেন পেসার
ট্রেন্ট বোল্ট। ৫ ইনিংসে ১১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার এডাম
জাম্পা ও বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানের সমান উইকেট তার। ৮ ম্যাচে ১৬ উইকেট
নিয়ে সবার উপরে শ্রীলংকার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা।
পেস অ্যাটাকে বোল্টের
বোলিং পার্টনার টিম সাউদিও দলের প্রয়োজনে জ্বলে উঠেছেন। ৫ ইনিংসে ৭ উইকেট
নিয়েছেন তিনি। সেই সাথে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০ উইকেটও পূর্ণ করেন সাউদি।
নিউজিল্যান্ডের স্পিন বিভাগ সামলাচ্ছেন ইশ সোধি। ৫ ইনিংসে ৮ উইকেট শিকার
তার।
এই তিন বোলারদের দারুণভাবে সাপোর্ট দিচ্ছেন জেমস নিশাম-মিচেল
স্যান্টনার ও এডাম মিলনে। তিনজনই ২টি করে উইকেট নিয়েছেন। শেষ চারে জয় পেতে
হলে আরো ভালো করতে হবে তাদের। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে
এগিয়ে ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত ২১ লড়াইয়ে ১২ জয় ইংল্যান্ডের। ৭ জয়
নিউজিল্যান্ডের। ১টি করে ম্যাচ টাই ও পরিত্যক্ত হয়। বিশ্বকাপের মঞ্চে
পাঁচবার দেখা হয় ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের। এতে তিনবার জিতে ইংলিশরা। আর
দু’বার জিতে কিউইরা।