তেল পাচার রোধে বিজিবি-পুলিশকে জ্বালানি বিভাগের চিঠি
Published : Wednesday, 10 November, 2021 at 12:00 AM
জ্বালানি তেল পাচার বন্ধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। সম্প্রতি এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অনেক দিন থেকেই সরকার দাবি করছিল ভারতে তেল পাচার হয়। তবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছুই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তবে সরকারের দেওয়া এ চিঠির ভিত্তিতে অনেকে মনে করছেন, তেল পাচারের সত্যতা রয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ভারতে জ্বালানি তেলের দাম বেশি বলেও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে। ডিজেল ও কেরোসিনে ১৫ টাকা লিটারে বৃদ্ধি জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে। তেলের দামের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক মূল্যস্ফিতি বেড়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, ভারত ও বাংলাদেশের তেলের দাম উল্লেখ করে প্রতিবেশী দেশে তেল পাচার হওয়ার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ওই চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান।
গত ৭ নভেম্বর জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ সচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বৈঠকের কার্যপত্র থেকে এ বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, পশ্চিমবঙ্গে ১০১ রুপিতে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১২৪ টাকা। অর্থাৎ এখনও ৪৪ টাকা বেশি দামে ভারতে ডিজেল বিক্রি হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশটি ডিজেল থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করাতেই এত বেশি দামে সেখানে জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, দাম বৃদ্ধির আগে ভারত এবং আমাদের ডিজেলের বিক্রি দরের মধ্যে ৫৯ টাকা পার্থক্য ছিল। কোনোভাবে এক লিটার ডিজেল ভারতে পাচার করতে পারলে ৫০ টাকার মতো চোরাকারবারিদের লাভ হতো। এ কথা অনেকটাই সত্য যে, ভারতের সঙ্গে আমাদের বিস্তৃর্ণ এলাকার সীমান্ত রয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে নানা রকম পণ্য অবৈধ পথে আসা-যাওয়া করে। ফলে তেলের ক্ষেত্রেও আমরা সতর্ক নজর রেখেছি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, আমরা সব সময় নজর রাখছি সীমান্ত জেলাগুলোতে বিপণনকারীরা হুট করে বাড়তি তেল নিচ্ছে কি না। সুনির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ না পাওয়া গেলেও দেশের একেবারে সীমান্ত জেলাগুলো থেকে তেল না নিয়ে অন্য জেলা থেকেও তেল নিয়ে তা পাচার হতে পারে।
দেশে প্রতি বছর জ্বালানির (ডিজেলে) চাহিদা রয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টন। এই চাহিদা ক্রমান্বয়ে কমছে। ডিজেল ছাড়াও এলপিজি এবং ফার্নেস অয়েল ব্যবহারের কারণে এই চাহিদা কমছে। তবে বছর শেষ হওয়ার আগে গড় চাহিদা কমার কোনও চিত্র বের করা সম্ভব নয়। সঙ্গত কারণে ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করা তেল পাচার হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ লোকসান হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগেও মিয়ানমারে সমুদ্রপথে তেল পাচার করতে গিয়ে চোরাকারবারিরা কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়েছে।