ড. শামসুল আলম ||
গত ৩ নভেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মধ্যে শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের ভোক্তাপর্যায়ে লিটারপ্রতি খুচরা মূল্য ২৩ শতাংশ (১৫ টাকা) বৃদ্ধি করে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে, যা ওই দিন দিবাগত রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে বাস-ট্রাক মালিকদের সংগঠন জনসাধারণের দুর্ভোগ-ভোগান্তির কথা চিন্তা না করে বিনা নোটিশে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ায় ফলাও করে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে এর প্রভাব কী হতে পারে এবং কোন কোন খাতে এর প্রভাব পড়তে পারে সে সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা আলোচনা করছেন। অনেকে বিষয়টিকে নজিরবিহীন বলেছেন এবং সরকারের যুক্তিকে স্থূল ও সূক্ষ্ম বলেছেন। তাঁরা অভিযোগ করেছেন সরকার শুধু কতিপয় মালিকের স্বার্থ দেখে, জনগণের স্বার্থ সরকার দেখে না। কেউ কেউ আবার বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লেও এর প্রভাব পড়তে তিন মাস সময় লেগে যায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমালেও সরকার সহজে দাম কমায় না। সবচেয়ে যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সেটি হলো মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব। এর ফলে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম এবং পরিবহন ব্যয় ও কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁরা বলছেন, এর ফলে বিদ্যুতের দামও বাড়তে পারে। কারণ অনেক বিদ্যুেকন্দ্র ডিজেলচালিত। অনেকে বলছেন, এর ফলে সরকার বেকায়দায় পড়তে পারে, যার প্রভাব আগামী নির্বাচনে পড়তে পারে। তাদের যুক্তি হলো সরকার জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে ক্রমাগত ভর্তুকি দিতে পারত। এর মূলে তাদের যুক্তি হলো সাত বছরে সরকার জ্বালানি থেকে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। অনেকে আবার যুক্তি দিয়েছেন, সরকার একবারে ১৫ টাকা না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করতে পারত। একপক্ষ ভারতের উদাহরণ টেনে বলেছেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলেও ভারতে দাম কমানো হয়েছে। প্রকৃত সত্য হলো ভারত, নেপাল ও ভুটানে তেলের দাম আমাদের চেয়ে বেশি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অন্যান্য সম্মানিত বিশেষজ্ঞরা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরা পুরো বিষয়টিকে একতরফা ও একপেশেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন প্রতীয়মান হয় কিংবা তাঁরা পুরো বিষয়টি অনুধাবন করেও কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সেটি অগ্রাহ্য করেছেন। আবার এমনও হতে পারে সরকারের জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ বিষয়টি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি। সরকারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা কেন দরকার ছিল সে বিষয়ে প্রথমে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
প্রথমত, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আইএমএফের সর্বশেষ ইকোনমিক আউটলুক অক্টোবর ২০২১ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতির আউটপুট ২০২০ সালের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ৩.১ শতাংশ থেকে ২০২১ বেড়ে ৫.৯ শতাংশ হবে। উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ এবং উদীয়মান অর্থনীতি ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে তা ৬.৪ শতাংশ হবে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রবৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৯.৫ শতাংশ হবে। কভিড-১৯-এর কারণে বিগত দেড় বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার পর অবশেষে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের হিসাবে ২০২২-এর মধ্যেই উন্নত দেশগুলো কভিড-১৯-এর পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে। গত দুই বছর বৈশ্বিক মন্দায় নিপতিত হওয়ার কারণে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও বিতরণে নতুন তেমন বিনিয়োগ হয়নি। একদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে এবং দ্রুত চাহিদা বাড়ছে, আবার অন্যদিকে অনেক দেশে সরবরাহ সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারির প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে ম্যানুফ্যাকচারিং উপকরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি একটা বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি তেমন বাড়েনি। ২০২১ সালে বিগত বছরের তুলনায় তেলের মূল্য ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের হিসাবে ২০১৯ সালে ব্যারেলপ্রতি ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেলের মূল্য ছিল ৫৬.৯৯ ডলার। ২০২০ সালে কভিড-১৯-এর ফলে চাহিদা অবনমনের কারণে তা কমে দাঁড়ায় ৩৯.১৭ ডলার, আবার ২০২১ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৯.০২ ডলার হয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি পেয়ে এখন তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যারেলপ্রতি ৮১.২৬ ডলার উঠেছে (১৫ নভেম্বর ২০২১)। বিশ্ববাজারে শুধু যে তেলের দাম বাড়ছে তা নয়, তেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অন্যান্য জ্বালানি যেমন—কয়লা ও গ্যাসের দামও।
দ্বিতীয়ত, সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে একবার দাম বাড়ানো হয়েছিল, যা ছিল মাত্র ১১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এপ্রিল মাসে ৪ শতাংশ দাম কমানো হয়। অর্থাৎ বিগত ৯ বছরে মাত্র একবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো, যা জনগণের প্রতি সরকারের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। এখন দীর্ঘদিন পর বাধ্য হয়ে বৃদ্ধির পর হায় হায় রব উঠেছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিছু বুদ্ধিজীবী জনগণের ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে চান। আগে অর্থনীতিবিদরা ধারাবাহিকভাবে দিনের পর দিন জ্বালানি তেলের ওপর সরকারের ভর্তুকির বিরোধিতা করেছিলেন। আবার অনেকে ভারতে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদাহরণ দেন। ভারতে এই মাসে পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ রুপি ও ১০ রুপি কমেছে সত্য, কিন্তু গত জুলাইয়ে ভারতেও জ্বালানি তেলের দাম বাংলাদেশের দিগুণ ছিল।
দাম কমানোর পরও বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে জ্বালানি তেলের দাম এখনো অনেক বেশি। তাই ভারতের সঙ্গে তুলনা করাটা সঠিক নয়।
তৃতীয়ত, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি এক দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। ইউএস ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের হিসাবে অক্টোবর মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক (ঈড়হংঁসবৎ চৎরপব ওহফবী) বিগত ১২ মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ৬.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ১৯৯০ সালের নভেম্বরের পর ১২ মাসে এটিই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেলে। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকা হেডলাইন করেছে, ৩১ বছরের মধ্যে এই মূল্যস্ফীতি সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি। ওইসিডিভুক্ত (ঙৎমধহরংধঃরড়হ ভড়ৎ ঊপড়হড়সরপ ঈড়-ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ) বা পরিপক্ব উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে অক্টোবরে এই হার ৪.৬ শতাংশ, জার্মানিতে এই হার ৪.৫ শতাংশ, কানাডায় ৪.৪ শতাংশ। উন্নত দেশগুলোর জন্য এগুলো অতি মূল্যস্ফীতি। অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) খাদ্য মূল্যসূচক জুলাই ২০১১-এর পর গত অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে এই বছরে তা বেড়েছে ৩১.৩ শতাংশ। দানাদার শস্য ও মাংসের ক্ষেত্রে এই সূচক গত ১২ মাসে যথাক্রমে ২২.৪ শতাংশ ও ২২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুগ্ধজাতীয় পণ্যের সূচকের ক্ষেত্রে এক বছরে এই বৃদ্ধির হার ১৫.৫ শতাংশ। একইভাবে ভেষজ তেলের জন্য এই সূচক মাসওয়ারি সর্বকালের বেশি ১৮৪.৮ হয়েছে। এফএও চিনি মূল্যসূচক গত বছরের একই মাসের তুলনায় এই বছর অক্টোবরে ৪০ শতাংশ বেশি রয়েছে। এসবের বিপরীতে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির প্রবণতা এখনো অনেক কম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ও চলমান মূল্যস্ফীতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এটা স্পষ্ট যে এখন যে বাংলাদেশে কিছুটা মূল্যস্ফীতির চাপ সেটা অধিক মূল্যের আমদানীকৃত পণ্যের কারণে। দেশজ কোনো উৎপাদন ঘাটতি বা আর্থিক অব্যবস্থার কারণে নয়। মূল্যস্ফীতি যদি ঘটে, তবে সেটা ঘটতে পারে আমদানীকৃত জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্য, ভোজ্য তেল ও চিনির মূল্যবৃদ্ধির ফলে।
চতুর্থত, সরকারের আর্থিক সংগতির (ঋরংপধষ ঝঢ়ধপব) বিষয়টিও বিশ্লেষকদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) হিসাবে, গত সাড়ে পাঁচ মাসে এক হাজার ১৪৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। প্রতিদিনের হিসাবে গড়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। এ ছাড়া বিপিসির আরো সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিভিন্ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিপিসি বলতে গেলে সব সময় লোকসানি সংস্থা। টানা ১৩ বছরের বেশি সময় লোকসান দিয়ে আসার পর ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে বিশ্ব জ্বালানি তেলের দাম কমতে থাকায় বিপিসি লাভের মুখ দেখতে শুরু করে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসির লোকসান ৩১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারের ভর্তুকি ২১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। অনেকেই আবার অভিযোগ করেছেন, বিপিসি গত কয়েক বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে তাহলে ভর্তুকি দিতে সমস্যা কোথায়। জেনে রাখা ভালো, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিসির মুনাফা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রকৃত মুনাফা মাত্র ২১ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারকে কর পরিশোধ ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় করা হয়েছে। কভিড দুর্যোগ সময়ের আর্থিক চাপে সোচ্চার সমালোচকরা বিবেচনায় নেয়নি। বিগত দেড় বছরে কঠোর লকডাউন ও অর্থনীতি কিছুটা সময় স্থবির থাকার দরুন সরকারকে সামাজিক নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, যার পরিমাণ ২২ হাজার ডলারের বেশি (১,৮৭,৬৭৯ কোটি টাকা), যা জিডিপির ৬.২৩ শতাংশ। বাজেটের অনুপাতে তা চলমান অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের ৭৯ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ব্যয়ের মধ্যে একটি খাতে ক্রমাগত ভর্তুকি দেওয়া কতটুকু যুক্তিসংগত তা যাঁরা যাচাই-বাছাই না করে ঢালাও সমালোচনা করছেন, যাঁরা উপরোল্লিখিত তথ্যের আলোকে সৃষ্ট বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করতে পারেন। সরকারের আর্থিক অবস্থান সুবিধাজনক থাকলে ভর্তুকি প্রদান করা সমস্যা ছিল না। আইএমএফের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে আপাতত আগামী বছর পর্যন্ত জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা কম।
আবার অনেকে কয়েকবারে দাম সমন্বয়ের যুক্তি দিচ্ছেন। একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার। ঘন ঘন জ্বালানি তেলের দাম পরিবর্তন করা হলে তা অর্থনীতিতে নেতিবাচক সংকেত দিতে পারে এবং এতে এক ধরনের অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। অর্থনীতির জন্য স্থিতিশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে বাজারে সুযোগসন্ধানীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়। সেটি নিশ্চয়ই কাম্য নয়। অধিক মূল্যস্ফীতি সব সময় পীড়াদায়ক। সেটা সরকার কখনোই চায় না। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে ৫.৫৯ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। সব শেষে বলতে চাই, সম্ভবত সরকারের অনিচ্ছা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। এখন যে বিষয়টি নজর দিতে হবে সেটি হছে বাজার ব্যবস্থাপনা। বিগত দুই বছর যাবৎ সরকার সম্প্রসারণমূলক অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে। এখন সরকার কিছুটা নিয়ন্ত্রণমূলক অর্থ সরবরাহ নীতির দিকে ঝুঁকবে হয়তো। তবে সরকার খোলাবাজারে বিক্রয়ের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য জনসাধারণের মাঝে সরবরাহ অব্যাহত রাখবে। সেই সঙ্গে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে সরকার বিনা মূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ অব্যাহত রাখবে। উৎপাদন কার্যক্রম ও সরবরাহ পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে বিশেষ মনোযোগ রাখতে হবে। পণ্য খালাসে বন্দরে যেন জট না লাগে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। রপ্তানি বাড়ানোর প্রচেষ্টা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।
লেখক : প্রতিমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়