সরকারি হাসপাতালে ওষুধ পান মাত্র ৩ শতাংশ রোগী
Published : Monday, 22 November, 2021 at 12:00 AM
সরকারি হাসপাতাল থেকে মাত্র তিন শতাংশ রোগী ওষুধ পেয়ে থাকেন, আর ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। বেশিরভাগ রোগীকেই বেসরকারি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয় এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। এতে করে রোগীর ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে বেশিরভাগ রোগীই আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হন।
রবিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীতে হোটেল ইন্টারকনটিনেন্টালে স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট আয়োজিত ‘নিজ পকেট থেকে গৃহস্থালী ব্যয় সংকোচনের কৌশল’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. নুরুল আমিন ‘রোগীর নিজ পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য উচ্চ ব্যয়ের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন। সেখানে বলা হয়, রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের প্রধান উৎস হলো ওষুধ। এই খাতে ব্যয় প্রায় ৬৪ ভাগ। হাসপাতালে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেওয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে ১২ ও ১১ ভাগ ব্যয় হয়। এ ছাড়া, রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাতে ব্যয় আট ভাগ। গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় এবং শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকায়, রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণে বাধ্য হন। এছাড়া, সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ ওষুধ প্রদান করা হয় না এবং রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না।
গবেষণায় দেখা যায়, মাত্র তিন শতাংশ রোগী সরকারি হাসপাতাল থেকে ?ওষুধ পান এবং ১৪.৯ শতাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে হয়ে থাকে। অধিকাংশ রোগীকে বেসরকারি ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনতে হয় এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেবা নিতে হয়। এতে রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয় বেড়ে যায় এবং প্রায়ই রোগী আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন। ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধ কেনার সুযোগ থাকায় এবং ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিপণনের ফলে, স্বীকৃত চিকিৎসকদের পাশাপাশি পল্লী ও হাতুড়ে ডাক্তাররাও ব্যবস্থাপত্রে অতিমাত্রায় ওষুধ লেখেন। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করায় রোগীর ব্যয় বেড়ে যায়। জরুরি ওষুধের তালিকা সংশোধন ও সম্প্রসারণ এবং ব্যবস্থাপত্রে প্রটোকল অনুসরণ করে কোম্পানির ওষুধের ‘ব্র্যান্ড নাম’ ব্যবহারের পরিবর্তে ‘জেনেরিক নাম’ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলে এই ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব।
বেসরকারি হাসপাতাল অ্যাক্রিডিটেশন পদ্ধতি এবং এর সেবা মান ও মূল্যের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় সেবা গ্রহণকারী জনগণ প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে বিষয়ে রোগীদের অসন্তুষ্টি ও কখনও কখনও আস্থার ঘাটতি— তাদেরকে দেশের পরিবর্তে বিদেশ থেকে সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করে। এভাবে চিকিৎসার ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক মানুষ ভিটে-জমি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্ট সেলের ফোকাল পারসন ডা. সুব্রত পাল বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বাজেট কম। একইসঙ্গে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে জনপ্রতি স্বাস্থ্য খাতে খরচ সবচেয়ে কম (৪৫ ডলার)। শুধুমাত্র সরকারি অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়ে এর সমাধান সম্ভব না। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খরচ করার দক্ষতা থাকতে হবে, যাতে করে বাজেট অব্যবহৃত থেকে না যায়।’
সুব্রত পাল আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের তথ্য মতে, দেশের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে। ফলে এ ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন দেশের ওওপি কমিয়ে আনবে বহুলাংশে।’
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. নুরুল আমিন ‘রোগী নিজ পকেট থেকে চিকিৎসার জন্য উচ্চ ব্যয়ের নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান’ শীর্ষক দ্বিতীয় গবেষণা প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, রোগীর নিজ পকেট থেকে ব্যয়ের প্রধান উৎস হলো ওষুধ। এই খাতে ব্যয় প্রায় ৬৪ ভাগ। হাসপাতালে অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে সেবা নেওয়ার মাধ্যমে যথাক্রমে ১২ ও ১১ ভাগ ব্যয় হয়। এ ছাড়া, রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা খাতে ব্যয় ৮ ভাগ। গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত সরকারি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথাযথ কার্যকর না হওয়ায় এবং শহর এলাকায় পর্যাপ্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না থাকায়, রোগী বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণে বাধ্য হন। এছাড়া, সরকারি হাসপাতাল থেকে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সম্পূর্ণ ওষুধ প্রদান করা হয় না এবং রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না।