ইউনিয়ন পরিষদ
(ইউপি) নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ হয়েছে গত
রবিবার। শুধু রবিবারই সহিংসতায় একজন বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ১০ জন নিহত
হয়েছেন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। সারা দেশে অন্তত ১৩০টি কেন্দ্রে ব্যাপক
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসব স্থানে গুলিবর্ষণ, হাতবোমা ও ককটেল বিস্ফোরণ, জাল
ভোট, কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে
অভিযোগ রয়েছে। ২১টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছে। তার পরও নির্বাচন
কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এই নির্বাচনকে সহিংসতাহীন
নির্বাচনের মডেল বলে দাবি করেছেন। কিন্তু অনেক বিশ্লেষকের মতে, এবারের ইউপি
নির্বাচনের তিনটি ধাপই সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে অনেক বেশি সংঘাতপূর্ণ
হয়েছে।
ইউপি নির্বাচনে বরাবরই উত্তেজনা-সহিংসতা কিছুটা বেশি থাকে।
কিন্তু এ বছর সহিংসতার মাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তদুপরি এবারের নির্বাচনী
সহিংসতায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এত বেশি হয়েছে যে তা সবার কাছেই বড়
উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। জননিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন এমন অনেকের মতে,
সার্বিকভাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর
তারই প্রতিফলন ঘটেছে এবারের ইউপি নির্বাচনে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়,
তৃতীয় ধাপে এক হাজার ইউপি এবং ৯টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও ভোট হয়েছে
৯৮৬টি ইউপিতে। বাকি ১৪টি ইউপিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সব
চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সংখ্যা এত বেশি যে এটিও
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অনেকের কাছে প্রশ্ন হয়ে আছে। এর আগে প্রথম ধাপে ৭২ জন
এবং দ্বিতীয় ধাপে ৮১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হয়েছিলেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোতে
প্রার্থিতা প্রত্যাহার কিংবা মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে বিরত থাকার সঙ্গে
হুমকি-ধমকি বা বল প্রয়োগের সম্পর্ক থাকতে পারে। তাই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
নির্বাচনের বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
নির্বাচন
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ইসি সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে না পারার কারণেই
এবারের নির্বাচনে এত বেশি সহিংসতা হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনাগুলো
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটি জেলায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে।
নির্বাচনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের
আগেই জেলাগুলোতে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হলে সহিংসতার ঘটনা অনেক কম ঘটত।
আগামী
জানুয়ারির মধ্যে ইউপি নির্বাচনের আরো দুটি ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার
কথা রয়েছে। আমরা মনে করি, সেসব ধাপে যাতে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা না ঘটে সে
জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করাসহ সহিংসতা প্রতিরোধে
পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া প্রতিটি
সহিংসতার ঘটনা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
আমরা কোনোভাবেই নির্বাচনের নামে এমন রক্তক্ষয় দেখতে চাই না।