ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
কুমিল্লার উন্নয়নে সর্বোচ্চ ১৫৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প
Published : Wednesday, 8 December, 2021 at 12:00 AM, Update: 08.12.2021 1:06:25 AM
কুমিল্লার উন্নয়নে সর্বোচ্চ ১৫৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প স্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লার ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এতো বড় বাজেটের প্রকল্প পাশের পর স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এক প্রতিক্রিয়া বলেন, কুমিল্লা শহরকে নিয়ে আমার বড় প্রকল্প করার ইচ্ছা ছিল। প্রিয় শহরটাকে সুন্দর দেখতে চেয়েছি। এতো বড় মাপের অর্থ ব্যয়ের প্রকল্প পাশ হওয়া শান্তি পাচ্ছি। মন্ত্রী হওয়ার পর কুমিল্লার জন্য কিছু করে যেতে পেরেছি।
এলজিইডি মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গত বছর কুমিল্লায় সফরে আসলে কুমিল্লার এলজিইডি ভবনে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তার কাছে ১৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানালে তিনি বলেন, আপনারা আমার কাছে মাত্র ১৫০ কোটি টাকা চাচ্ছেন কেন আমার প্রিয় শহরের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা চাচ্ছেন না। এরপরই কুমিল্লা সিটি করপোরেশনকে তিনি প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। নানা যাচাই বাছাইয়ের পর ১৫৩৮ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হলো।  
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে নতুন রাস্তা, সিটি করপোরেশনের নতুন ভবন, আঞ্চলিক অফিস, গণশৌচাগার, কয়েকটি দিঘির সৌন্দর্যবর্ধন, গোমতী নদীর পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ রয়েছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে কুমিল্লার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা নগরবাসী।
কুসিক সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নগরীরর জলাবদ্ধতা নিরসন, যানজট দূরীকরণ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও সৌন্দয্যবর্ধন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩ তলা বিশিষ্ট ও আধুনিক সেবা সম্বলিত নগর ভবন, ৬ তলা বিশিষ্ট দু’টি সেবক কলোনি ও কুসিকের আঞ্চলিক অফিসগুলোর উন্নয়ন করা হবে। পুরাতন গোমতী নদী এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন পুকুরের উন্নয়ন করে হাতিরঝিলের মত রূপদান করা হবে এবং দৃষ্টিনন্দন ব্রীজ, নদী শাসন, ড্রেন নির্মাণ, রাস্তাঘাটের আধুনিকায়ন ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে এক ধাপ এগিয়ে যাবে কুমিল্লা নগরী। এছাড়াও নগরীর ১৪৬টি কবরস্থানের উন্নয়ন, ৩০৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, ২০৩ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১৩ কিলোমিটার ফুটপাথ নির্মাণ, ৭টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট, ১টি ট্রাক টার্মিনাল ও ১টি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলামের দিকনির্দেশনা মোতাবেক কুসিকের মেয়র, প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাগণ নগরীর উন্নয়নের জন্য গত ১ বছর ধরে বৃহৎ এ প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করেছে। মঙ্গলবার প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক কুমিল্লা নগরী গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
এ দিকে এটিসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১০টি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। সভায় ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধিত মডেল মসজিদসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৪৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। মডেল মসজিদ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ৭১৩ কোটি টাকা।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি সংশোধিত ও পাঁচটি নতুন।
প্রতি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের ব্যয় ৭১৩ কোটি টাকা বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে সব কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি মাত্র ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। মূল অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এরপরে অনুমোদিত প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এবার প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্প ব্যয় ৭১৩ কোটি টাকা বাড়ছে।
নানা কারণে প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়। কতিপয় খাত যেমন অফিসারদের বেতন, বিদ্যুৎ, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট, নিবন্ধন ফি, পেট্রল, লুব্রিক্যান্ট, গ্যাস ও জ্বালানি, অন্যান্য মনোহারি, মোটরযান মেরামত ও সংরক্ষণ, অফিস সরঞ্জাম, ভবন নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে।
এছাড়া আপ্যায়ন ব্যয়, চুক্তিভিত্তিক যানবাহন ব্যবহার, ব্যাংক চার্জ, সাকুল্য বেতন, কুরিয়ার, যাতায়াত ব্যয়, আউটসোর্সিং, শ্রমিক মজুরি, নিয়োগ পরীক্ষা, মুদ্রণ ও বাঁধাই, অন্যান্য মনোহারি (গণপূর্ত), ডিজাইন ও ড্রইং (গণপূর্ত), আসবাবপত্র মেরামত ও সংরক্ষণ, কম্পিউটার মেরামত ও সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অফিস সরঞ্জামাদি মেরামত ও সংরক্ষণ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামত ও সংরক্ষণ, অভ্যন্তরীণ শোভাবর্ধন কাজ অন্তর্ভুক্ত করায় মূলত ব্যয় ও সময় বাড়ছে।
এছাড়া ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা প্রকল্পে ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। একনেকে ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণ’ নতুন প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। ‘সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন’ প্রকল্পের ব্যয় হবে ৩২২ কোটি টাকা। ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। ‘বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল¬ী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৩ কোটি টাকা।
মোংলা থেকে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নতুন নৌরুট খনন করা হবে। নৌপথের মোট দূরত্ব ৪৬০ কিলোমিটার। নৌপথ খননে ব্যয় বাড়ছে আরও ৩৩৪ কোটি টাকা। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য এ রুটের গভীরতা বাড়ানো হবে। ৫ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতা) জাহাজ জেটিতে ভেড়ানোর জন্যই মূলত খনন করা হবে।
এছাড়া বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহী ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী ও ফরিদপুর) বার্ন অ্যান্ড প¬াস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ৪৫৬ কোটি টাকা। প্রকল্প ১০টি চূড়ান্তভাবে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।