Published : Wednesday, 22 December, 2021 at 12:00 AM, Update: 22.12.2021 1:38:13 AM

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম (৩য় ফ্লোর) দুপুর ১১:৩০ ঘটিকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা এবং পুরস্কার বিতরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. সুরজিৎ সর্ববিদ্যার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এ. কে. এম কুতুব উদ্দিন হেলাল। আলোচনা সভার প্রথমে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ বক্তব্য রাখেন। অত:পর বিশ^বিদ্যালয়ের সম্মানিত ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার ড. মো: মিলন হোসেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং দেশের স্বাধীনতাত্তোর অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিষয়ে অবতারণা করেন। ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত রেজিস্ট্রার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসির পরিচালক ড. এস. জে. আনোয়ার জাহিদ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের একটি বাস্তব ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজার থানার মুক্তিবাহিনীর কর্তৃক ৪ জুলাই, ১৯৭১ সালে একটি কমান্ডো অভিযান পরিচালনার একটি ঘটনা তুলে ধরেন যে অভিযানে একজন রাজাকার সর্দার ও কয়েকজন রাজাকার নিহত এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হওয়ার বিষয়ে উল্লেখ করেন। তিনি তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ৭/৮ তারিখে ২নং এবং ৩নং সেক্টরের আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ সদর থানা এলাকায় মিত্রবাহিনীর বিমান ও ট্যাংক আক্রমণ, মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর তুমুল আর্টিলারীর আক্রমণ ও তাদের সাথে পাক বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেন। অতঃপর আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত পরিচালক সৈয়দ শফিকুল হক বক্তব্য রাখেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা তার ব্যক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নাসিরনগর, সরাইল ও মাধবপুর থানার মুক্তিবাহিনী কর্তৃক তাদের পরিচালিত কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনার ঘটনার বর্ণনা করেন যে সব অপারেশনে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের হতাহত, ব্যাপক ক্ষতিসাধন, গোলাবারুদ দখল এবং কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হতাহতের ঘটনার বর্ণনা দেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব এ. কে. এম কুতুব উদ্দিন হেলাল তাঁর ভাষণে শুরুতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বিপুল সংখ্যক পাকবাহিনীর সেনা কেন্টনমেন্ট হতে ট্যাংক নিয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা পরিচালনার প্রত্যক্ষিত ঘটনাটি তুলে ধরেন। অতঃপর তিনি মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ও তাদের গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনার ঘটনার বর্ণনা করেন। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামোগত উন্নতির বিষয়ে অবতারণা করেন। এমনকি করনাকালীন সময়ে বাংলাদেশের জিডিপি পাশর্^বর্তী অনেক দেশ থেকেও অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা সম্ভব নয়। তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বিজয়ের গৌরব নিয়ে আমাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে কাজ করার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভার শেষে প্রধান অতিথি ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রোবটিক্স ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত "বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম" বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। উক্ত পুরস্কার বিতরণের পূর্বে অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধান অতিথির হাতে সম্মাননা স্মারক ও একটি উপহার তুলে দেন।
সবশেষে আলোচনা সভার সভাপতি ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. সুরজিৎ সর্ববিদ্যা বলেন, আমরা যখন ছাত্র ছিলাম তখন আমরা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাসও জানতে পারেনি। আলোচনা সভায় দু’জন প্রবীণ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মহোদয়ের ব্যক্তব্য থেকে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মুক্তিযুদ্ধের তৎসময়কার কিছু ঘটনা সম্পর্কে জানার সুযোগ পেলাম। তাদের প্রদত্ত বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারলাম মরণযজ্ঞের মধ্য দিয়ে মুক্তিকামী এদেশের মানুষ গড়ে তুলেছিল দেশের স্বাধীনতার এক প্রতিরোধ আন্দোলন। পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর শাসকদের বর্বরতা মধ্যযুগীয় নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছিল। কিন্তু শত অত্যাচার-নিপীড়ণও বাঙালি জাতিকে তাদের কাংক্ষিত স্বাধীনতাকে থামাতে পারেনি। আমাদের এ স্বাধীনতার পিছনে রয়েছে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মদান, নারীদের সম্রম হানি এবং অনেকের ত্যাগ। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো দেশের সার্বিক কল্যাণ ও অর্থনেতিক উন্নতি সাধন।
অনুষ্ঠানের শেষে জনাব শহিদুল ইসলাম শেখ, সহকারী রেজিষ্ট্রার প্রধান অতিথি ও উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।