রণবীর ঘোষ কিংকর: কুমিল্লার চান্দিনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭৬জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ৪৩প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। পঞ্চম ধাপে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পঞ্চম দিনে উপজেলা নির্বাচন অফিস ওই তালিকা চূড়ান্ত না করলেও ইউনিয়ন ভিত্তিক জরিপে ওই তথ্য উঠে এসেছে।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী গ্রহণকৃত মোট ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট যদি কোন প্রার্থী না পায় সে ক্ষেত্রে ওই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। ওই তথ্যে ভর করে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের পৃথক তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায় উপজেলার ১২ ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতীকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত এক প্রার্থীসহ ৪৩ প্রার্থীই নির্ধারিত এক অষ্টমাংশ ভোট পায়নি। তাদের মধ্যে সর্বনিম্ন ৫ ভোটও পেয়েছেন দুই প্রার্থী। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী দিয়ে তাদের সকল প্রার্থীই জামানত হারান। জামানত হারিয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টি ও জাকের পার্টি প্রার্থীও।
উপজেলার ১নং শুহিলপুর ইউনিয়নে ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১১ হাজার ৩৯৭টি। ওই ইউনিয়নে জামানত বাজেয়াপ্ত হয় ৪ জনের তারা হলেন। ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামাল সরকার ৯৬৬ ভোট, টেলিফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুনায়েদ ভূইয়া ৩৩৮ ভোট। অটোরিক্সা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ৬৩ ভোট ও মোটর সাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ ২২ ভোট।
২নং বাতাঘাসী ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ১০জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে মোট ১১ হাজার ১৩২ ভোট।ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীসহ সর্বোচ্চ ৬জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। তারা হলেন- আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম পেয়েছেন ১ হাজার ১৩৮ ভোট, মটর সাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হক ৭৫, রজনীগন্ধ প্রতীকে খাইরুল ইসলাম ৫৪ ভোট, টেলিফোন প্রতীকে বেলায়েত হোসেন ৯৮ ভোট, অটোরিক্সা প্রতীকে ফারুক হোসেন ৩৯ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদে প্রার্থী সালাহ উদ্দিন ৩২৯ ভোট।
৩নং মাধাইয়া ইউনিয়নে ৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১৩ হাজার ৮২৩ ভোট। ওই জামানত বাজেয়াপ্ত হয় ৩ প্রার্থীর। তারা হলেন- ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমির হোসেন ৬৯, টেলিফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মরতুজ আলী ৭৮, চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ২৫৫ ভোট।
৫নং কেরণখাল ইউনিয়নে ৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে ৬ হাজার ৪৪ ভোট। ওই ইউনিয়নে জামানত বাজায়েপ্ত হয় মাত্র ১ জনের। তিনি হলেন- চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র একমাত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান ২২ ভোট।
৬নং বাড়েরা ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪ প্রার্থী। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১০ হাজার ২৬৭ ভোট। ওই ইউনিয়নে জামানত হারান হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমান ৪৬২ ভোট।
৭নং এতবারপুর ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৫ প্রার্থী। উপজেলার সবচেয়ে ছোট ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ভোট পড়ে ৪ হাজার ৩৭০ ভোট। ওই ইউনিয়নে জামানত হারান ৩ প্রার্থী। তারা হলেন- মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সহিদ সিকদার ৫ ভোট, ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাশেম ২০০ ভোট ও চশমা প্রতীকে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী কাউসার আহমেদ ৫ ভোট।
৮নং বরকইট ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ১১ হাজার ৫৮৭ ভোট। ওই ইউনিয়নে জামানত হারান ৫ প্রার্থী। তারা হলেন- গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইউনুছ ১২৫ ভোট, মোটরসাইকেল প্রতীকে বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম ১৩৫ ভোট, চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ৫৫ ভোট, অটোরিক্সা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সেলিম মিয়া ৪৯৭ ভোট, টেলিফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিল্লাল হোসেন ২৭৯ ভোট।
৯নং মাইজখার ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৭ প্রার্থী। উপজেলার সবচেয়ে বড় ইউনিয়নের ১৬টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে ২০ হাজার ৯৯ ভোট। ওই ইউনিয়নের ৭ প্রার্থীর মধ্যে ৫জনই জামানত হারান। তারা হলেন- হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোল বাংলাদেশ প্রার্থী ইউনুছ মিয়া ১ হাজার ৫৬ ভোট, মোটরসাইকেল প্রতীকে এলডিপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন ১ হাজার ৬১৯ ভোট, চশমা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাসেল ৮৭ ভোট, টেলিফোন প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর ১৫৪ ভোট, ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকির হোসেন ৫৫ ভোট।
১০নং গল্লাই ইউনিয়নে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নের ৯টি ভোট কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ১৫ হাজার ১১৫ ভোট। ওই ইউনিয়নে জামানত হারান ৪ প্রার্থী। তারা হলেন- কাস্তে প্রতীকে কমিউনিস্ট পার্টি প্রার্থী সুফিয়া সুলতান ৪৪ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী জামাল ৭৪৫ ভোট, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজালাল ২৬ ভোট ও ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান ১৫ ভোট।
১১নং দোল্লাই ইউনিয়নে ৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নে ৯টি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে ১২ হাজার ৬৬৫ ভোট। ওই ইউনিয়নে ৯ প্রার্থীর মধ্যে ৭ প্রার্থীই জামানত হারান। তারা হলেন- হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী আবু তাহের ১৮৭ ভোট, কাস্তে প্রতীকে কমিউনিস্ট পার্টি প্রার্থী নাজমুল হাসান ৩২ ভোট, আনারস প্রতীকে জামাল ৪৫৮ ভোট, অটোরিক্সা প্রতীকে হাফেজ সাইফুল ইসলাম ৪৬ ভোট, ঘোড়া প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েত আলী ২৩ ভোট, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ৫৫ ভোট ও বিজয়ী জামায়াত সমর্থক প্রার্থী শাহজাহান মিয়া’র ছোট ভাই রজনীগন্ধা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামান ১৭ ভোট।
১২নং বরকরই ইউনিয়নে ৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে মোট ভোট পড়ে ১১ হাজার ৬৯৮ ভোট। এর মধ্যে জামানত হারান হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী সোলাইনমান ৪৬৮ ভোট।
১৩নং জোয়াগ ইউনিয়নে ৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১১ হাজার ৭৫৪ ভোট। ওই ইউনিয়নের ৫ প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারান ৩জন। তারা হলেন- হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ প্রার্থী বিল্লাল হোসেন ৩০০ ভোট, মোটরসাইকেল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ৭৬১ ভোট, আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহেন শাহ মিঞা ১হাজার ৮৭ ভোট।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আহসান হাবীব জানান, গত ৫ জানুয়ারী চান্দিনা ইউনিয়ন পরিষদের ভোট গ্রহণের পর থেকে আমাকে মুরাদনগর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যে কারণে আমরা ওই জামানত বাজেয়াপ্ত তালিকা চূড়ান্ত করতে পারিনি। শীঘ্রই ওই তালিকা চূড়ান্ত করবো।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারী পঞ্চম ধাপে চান্দিনার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩জন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী, দুই জন বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র ও একজন জামায়াত সমর্থক স্বতন্ত্র, ৪জন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী ও ২জন আওয়ামী লীগ সমর্থক প্রার্থী জয় লাভ করন।