ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
দেবিদ্বারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং
‘বদর বাহিনী’র আধিপত্য ॥ তুচ্ছ ঘটনায় বাড়ছে হতাহত
Published : Tuesday, 18 January, 2022 at 12:00 AM, Update: 18.01.2022 12:24:38 AM
দেবিদ্বারে বেপরোয়া কিশোর গ্যাং শাহীন আলম, দেবিদ্বার ||
লিমন নামে এক কিশোরকে রড, হাতুরি ও রাম-দা দিয়ে এলোপাতারি আঘাত ও ছুরিকাঘাতে জখম করেছে বানিয়াপাড়া (গোমতী আ/এ) এলাকার কিশোর গ্যাং বদর বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য। এলোপাতারি কুপিয়ে লিমনের পিটে ছুরিকাঘাত ও দুই হাত দুই পায়ের মাংস আলাদা করে ফেলে গ্যাংয়ের সদস্যরা। গুরুতর আহত লিমন বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের পেছনে এ ঘটনা ঘটে।  আহত  লিমন ১৫) ছোট আলমপুরের আলমগীর হোসেনের ছেলে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিমনের আহত হওয়ার রক্তাক্ত ছবি দেখে ওই দিনই রাত সাড়ে ১১ টার দিকে তাঁর নানা আশ্রব আলী হৃদযন্ত্র ক্রিয়াবন্ধ হয়ে মারা যান। এ বিষয়টি নিশ্চত করেন লিমনের সহপাঠি ডিস ইমরান। ইমরান ঘটনারও প্রত্যাক্ষদর্শী। ইমরান জানায়, গত কয়েকদিন আগে উপজেলার ভিতরের চা স্টলের সামনে লিমনের বন্ধু সাঈদের সঙ্গে বানিয়াপাড়ার কিশোর গ্যাং সদস্য বদরের গাঁয়ে ধাক্কা লাগে। এনিয়ে সাঈদের ওপর  বদরের দলবল উত্তেজিত হয়ে মারতে আসে। এ ঘটনায় স্থানীয় কয়েকজন সাঈদ ও বদরকে একত্র করে মিমাংসা করে দেন। কিন্তু বদরের মনে মনে ক্ষোভ ছিলো। এ ঘটনার জেরে রবিবার সন্ধ্যায় সাঈদের বন্ধু লিমনকে উপজেলার পিছনে চা স্থালের সামনে দেখতে পেয়ে বদরকে জানায় তার বন্ধুরা। পরে কিশোর গ্যাংয়ের প্রধান বদর, হিমেল, সোহাগ, রামিম বাহিনীর ১০/১২ জন সদস্য উপজেলার পিছনে লিমনকে একা পেয়ে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।
সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর পাশের ভবনের দেয়ালের কয়েকটি স্থানে রক্তের জমাট বাঁধা দাগ। কয়েকজন প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানায়, বদর বাহিনীর সদস্যরা লিমনকে ভয়াবহ ভাবে কুপিয়েছে। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে।       
হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনে লিমনের বাবা আলমগীর হোসেন জানান, ছেলেকে জরুরি অপারেশন করাতে হবে। তারা আমার ছেলের হাত-পায়ের মাংস আলাদা করে ফেলেছে। থানায় এখনও কোন অভিযোগ দেওয়া হয়নি। পুলিশ বলছে, বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় অভিযানে চালিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে থানা পুলিশ কিশোর গ্যাংদের প্রধানসহ সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।
ছোট আলমপুরের কিশোর গ্যাং সদস্য মাসুম জানায়, গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মেয়ে বন্ধুকে  কিশোর গ্যাং বদর বাহিনীর প্রধান  বদরের গার্লফেন্ডকে উত্যাক্ত করার অযুহাতে বাহিনীর সদস্যরা আমাকে এলোপাতারি পিটিয়েছে। তারা তুচ্ছ ঘটনায় এলাকায়  
মিজানুর রহমান ও মনির হোসেন নামে কয়েকজন স্থানীয় জানান, দীর্ঘদিন ধরে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত দেখে আসছি। তাঁরা বেপরোয়া ও উচ্চগতির মোটরসাইকেলের রেসে পথচারীদের আতঙ্কের অন্যতম কারণ। চুলের কাটিং  ও বেশভূষা দেখে  তাদের সহজে চেনা যায়। এরা তুচ্ছ ঘটনায় মারামারি ও ঝগড়া ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে। সম্প্রতি দেবিদ্বারে আশংঙ্কা জনক হারে বাড়ছে তাদের নির্যাতনের মাত্রা।
এ ব্যাপারে বদর বাহিনীর প্রধান বদরের বাবা মো. হাসান আলী জানায়, বদর আমার ছেলে। আমি দীর্ঘদিন অসুস্থ। সে কি করে কোথায় থাকে আমার জানা নেই। তার কাজ কর্মে আমাদের মান সম্মান সব শেষ। মারামারি ঘটনা আপনার কাছ থেকে প্রথমে জানলাম। এর আগে আমাকে কেউ বলেনি।  সে যদি দোষী হয় আইন তার যা বিচার করবে আমি তা মেনে নেব।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান জানান, দেবিদ্বারে কোন অবস্থাতেই কিশোর গ্যাং বাড়তে দেব না। দেবিদ্বারে দুই একটি ঘটনা ঘটেছে। আমরা বেপরোয় কিশোর গ্যাং প্রধানসহ অন্য সদস্যদের খুঁজছি। যেকোন সময় তাদের গ্রেফতার করা হবে।  
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও মো.আশিক উন নবী তালুকদার জানান,  কিশোর গ্যাং নির্মূলে প্রথমে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়াও যারা কিশোর গ্যাংদের মদদ ও আশ্রয় প্রশয় দিচ্ছে আমরা তাদের শনাক্ত করেতে পেরেছি। তাদেরকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
অপরদিকে, গত শনিবার সন্ধ্যায় দুই কিশোর গ্যাংয়ের সীমানা ও আধিপত্য দ্বন্ধে প্রতিপক্ষ গ্রুপের প্রধান রবিনসহ কিশোর গ্যাং সদস্যরা শ্রাবন নামে এক কিশোরকে ক্ষুর দিয়ে পিঠে আঘাত করে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষুরসহ রবিনকে আটক করলেও শেষে পালিয়ে যায়। বর্তমানে আহত শ্রাবন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।