রাজনীতির
সব ‘মারপ্যাঁচ’ আর ‘সমীকরণ’কে উড়িয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের
(নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ফের নির্বাচিত হয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী।
এটি তার হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয়বারের জয়। এর আগে ২০১১ সালে প্রথমবার এবং
২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছিলেন তিনি। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে
বিকেল পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর বিকেল থেকে ফলাফল আসতে থাকে। নাসিক নির্বাচনের
রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার ফল ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা নাগাদই আইভীর
জয়ের আভাস মিলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার জয়েরই খবর আসে।
ঘোষিত ১৯২টি
কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত
আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৬১ হাজার ২৭৩ ভোট। তার নিকটতম
প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন
৯২ হাজার ১৭১ ভোট।
আইভী ও তৈমূর আলম ছাড়া মেয়র পদে বাংলাদেশ খেলাফত
মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের
মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি),
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী
কামরুল ইসলাম (ঘোড়া) লড়াই করেছেন।
এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা
পর্যন্ত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। সিটি করপোরেশনের ২৭ ওয়ার্ডের ১৯২টি
ভোটকেন্দ্রে এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে হয় নির্বাচন।
ইভিএম পদ্ধতিতে
অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটারের বিপরীতে প্রায় ৫০
শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম
বা সংঘাতের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ভোট দেওয়ার পরই নিজের জয়ের বিষয়ে
আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেছিলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে
বিজয়ী হবো। নৌকা জিতবেই। জয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত।’
শেষ পর্যন্ত এই জয়ের মাধ্যমে আইভী দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের হ্যাটট্রিক মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
এছাড়া
সকালে ভোট দিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘সরকার বা নির্বাচন কমিশনের
দৃশ্যমান কোনো কারচুপি না হলে জনগণের যে কোনো রায় মেনে নেবো।’
আইভীর
সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক দূরত্ব তৈরি হলেও বিকেলে ভোট দিয়ে স্থানীয় সংসদ
সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আমি নৌকার নির্বাচন করেছি। আমি নৌকার কথা বলেছি।
আমি আশা করব নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
একনজরে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী-
জন্ম: ০৫ জুন ১৯৬৬
বাবা:
আলী আহাম্মদ চুনকা; মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার
চেয়ারম্যান (১৯৭৩) ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (১৯৮০)
মা: মমতাজ বেগম
স্বামী: কাজী আহসান হায়াৎ
শিক্ষাজীবন: রাশিয়ার ওডেসা পিরাগোব মেডিকেল ইনস্টিটিউট থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ডক্টর অব মেডিসিন ডিগ্রি লাভ ( ১৯৯২)
পেশা: চিকিৎসা
রাজনৈতিক পরিচয়:
*নারায়ণগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির সদস্য (১৯৮৪)
*নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদিকা (১৯৯৩)
*নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি (২০০৩)
*নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান (২০০৩)
*নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র (২০১১)
*দ্বিতীয় মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র (২০১৬)
*নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি (২০১৬)