দেশে
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। ডাকাতি, দস্যুতা, ছিনতাইসহ
সংঘবদ্ধ অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে সড়কপথে ও যাত্রীবাহী যানবাহনে
ডাকাতির ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে এসবের সঙ্গে সম্পর্কিত হতাহতের
ঘটনা।
পুলিশের তথ্যেই বলা হয়েছে, গত এক বছরে দেশে এক হাজার ৫৩টি ডাকাতি ও
দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭৭৬টি ঘটনাই ঘটেছে সড়কে। এসব ঘটনায় প্রাণ
হারিয়েছেন ১১ জন। আহত হয়েছেন ৯৯১ জন। লুট হয়েছে কয়েক কোটি টাকার মালামাল।
বাস্তব চিত্র এর চেয়েও অনেক খারাপ। বাস্তবে ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে
অনেক বেশি। পুলিশের খাতায় সব ঘটনা লিপিবদ্ধ হয় না। কারণ ভুক্তভোগীদের
অনেকেই থানায় যেতে ও অভিযোগ জানাতে আগ্রহী হন না। আবার অনেক সময় থানা মামলা
নিতে চায় না বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনা যে বাড়ছে
বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও তার উল্লেখ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে একটি গোয়েন্দা
সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশেই বাড়ছে ডাকাতি ও
দস্যুতার ঘটনা। রাতে সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের সঠিক নজরদারির অভাবে অপরাধীরা
ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পক্ষ থেকেও
স্বীকার করা হয়, সারা দেশে দস্যুতা বা ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকার প্রতিটি থানা এলাকায় টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানোর
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বেশ
কিছু সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে, যারা বাস বা অন্য পরিবহন ভাড়ায় নিয়ে রাতের বেলা
যাত্রী তোলে এবং সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে যাত্রীদের সর্বস্ব লুটে নেয়।
ভুক্তভোগী টাঙ্গাইলের এক চিকিৎসক জানান, ২০ জানুয়ারি একটি বাসে ওঠার পর
ডাকাতরা তাঁর চোখ-হাত-পা বেঁধে রাতভর বাসের মধ্যে নির্যাতন চালায়। ছাড়া
পেয়ে সকালে থানায় মামলা করতে গেলে থানা প্রথমে মামলা নিতে চায়নি। পরে
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে মামলা নেয়। ২৩ জানুয়ারি ভোরে ঢাকায় অধ্যয়নরত
দুই ভারতীয় মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট কারে মগবাজার এলাকায় এনে
নির্যাতন করে তাঁদের সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। এ রকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। জানা
যায়, গত রবিবার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও ঢাকার
আশপাশের এলাকা থেকে এমন একটি ডাকাতদলের ১৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন ঢাকা
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সদস্যরা।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
দেশব্যাপী মানুষের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে
অপরাধের ধরনও। বাড়ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার। সাম্প্রতিক সময়ে ইউপি
নির্বাচনের সময়ও তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে
আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির বেশ কয়েকটি কারখানাও আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে এখন থেকেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সারা দেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র
উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ডাকাতি-ছিনতাই রোধে থানাগুলোকে
আরো সক্রিয় হতে হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। সড়কে যাত্রীদের
নিরাপত্তায় পুলিশি তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে।