অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ ।।
ওমিক্রনের উপসর্গ:
১. নাক বন্ধ
২. নাকে কথা
৩. নাকে পানি ঝরা
৪. বার বার হাঁচি
৫. নাক দিয়ে রক্ত পড়া
৬. অবসন্নতা ও ক্লান্তি
৭. মাথা ব্যাথা
৮. কাশি কম / বেশি
৯. অল্প জ্বর
১০. কন্ঠ বসা ভাব
এর সঙ্গে মৌসুমি যে ইনফ্লুয়েঞ্জা, তার মিল রয়েছে। কাজেই যে কোনো পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসর্গ থাকার পরেও করোনা নেগেটিভ?
বেশ
কিছু দিন ধরেই হালকা জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভুগছেন? করোনার লক্ষণ ভেবে
পরীক্ষা করিয়ে দেখলেন নেগেটিভ। প্রশ্ন হলো এখন কী করবেন? চিকিৎসকরা বলছেন,
রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পিছনে থাকতে পারে বেশ কিছু কারণ।
করোনা কিটের
সাহায্যে ১৫ মিনিটের মধ্যে ঘরে বসেই মিলছে ফলাফল। তবে গবেষকদের মতে, এইসব
ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া সব সময়ে ঠিক হয় না।
তাই অনেক
ক্ষেত্রেই ফলাফল ‘নেগেটিভ’ আসে। তা ছাড়া, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে
ল্যাবে নিয়ে যাওয়ার সময়ে তা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে অবহেলা করা হয়ে
থাকে। সে ক্ষেত্রেও রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, বিশেষ
করে ওমিক্রন অনেক সময়েই পরীক্ষায় ধরা পরছে না বলে দেখা যাচ্ছে। কারণ,
অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সংবেদনশীলতা ৫০ শতাংশের বেশি নয় বলেই মনে করছেন
গবেষকরা।
রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ হওয়ার আরও কারণ থাকতে পারে বলে বলছেন
চিকিৎসকরা। হতে পারে রোগীর ভাইরাল লোড এতটাই কম যে, তা পরীক্ষায় ধরা পরে
না। আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় যার উপর ভিত্তি করে কভিড সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়,
সেটি হল ‘সিটি ভ্যালু’ বা ‘সাইকেল থ্রেশহোল্ড ভ্যালু’। আইসিএমআর-এর
নির্দেশ অনুযায়ী, সিটি ভ্যালু ৩৫-এর বেশি হলে সেই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত
নন। একজনের ভাইরাল লোড খুব কম হওয়ার অর্থ তার সিটি ভ্যালু ৩৫ এর বেশি হবে
এবং পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসবে।
কিন্তু কারও যদি সাধারণ কভিড উপসর্গ থাকে
এবং আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়, তা হলেও তার সাত দিন আইসোলেশনে
থাকা জরুরি। অক্সিজেনের মাত্রা মাপুন। জ্বর থাকলে দেহের তাপমাত্রা মাপুন।
কবিডের লক্ষন আসার পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনের শেষে আরও একবার পরীক্ষা করানোও
জরুরি।
করোনা মহামারি রুখতে টিকাদানের বয়সমীমা কমানো হয়েছে। একই সাথে
অধিক সংখ্যক মানুষের সুরক্ষায় বুষ্টার ডোজের বয়স সীমা ৫০ থেকে নামিয়ে ৪০
বছর করা হয়েছে বলে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
প্রতিনিধি অধ্যাপক ডা: নাজমুল ইসলাম আলাদাভাবে জানিয়েছেন, ওমিক্রন
আক্রান্তদের আইসোলেশন ও কোয়ারিন্টেনের সময় ১০ দিন করা হয়েছে। কর্মস্থলে
ফিরতে করোনা সনদ লাগবে না বলেও জানিয়েছেন। বিসিপিএসে আয়োজিত এক সভায়
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “দেশের ১২ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে
সরকার কাজ করছে। সেমতে ১২ বছর বয়সী সবাইকে টিকা দেয়া হবে। আমাদের টিকা
দেয়ার টার্গেট সাড়ে ১২ কোটি, ইতিমধ্যে ১০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা
সম্ভব হয়েছে। আরও ২ঙ্গ কোটি টিকার বাইরে আছেন। তাদের টিকা দেয়ার চেষ্টা
চলছে। কর্মসূচি বাড়ানোর জন্য আরও দুটি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর একটি হচ্ছে
১২ বছরের উর্ধে সবাইকে টিকার আওতায় আনা। আগে শুধু শিক্ষার্থীদের টিকা
কেন্দ্রে এই ১২ বছর বয়সীদের টিকা দেয়া হত। এখন এটা সবার জন্য উন্মুক্ত।
অনেকেই হয়ত স্কুলে আসে না তাদের টিকার আওতায় আনতে এ সিদ্ধান্ত। অনেক শিশু
আছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। সে যদি বাংলাদেশের নাগরিক হয় তাহলে ফোন
নম্বর দিয়েও টিকা নিতে পারবে। আরেকটি হচ্ছে বুষ্টার ডোজ।” শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে এর আগে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি সব শিক্ষার্থীকে টিকা
দিতে কর্মসূচি হাতে নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার আওতায় এখনও শিক্ষার্থীদের
টিকাদান অব্যাহত আছে। এবার শিক্ষার্থী ছাড়াও ১২ বৎসর বয়সী যে কেউ এ টিকা
নিতে পারবে। এক্ষেত্রে ভাসমান লোকদের জনগনের টিকা দেয়া হবে। দেশে গত বছরের
ফেব্রুয়ারিতে করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। আগামী ৭
ফেব্রুয়ারি টিকাদানের ১ বছর পূর্তি হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০ কোটি
মানুষকে প্রথম ডোজের আওতায় আনার প্রত্যাশার কথা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে উদ্বেগ বাড়লেও
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিসেফ। সরকার
শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করতে চায়। এটি করোনা
পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ৫
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় রয়েছে। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পর্যালোচনা করে
স্কুল খোলা না বন্ধ এব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা অঞ্চল