ওমিক্রনের
দাপটের মধ্যে দেশে এক দিনে আরও নয় হাজারের বেশি মানুষের শরীরে
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মৃত্যু হয়েছে আরও ৩০ জনের। স্বাস্থ্য
অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সাড়ে ৩৯ হাজারের বেশি
নমুনা পরীক্ষা করে নয় হাজার ৫২ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়। এই সংখ্যা গত ২২
জানুয়ারি পর সর্বনিম্ন। ওইদিন নয় হাজার ৬১৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত
হয়েছিল।
২৩ জানুয়ারি শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১০ হাজার ৯০৬ জনে দাঁড়ায়।
এরপর ২৬ জানুয়ারি তা ১৬ হাজার ৩৩ জনে পৌঁছায়, যা করোনাভাইরাস মহামারীর
দুই বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত
কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৮ জনে। তাদের মধ্যে ২৮
হাজার ৫২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ছয় হাজার ২৮২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭৪ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই
হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ২৮ হাজার ৯৩০ জন।
অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে। তবে
উপসর্গবিহীন রোগীরা আক্রান্তরা এই হিসাবেই আসেনি।
গত বছর অগাস্টের পর সোমবার প্রথমবারের মত দেশে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়ায়। ১৫ জানুয়ারি এই সংখ্যা ছিল ৩১ হাজারের ঘরে।
ওমিক্রনের
বিস্তারের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৯৪ জন নতুন রোগী শনাক্ত
হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৩২২ জনের। তার আগের মাস ডিসেম্বরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা
ছিল ৯ হাজার ২৫৫ জন, আর সারা মাসে ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
মহামারীর
পুরো সময়ে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল গতবছর জুলাই মাসে, সখন
ডেল্টার দাপট চলছে। ওই মাসে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন রোগী শনাক্ত হয়, মৃত্যু
হয় ৬১৮২ জনের, যা এক মাসের সর্বোচ্চ।
ওমিক্রনের বিস্তারের মধ্যে এবার
মৃত্যুর সংখ্যা ওই সময়ের তুলনায় কম হলেও নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক
শনাক্ত রোগীর হার ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশের নতুন রেকর্ডে পৌঁছায় গত ২৮
জানুয়ারি।
শুক্রবার নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার কমে হয়েছে ২২
দশমিক ৯৫ শতাংশে। মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক
৫৮ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের
মধ্যে ছয় হাজার ৯৮৪ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের
৫২শতাংশের বেশি। যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৯ জন পুরুষ, ১১ জন
নারী। তাদের মধ্যে ১৭ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা।
এছাড়া চট্টগ্রাম
বিভাগের পাঁচজন, রাজশাহী বিভাগের দুইজন, খুলনা বিভাগের দুইজন, বরিশাল
বিভাগের দুইজন এবং সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন তিনজন। তাদের ২২ জনের বয়স
৬০ বছরের বেশি, চারজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর, দুইজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছর
এবং দুইজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের
প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি তা ১৮
লাখ পেরিয়ে যায়। তার আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত
বছরের ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।
প্রথম
রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য
নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছর ৫ ডিসেম্বর কোভিডে মোট মৃত্যু ২৮
হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার আগে ৫ অগাস্ট ও ১০ অগাস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যুর খবর
আসে, যা মহামারীর মধ্যে এক দিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫৭ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ। বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ছাড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৮৫ লাখ।