শাহীন আলম, দেবিদ্বার ।।
৭ ফেব্রুয়ারি দেবিদ্বার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে সপ্তম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাঁপও তত বেড়ে গেছে। তবে এবার আ.লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। ভোটের এ লড়াইয়ে নৌকার প্রার্থীদের হারিয়ে কয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হবে এ সমীকরণ এখন অনেকেরই মনেই।
বড়শালঘর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল আউয়াল (আনারস) ও জহিরুল ইসলাম জারু’র (চশমা) সাথে তুমুল লড়াই হবে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া মো. ইউনুস মাস্টারকে। কঠিন এ প্রতিদ্বন্ধীতায় পড়তে হচ্ছে আ.লীগের এ প্রবীন প্রার্থীকে।
ফতেহাবাদ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মোসা. শাহানাজ মোস্তফাকে চারদিকে ঘিরে রেখেছে হেভিওয়েট ছয় স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁরা হলেন, ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. মফিজুল ইসলাম (ডোল), সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মাসুদ (দোয়াত-কলম), মো.দেলোয়ার হোসেন (ঘোড়া), জাহিদ হাসান (চশমা), খন্দকার এমএ সালাম (আনারস) এবং বাবু (দুইপাতা)। এ ছয় প্রার্থীকে ডিঙ্গিয়ে নৌকার বিজয়ী ছিনিয়ে আনা অনেকটা কঠিন পুলসিরাত পার হওয়ার মত অবস্থা।
ইউসুফপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মো. কবির হোসেন। তিনি বিশেষ কাজ ছাড়া এলাকায় তেমন একটা না এলেও লবিং তদবীরে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে তাকে বিজয়ী হতে হলে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। তাঁর বিপরীতে দুই হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন তাঁরা হলেন অ্যাডভোকেট মাজহারুল হক মামুন (ঘোড়া) এবং সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা জাকারিয়া হোসেন (আনারস)। এ ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে সহিংসতায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
রসুলপুর ইউপিতে নৌকা প্রতিক পেয়েছেন মো.কামরুল হাসান। তাঁর বিপরীতে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ৩জন। এরা হলেন, মো. শাহাজাহান সরকার (ঘোড়া), মো. মাহবুবুর রহমান (আনারস) এবং নূরুল আলম সুমন (চশমা)। এ তিনজনকে হারিয়ে নৌকার পালে বিজয়ের হাসি ফোটানো অনেকটা কঠিন সমীকরণে পড়তে হবে।
সুবিল ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের নৌকার বিপরীতে নেমেছেন হেভিওয়েট দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁরা হলেন, গোলাম সারওয়ার মুকুল (চশমা) ও আবু তাহের (আনারস)। ওয়াহেদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সারওয়ার মুকুলের জয়জকার হলেও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহেরও পিছিয়ে নেই। তিনিও চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের চেয়ার ধরতে রাখতে। এদিকে, স্বতন্ত্র এই দুই প্রার্থীর কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন আ.লীগ সমর্থিত নৌকার প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম সরকার।
এলাহাবাদ ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের নৌকা প্রতিকের টিকেট পেয়েছেন পাঁচ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম সরকার। তিনি মাঠঘাট চষে বেড়ালেও দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান থাকায় অনেকটা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। এ ইউনিয়নে চশমা প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মো. নুরুল আমিন।
জাফরগঞ্জ ইউপি নির্বাচনে আ.লীগ সমর্থিত মো. আনোয়ার হোসেনের নৌকার সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। তাঁরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান মো.সোহরাব হোসেন (চশমা), মো. জাহিদুল আলম (আনারস) ও ঘোড়া প্রতিকে মো. মোশারফ হোসেন। এ তিন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করা একটি বড় চ্যালেঞ্জে দাঁড়িয়েছেন আনোয়ার হোসেন।
গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন ইউপি নির্বাচনে আ.লীগের মনোনীত নৌকা প্রতিক পেয়েছেন মো. মোকবল হোসেন মুকুল। এ প্রার্থীর নির্বাচনী মাঠ অনূকুলে থাকলেও হাল ছাড়ছেন না বর্তমান চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম (আনারস) ও নবীন প্রার্থী আলী আজ্জম সজল (ঘোড়া)। এই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মুকুলকে হারাতে দিন রাত এক করে ফেলছেন হেভিওয়েট এই দুই প্রার্থী।
গুনাইঘর দক্ষিণ ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মো. হুমায়ুন কবীর। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁর বিপক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আবদুল হাকিম খান (আনারস)। তিনি এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। এখানে নৌকার বিজয়ে বড় বাধা এ প্রার্থী।
ভানী ইউনিয়নে দলীয় প্রতিক পেয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুজ্জামান ভূঁইয়া মুকুল। তিনি ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান। তাঁর চেয়ার কেঁড়ে নিতে মাঠে নেমেছেন তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাঁরা হলেন, কৃষকলীগের উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হানিফ খান (ঘোড়া), মো.জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া (মোটর বাইক) এবং মো. গোফরান হোসেন (চশমা)। নৌকার বিজয় ঠেকাতে এ তিন প্রার্থী মাঠে সরব থাকছেন নিয়মিত।
রাজামেহার ইউনিয়নে নৌকার প্রতিক পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো.জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর গরম ভাতে ছাঁই দিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠ কাপাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন সরকার (চশমা)। এই ইউনিয়নে নৌকাকে বিজয়ী হতে হলে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলমকে।
মোহনপুরে নৌকার প্রার্থী মো. মুজিবুর রহমান ভূইয়া। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি হলেও তাকে হারাতে মাঠে নেমেছেন খোদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম (আনারস)। এছাড়াও আরও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন মাঠে । তারা হলেন, মো. হোসেন (মোটর সাইকেল) ও আবদুল গফুর টেলিফোন)। এ তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বেঁড়াজাল থেকে নৌকাকে মুক্ত করতে বেগ পোহাতে হবে মুজিবুর রহমানকে।
ধামতী ইউনিয়নে নৌকার প্রতিক পেয়েছেন ঢাকার ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন। তিনি নৌকাকে বিজয়ী করতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তবে তাঁর চেষ্টার পালে বাতাস বইতে দিচ্ছে না একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মহি উদ্দিন মিঠু (আনারস)। সর্বশেষ কার পালে বাতাস বইবে সে অপেক্ষায় রয়েছেন ধামতীবাসী।
সুলতানপুর ইউনিয়ন নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন প্রফেসর মো. হুমায়ুন কবীর। তবে তাকে দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। তাঁরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো.সফিকুল ইসলাম’র (মোটর সাইকেল) ও জসিম উদ্দিন (আনারস)। পরীক্ষায় উর্ত্তিণ হলে তিনি হাসতে পারেন বিজয়ের হাসি।
বরকামতায় নৌকা প্রতিক পেয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। এবার বিজয়ী হতে তাকেও তিন হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীর মোকাবেলা করতে হবে। এর মধ্যে একজন হলো মো. হারুনুর রশিদ (ঘোড়া), মাহবুব (চশমা) এবং লুৎফুর রহমান (মোটর সাইকেল)। প্রবীন এ চেয়ারম্যানকে হারাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করতে হবে হারুনুর রশিদের ঘোড়ার সাথে।