মহামারি করোনার মাঝে কড়া সমালোচনার মুখেও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা কারখানা খোলা রেখেছিলেন। এখন তার ফল পাওয়া যাচ্ছে।
তৈরি পোশাকের বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের পরের অবস্থান, অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রধান রফতানিকারক দেশের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রতিযোগিতায় ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের শেষে ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ৪৭২ কোটি ডলার বেশি। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
যে কারণে বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, করোনায় সবকিছু যখন বন্ধ, তখন বিভিন্ন মহলের সমালোচনা মাঝেও অর্থনীতির স্বার্থে ব্যবসায়ীরা সরকারের অনুমতি নিয়ে কারখানা খোলা রাখার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া শ্রমিকদের আপৎকালীন মজুরি পরিশোধে প্রণোদনাও দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধ, ভারতে করোনার দীর্ঘ উপস্থিতি ও মিয়ানমারে অস্থিরতার সুফল পেয়ে এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের পোশাক খাত। এক্ষেত্রে দুই ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে সংস্কার উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। এই দুই ক্রেতা জোটের সংস্কার কর্মসূচির কারণে বাংলাদেশের পোশাক খাত শিল্প পরিবেশের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
আগামী তিন বছরে এ খাতে প্রচুর বিনিয়োগ হবে
এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে আছে। আমরা এখানেই থেমে থাকবো না, আমরা আরও ভালো করতে চাই। আমরা এখন নতুন নতুন মার্কেটে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পোশাকের ভিন্নতা আনার চেষ্টা করছি। পোশাকে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্রেনিং কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সরকারের সহায়তা আরও দরকার হবে। বিশেষ করে কাস্টমস সংক্রান্ত যেসব জটিলতা আছে, সেগুলো দূর করা গেলে আমরা আরও এগিয়ে যেতে পারবো।’ তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এই বছর আমরা আরও বেশি পরিমাণ রফতানি করবো আশা রাখছি। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী তিন বছরে আমরা টেক্সটাইলের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে প্রচুর বিনিয়োগ করবো। ফলে এই খাতে আগামী তিন-চার বছরে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে আশা রাখছি।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক বছর আগে ২০২০ সালে ভিয়েতনামের কাছে দ্বিতীয় প্রধান পোশাক রফতানিকারক দেশের মর্যাদা হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চেয়ে ১০০ কোটি ডলার মূল্যের পোশাক বেশি রফতানি করে এগিয়ে ছিল ভিয়েতনাম। ওই বছর বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৮০০ কোটি ডলার। আর ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর কয়েক দফা লকডাউনে মোট ৬৫ দিন পোশাক কারখানা বন্ধ থাকে। এ সুযোগে ভিয়েতনাম পোশাক রফতানিতে এগিয়ে যায়।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং ভিয়েতনামের ট্রেড প্রমোশন কাউন্সিলের (ভিয়েট্রেড) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫৮০ কোটি ডলার। একই সময়ে ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ তিন হাজার ১০৮ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ১০ মাস এগিয়ে
গত বছরের ১২ মাসের মধ্যে ১০ মাস ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি পরিমাণে তৈরি পোশাক রফতানি করেছে। অবশ্য মার্চ ও জুলাই— এই দুই মাস এগিয়ে ছিল ভিয়েতনাম।
পরিসংখ্যান বিশ্নেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের শুরুতেই ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির পরিমাণ ছিল ২৮৬ কোটি ডলার। আর ভিয়েতনামের ছিল ২৬৬ কোটি ডলার। পরের মাসে ব্যবধান আরও বাড়ে। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ রফতানি করে ২৬৩ কোটি ডলার। বিপরীতে ভিয়েতনাম করে ১১৪ কোটি ডলার।
মার্চে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পোশাক রফতানি করলেও পরের মাস এপ্রিলে ভিয়েতনামের দ্বিগুণ রফতানি করে বাংলাদেশ। জুলাই মাসে বাংলাদেশের ২৮৯ কোটি ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনামের পোশাক রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩১২ কোটি ডলার। এর পর আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর টানা এই পাঁচ মাস বাংলাদেশ ভিয়েতনামের চেয়ে বেশি পোশাক রফতানি করে। শুধু তাই নয়, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে রেকর্ড ৪০৪ কোটি ডলারেরও বেশি পোশাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। মাসটিতে ভিয়েতনামের রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৬২ কোটি ডলার।