
অবশেষে
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। সার্চ কমিটির দেওয়া ১০ জনের নামের তালিকা
থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার
নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনে
(ইসি) সিইসি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। অন্য
চার নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ পেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক (জেলা ও দায়রা
জজ) বেগম রাশিদা সুলতানা, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান (অব.),
সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান।
গত রবিবার বিকেলে প্রধান
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে তাঁরা শপথ গ্রহণ করেন। নতুন নির্বাচন
কমিশন সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। নতুন সিইসি আশা প্রকাশ
করেছেন, তিনি তাঁর ওপর আরোপিত দায়িত্ব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালনের চেষ্টা
করে যাবেন।
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কয়েক মাস ধরেই ব্যাপক
আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক দল, সুধীসমাজ ও অন্যান্য পক্ষ থেকে
সংবিধান অনুসারে ইসি পুনর্গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। গত ২০
ডিসেম্বর থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি
পুনর্গঠন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। ২৫টি রাজনৈতিক দল সেই আলোচনায় অংশ নেয়।
বিএনপিসহ কয়েকটি দল আলোচনায় অংশ নেয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায়ও আইন
প্রণয়নের দাবি জানানো হয়। প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সময়
স্বল্পতার কারণে এবার আইন প্রণয়ন করা কঠিন হবে। শেষ মুহূর্তে সরকার আইন
প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৭ জানুয়ারি সংসদে পাস হয় ‘প্রধান নির্বাচন
কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২। ’ আইন মোতাবেক গত ৫
ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে
ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে দেন। এই কমিটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল,
সুধীসমাজ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তিন শতাধিক নাম যাচাই-বাছাই
করে ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে। তাদের দেওয়া নাম থেকেই
রাষ্ট্রপতি পাঁচজনকে নিয়োগ দেন।
আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা
রাজনীতির প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন
গঠন প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। রাজনৈতিক মেরুকরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এক
পক্ষ কিছু করলে অপর পক্ষ তার বিরোধিতা করবেই। বিএনপিসহ কোনো কোনো দলের
কোনো কোনো নেতার কথায় তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। তা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত পাওয়া
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইতিবাচক সাড়াই বেশি
পাওয়া গেছে। শুধু সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা কখনো ভালো ফল দেয় না। কখনো কখনো
জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্যে পৌঁছানোটাও জরুরি হয়ে ওঠে। আমরা আশা করব, নতুন ইসি
সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
নির্বাচন কমিশনের কাছে জাতির প্রত্যাশা
অনেক। দেশের মানুষ যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের
মাধ্যমে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে চায়। আমরা আশা করি,
পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা জাতির সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে সর্বোচ্চ
আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবেন।