বাংলাদেশের
স্কোরটা টি-টোয়েন্টি হিসাবে খুব একটা মানানসই ছিল না। তবে বাংলাদেশের
ব্যাটাররা ব্যাট করার সময়ই দেখা গিয়েছিল উইকেট স্লো। যে কারণে সমর্থকরা
আশায় বুক বেঁধেছিলেন, এই ১৫৫ রানও যথেষ্ট হবে বাংলাদেশের জন্য।
বোলাররা
সেটাই প্রমাণ করলেন। বিশেষ করে নাসুম আহমেদ। অসাধারণ বোলিং করলেন সাকিব আল
হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান এবং শরিফুল ইসলামও। বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ে
আফগানিস্তানকে ১৭.৪ ওভারে মাত্র ৯৪ রানেই বেঁধে ফেললো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে
জয় এলো ৬১ রানের বড় ব্যবধানে।
টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের
চেয়ে এগিয়ে। বিশেষ করে রশিদ খানের ঘূর্ণিতে যেন জমের মতো ভয় পেতে শুরু
করেছিল বাংলাদেশ। ভারতের দেরাদুনে সেই তিন ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে
আসার পর ঘরের মাঠে আফগানদের কাছে একমাত্র টেস্ট পরাজয় ছিল সেই আফগান জুজুর
কারণেই।
শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে আফগান জুজু কাটাতে পারলো বাংলাদেশ। ২
ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে দাপটের সঙ্গেই জয় পেয়েছে
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
১৫৬ রানের লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টিতে আফগানদের
কাছে কিছুটা সহজ লক্ষ্যই বটে। তার ওপর দলটির হাতে রয়েছেন রহমানুল্লাহ
গুরবাজের মতো ভয়ঙ্কর ওপেনার। যার ব্যাটে অসাধারণ সেঞ্চুরিতে শেষ ওয়ানডে
ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে আফগানিস্তান।
সেই রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়ে দিলেন স্পিনার নাসুম আহমেদ এবং ফিল্ডার ইয়াসির আলি রাব্বি।
প্রথম
ওভারটি করার জন্য অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বল তুলে দেন নাসুম আহমেদের হাতে।
ওভারের দ্বিতীয় বলেই ব্যাটের কানায় লাগিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন হযরতউল্লাহ
জাজাই। কিন্তু বলটা গিয়ে পড়ে অনেকটা দূরে। ফিল্ডার সেই ক্যাচটি ধরতে পারলেন
না।
ওভারের চতুর্থ বলেই রহমানুল্লাহ গুরবাজ ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন পয়েন্টে। কোনো রান করার আগেই আউট হন রহমানুল্লাহ।
পরের
ওভারে মাহেদী হাসানের বলে ক্যাচ তুলেছিলেন হজরতউল্লাহ জাজাই। কিন্তু সেই
ক্যাচ ফেলে দেন মুনিম শাহরিয়ার। খুবই সহজ একটি ক্যাচ ছিল ওটা। কিন্তু নাসুম
পরের ওভার বল করতে এসে আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। তার দ্বিতীয় ওভারের প্রথম
বলে হযরতউল্লাহ জাজাই ক্যাচ তুলে দেন লং অনে। সেটি তালুবন্দি করেন মোহাম্মদ
নাইম।
ওভারের তৃতীয় বলেই তার বলে বোল্ড হয়ে গেলেন দরবিশ রাসুলি। ৬ বল
মোকাবিলা করে মাত্র ২ রান করেছিলেন তিনি। ৮ রানে পড়লো ৩ উইকেট। আফগানদের
চতুর্থ উইকেট হিসেবে করিম নাজাতকে তুলে নেন নাসুম আহমেদ। ২০ রানে ৪ উইকেট
হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকতে শুরু করে আফগানরা।
পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারকে
দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন নাসুম আহমেদ। তাকে দিয়ে টানা চার ওভার বল করালেন
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আস্থার প্রতিদান দিয়ে ৪ ওভারে নাসুম দিলেন
মাত্র ১০ রান। উইকেট নিলেন চারটি। সবচেয়ে কম খরুচে বোলারদের মধ্যে রেকর্ড
গড়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন তিনি।
তবে এ সময় তাদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসেন
মোহাম্মদ নবি এবং নজিবুল্লাহ জাদরান। এ দু’জনের ব্যাটে গড়ে ওঠে ৩৭ রানের
জুটি। এই জুটি যখন বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, তখনই সেটা ভাঙার
দায়িত্ব নিলেন সাকিব আল হাসান।
শুধু জুটি ভাঙাই নয়, পরপর দুই উইকেট নিয়ে
বাংলাদেশকে খেলায় ধরে রাখলেন সাকিব। রিভিউ নিয়ে একবার বেঁচে যাওয়া
মোহাম্মদ নবিকে এবার আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন সাকিব। ১৯
বলে ১৬ রান করে ফিরে যানে আফগান অধিনায়ক।
পরের ওভারেই আবার আঘাত হানলেন
সাকিব। এবারও উইকেটে প্রায় সেট হয়ে যাওয়া নজিবুল্লাহ জাদরানকে ফেরালেন
তিনি। ২৬ বলে ২৭ রান করে সাকিবের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মুনিম
শাহরিয়ারের হাতে ধরা পড়েন নজিবুল্লাহ।
সাকিবের পর জ্বলে উঠলেন বাঁ-হাতি
পেসার শরিফুল ইসলাম। রশিদ খান, কাইস আহমেদ এবং মুজিব-উর রহমানকে ফিরিয়ে দেন
শরিফুল। মাঝে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের উইকেট নেন পেসার মোস্তাফিজ। তাতেই ৯৪
রানে অলআউট আফগানিস্তান। নাসুম আহমেদ নেন ৪ উইকেট। শরিফুল নিলেন ৩টি, সাকিব
২টি এবং মোস্তাফিজ নেন ১ উইকেট।