ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বাস্তবায়নে গড়িমসি কাম্য নয় অবৈধ ইটখোলা ধ্বংসের আদেশ
Published : Friday, 4 March, 2022 at 12:00 AM
বাস্তবায়নে গড়িমসি কাম্য নয় অবৈধ ইটখোলা ধ্বংসের আদেশবিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে রোগাক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর যত মানুষ মারা যায়, এর প্রায় এক-চতুর্থাংশই মারা যায় বায়ুদূষণজনিত কারণে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের শিকার শহরগুলোর অন্যতম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঢাকার পাশের অন্য দুটি শহর গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের অবস্থাও শোচনীয়। অন্যান্য শহর, এমনকি গ্রামের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়।
বায়ুদূষণজনিত কারণে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা। ঘটছে অকালমৃত্যু। অথচ বায়ুদূষণ রোধে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সংস্থাগুলোর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেই বললেই চলে। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের দুর্নীতি এবং দেখেও না দেখার ভান করে থাকার কারণে দেশে বায়ুদূষণের মাত্রা বহুলাংশে বেড়ে যাচ্ছে। দেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য ইটখোলা। সেগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ এবং ইট পোড়ানোর নিয়ম-কানুনও মানা হয় না। হাইকোর্ট ঢাকাসহ আশপাশের পাঁচ জেলার বায়ুদূষণের মাত্রাকে ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে এসব জেলার সব অবৈধ ইটখোলা ১৫ দিনের মধ্যে ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর। এসব জেলার জেলা প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সম্পূরক আবেদনের শুনানির পর মঙ্গলবার এ আদেশ দেন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ। নির্দেশ প্রদানের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালত বলেছেন, কেউ জেগে ঘুমাতে পারবে না। কারণ বায়ুদূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। অবৈধ ইটখোলা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালত বলেছেন, শুধু সেমিনার করে ভালো ভালো কথা বললে হবে না, বায়ুদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিবেশদূষণ, বিশেষ করে বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালত থেকে আগেও অনেক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ তিন পার্বত্য জেলা তথা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির অবৈধ সব ইটখোলা সাত দিনের মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঢাকার বাতাসের মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেসব নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন কিংবা পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা যথেষ্ট আশানুরূপ ছিল না বলেই মানুষ মনে করে। এই অবস্থায় হাইকোর্ট পাঁচ জেলায় সব অবৈধ ইটখোলা ধ্বংসের যে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মনে করি তা অত্যন্ত সময়োপযোগী। শুধু নির্দেশ পালন নয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকদের বায়ুদূষণজনিত পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে অবৈধ ইটখোলা ধ্বংস এবং পরবর্তীকালে পরিবেশ আইন অমান্য করে আর কোনো ইটখোলা যাতে গড়ে উঠতে বা পরিচালিত হতে না পারে, সে জন্য আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের অবৈধ ও মানসম্মত নয় এমন সব ইটখোলা বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে দেশে ইট তৈরির বিকল্প পদ্ধতিগুলোকে উৎসাহিত করতে হবে।