Published : Wednesday, 9 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 09.03.2022 12:47:10 AM
তানভীর দিপু:
কুমিল্লার
হোমনায় রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে জাহিদ হাসান নামে এক স্কুল ছাত্রকে
হত্যা করে মুক্তিপণ দাবী করা তিন বন্ধুর আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন
আদালত। মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুর দুইটায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-৪ এর
বিচারক মিসেস সেলিনা আক্তার এই রায় দেন। এ রায় ঘোষণার সময় আদালতে মামলার ৩
আসামির মধ্যে মো. খাইরুল ইসলাম উপস্থিত থাকলেও অপর দুই আসামি জিহাদ হোসেন ও
এমদাদ হোসেন হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে পলাতক রয়েছে।
নিহত জাহিদ হাসান
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের সাপলেজি গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আক্তারুজ্জামানের
ছেলে ও দুলালপুর চন্দ্রমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে অধ্যয়ণরত ছিলো।
মামলা
সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের গত ৪ নভেম্বর কুমিল্লার হোমনা উপজেলার
সাপলেজী গ্রামের মোঃ আক্তারুজ্জামানের ছেলে ও দুলালপুর চন্দ্রমনি উচ্চ
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র মোঃ জাহিদ হাসানকে বাড়ির পাশ থেকে কৌশলে
অপহরণ করে তারই তিন বন্ধু। সম্ভাব্যস্থানে খোঁজাখুঁজির পর গত ৫ নভেম্বর
হোমনা থানায় নিখোঁজের পরিবার একটি ডায়েরি করে। এরপর অপহরণকারীরা ৬ নভেম্বর
সন্ধ্যায় নিহতের চাচা মাসুদ রানার মোবাইলে কল দিয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ
দাবি করে। চাচা মাসুদ রানা জাহিদের পরিবারকে বিষয়টি জানালে তারা টাকা দিতে
অপারগতা প্রকাশ করে এবং বিষয়টি থানা পুলিশকে জানায়। এরপর মোবাইল ফোনের কল
লিস্টের সূত্রধরে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জিহাদ হোসেন, এমদাদ ও
খাইরুলকে আটক করে পুলিশ। আটকের পর তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা
মুক্তিপণ দাবি ও জাহিদ হাসানকে হত্যা করে স্কুলের সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে
রাখে বলে পুলিশকে স্বীকারোক্তি দেয় তারা। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী,
দুলালপুর চন্দ্রমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের সেপটিক ট্যাংকির ভেতর থেকে স্কুল ছাত্র
জাহিদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের শিকার জাহিদের বাবা ও মামলার
বাদী মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার ছেলেকে তারা নৃশংসভাবে মেরেছে। আমি এই
রায়ে সন্তুষ্ট নই। আমি তাদের মৃত্যুদণ্ড আশা করেছিলাম।
রাষ্ট্রপক্ষের
আইনজীবী কুমিল্লা আদালতের এপিপি মুজিবুর রহমান বাহার বলেন, আমরা সমস্ত
সাক্ষী প্রমানসহ বিজ্ঞ আদালতের কাছে আসামীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন
করতে সক্ষম হয়েছি। বিজ্ঞ বিচারক ৩ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান
করেছেন। এর মধ্যে ৩০২ ধারায় তিন আসামীকেই আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দেন।
মামলার
আরেক আইনজীবী কামরুজ্জামান বাবলু জানান, এই মামলা থেকে বাঁচার জন্য আসামী
পক্ষ নানান কৌশল অবলম্বন করেন। আমরা জেনেছি যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার থাকা
আসামী খাইরুলের বাবা-মা তাদের সন্তানের বয়স কমানোর জন্য নিজেদের কাবিনেরে
সময় পর্যন্ত পেছানোর অপচেষ্টা করে। তবে সে চেষ্টায়ও তারা সফল হতে পারেনি।
আমরা পর্যাপ্ত সাক্ষী প্রমান উপস্থাপনের মাধ্যমে মামলায় আজ রায় পেয়েছি।
বিজ্ঞ আদালত সব পর্যবেক্ষণ করে রায় দিয়েছেন। তবে আমরা আশা করেছিলাম আদালত
সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিবেন আদালত।