ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
‘কুমিল্লার উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক বিশেষ লাইভ টক শো...
‘যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের অভাবই কুমিল্লার উন্নয়নের অন্তরায়।’
Published : Saturday, 12 March, 2022 at 12:00 AM, Update: 12.03.2022 12:36:20 AM
‘যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের অভাবই কুমিল্লার উন্নয়নের অন্তরায়।’নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘শিক্ষা ও সংস্কৃতির পাদপীঠ কুমিল্লা উন্নয়নে যতোটা এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো- তা হয়নি। শত বছর আগের পৌরসভা আধুনিক সিটি কর্পোরেশনে রূপ নিলেও সেবা ও অবকাঠামোগত মানোন্ন্য়ন হয়নি আশানুরূপ। যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দূরদর্শি উন্নয়ন চিন্তা-ভাবনার অভাব এবং নেতৃত্বে সমন্বয়হীনতার অভাবে কুমিল্লাবাসী পায়নি তাদের কাঙ্খিত নগর। যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের অভাবই কুমিল্লার উন্নয়নের অন্তরায়।’
গতকাল শুক্রবার রাতে দৈনিক কুমিল্লার কাগজের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সিকে টুয়েন্টিফোর ডটকম এর বিশেষ লাইভ টক শো ‘কুমিল্লার উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মতামত ব্যক্ত করেছেন কুমিল্লার দুই বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন এবং আলহাজ্ব মোঃ ওমর ফারুক। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন দৈনিক কুমিল্লার কাগজের সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক আবুল কাশেম হৃদয়।
প্রায় শত বছর পুরোনো পৌরসভাকে কেমন সিটি কর্পোরেশন হিসেবে দেখতে চেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন বলেন, কুমিল্লাবাসীর কাঙ্খিত কোন উন্নয়নই হয়নি। শত বছর পুরোনো কুমিল্লা ছিলো ব্যাংক ও ট্যাকের শহর। এখন যেমন ট্যাংক বিলুপ্ত হয়ে গেছে-তেমনি নেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও। কুমিল্লা হতে পারতো দেশের সবচেয়ে উন্নত আবাসিক নগরী। সমতল, উর্বর এবং প্রশাসনিক রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের মাঝামাঝি সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য কি উন্নয়ন হয়েছে আমরা বলতে পারি না। ১৬০০ বছর আগের উন্নত নগরীকে আমরা সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি।
একই প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ ওমর ফারুক বলেন, আগে থেকেই উন্নত এমন অনেক জায়গা বাদ দিয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন করা হয়েছে। যে কারণে নতুন নগরায়ন হয়েছে এই প্রাচীণ শহরের অনেক জায়গায়। তবে  পরিকল্পনার অভাবে কখনো কাঙ্খিত উন্নয়নের মুখ দেখেনি কুমিল্লাবাসী। উদাহরণ সরূপ বলা যায়, টমছমব্রীজের বিশাল নালাটি ভরাট করে সরু ড্রেন করে ফেললেন। আমরা কুমিল্লাকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তাই কুমিল্লার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলি।
কুমিল্লা নগরীর বর্তমান প্রধান সমস্যাগুলোর বিষয়ে একমত হয়েই দুই অতিথি বলেন, কুমিল্লা নগরীর প্রধান সমস্যাগুলো হলো জলাবদ্ধতা, যানজট, অপরিকল্পিত নগরায়ন, বিনোদন কেন্দ্রের অভাব। এছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে দূরদর্শি চিন্তা ভাবনা এবং উন্নয়ণ নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ভাবনা না থাকায় নগরবাসী কখনো তাদের কাঙ্খিত সেবা ও উন্নত নগর পায়নি। দুই বিশিষ্ট নাগরিকই জানান, কুমিল্লাতে আশানুরূপ ভাবে শিক্ষা ও সংস্কৃতিরও উন্নয়ন হয় নি। যদি উন্নত হতো তাহলে কুমিল্লার ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করতে ঢাকায় যেত না। কুমিল্লায় একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়েরও দাবি জানান তারা। কুমিল্লা নগরীতে নতুন কোন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও হয় নি কোন কোন এলাকায়। সাধারণ মানুষের চোঁখে দৃশ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম, রাস্তায় যে পরিমাণ জায়গায় যানবাহন ও মানুষ চলাচলের কথা সেটি এখন নেই। নগরীতে ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষের বসবাস উল্লেখ করে- তারা বলেন, শুধু আজকের কথা চিন্তি করেন কুমিল্লা নগরীকে এগিয়ে নিয়ে গেলে হবে না। ভাবতে হবে ভবিষ্যতের জন্য কি প্রয়োজন।
কেন কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি- এমন প্রশ্নের উত্তরে হাজী ইয়াছিন বলেন, নগরী নিয়ে শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না। দরকার সঠিক পরিকল্পনা। মেগা মাষ্টার প্ল্যান করে কুমিল্লাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তবে সেই পরিকল্পনা হতে হবে একদম সঠিক। পরিকল্পনা করা হলো; কিন্তু সেটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলো না- তবে ওই পরিকল্পনার কোন ফল পাবে না নগরবাসী।
আলহাজ¦ ওমর ফারুক বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণে এখনো অনেক জায়গা রয়েছে খালি পরে রয়েছে। সেখানে এখানো ধানি জমি। কুমিল্লা শহর শুধু একটি জায়গায়ই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যদি শহরটিকে সেসব এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া যায়- তাহলে পুরোনো যে শহর তার উপর চাপ কমবে।
সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ সঠিক ভাবে খরচ হচ্ছে বা হবে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে আলহাজ¦ ওমর ফারুক বলেন, কুমিল্লার উন্নয়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য পনের শ ৩৬ কোটি টাকার নতুন বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে ৫ শ কোটি টাকা কুমিল্লার পুরাতন গোমতীকে হাতিরঝিল প্রকল্পের মত করে তৈরীর জন্য। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তো কুমিল্লার মানুষ নিশ^াস ফেলার  জায়গা পাবে। কিন্তু এসব প্ল্যান এবং বাস্তবায়ন যাদের হাতে তাদের তো সেই মেধা এবং প্রজ্ঞা থাকতে হবে।

কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে কি অনেক উন্নয়ন হচ্ছে না?- এমন প্রশ্নর জবাবে আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, বিএনপি কুমিল্লা বিভাগের কথা বলেছিলো কিন্তু সরকারে থাকাকালীন সময়ে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বিভাগ বাস্তবায়ন হলে উন্নয়ন হয় তো বেশি হতো। কিন্তু যার দায়িত্বে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব থাকবে- তাকেই চিন্তা করতে হবে কুমিল্লাবাসীর জন্য কি ধরনের উন্নয়ন করবেন। কারণ বরাদ্দ এবং জনগণের ট্যাক্সের টাকা তার হাতেই থাকে। সুতরাং উন্নয়নের জন্য যার কাছে দায়িত্ব তাকেই সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে আলহাজ¦ ওমর ফারুক বলেন, কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন নিয়ে কারো  কোন দ্বিমত নেই। কুমিল্লার বর্তমান সকল মন্ত্রী-এমপিরাই কুমিল্লা বিভাগ চান। বিভাগের জন্য সবাই সোচ্চারও। তবে উন্নয়নের কথা বলতে হলে- কুমিল্লা একটি কংক্রিটের শহর হয়ে গেছে। কুমিল্লার উন্নয়ন করতে হলে সবাই মিলে প্ল্যান নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখনো সময় আছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন প্রসঙ্গে হাজী আমিনুর রশিদ ইয়াছিন বলেন, ভোট যদি হয়-মানুষ যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায়। ভোট গ্রহনের সময় যদি কোন জুলুম অত্যাচার যদি না হয়। তখন কুমিল্লাবাসী ভোট দিয়ে তাদের সঠিক নেতা নির্বাচন করবেন। আর সঠিক নেতৃত্ব থেকেই সঠিক উন্নয়ন সম্ভব। দূরদর্শিতা সম্পন্ন নেতা উঠে আসলে, কুমিল্লাকে নিয়ে চিন্তা করার মত নেতা উঠে আসলে তবেই কুমিল্লার সঠিক উন্নয়ন হবে।
এ প্রসঙ্গে আলহাজ¦ ওমর ফারুক বলেন, যারা ভোট দেওয়া দরকার তারা ভোট দিতে যায় না। যারা ভোটের অংশ নেয়া উচিত তারা ভোটের মাঠে যায় না। তারা যদি ভোটের মাঠে যেত তাহলে মানুষ কাকে নির্বাচন করে তা দেখা যেত। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনগুলো ভালো হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে যেতে হবে। তাহলেই যোগ্য নেতৃত্ব তৈরী হবে এবং কুমিল্লার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি হবে।