সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাওয়া ঐতিহাসিক জয়ে উজ্জীবিত বাংলাদেশ দল। গত ২০ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেরাতে তিন ফরম্যাটে ১৯ ম্যাচ খেললেও জয় বঞ্চিত ছিল। অবশেষে শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্গ জয় করে ইতিহাস রচনা করেছে তামিম ইকবালের দল। হারের বৃত্ত ভাঙার পর সফরকারীদের চোখে এখন সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। আজ (রবিবার) জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে সেই স্বপ্ন পূরণে পুরনো অনেক রেকর্ডই ভাঙতে হবে। আজ আবার অধিনায়ক তামিমের ৩২তম জন্মদিন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তার জন্মদিনটা রাঙানোর সুযোগ!
সিরিজ জয় ও সিরিজে ফেরার ভিন্ন দুই সমীকরণ নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে ম্যাচটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি স্পোর্টস। ম্যাচটিতে গোলাপি জার্সি পরে মাঠে নামবে প্রোটিয়ারা। স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বাড়াতেই বিশেষ জার্সি পরে তারা।
চলমান সিরিজ মিলিয়ে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৭৮টি সিরিজ খেলেছে। যার মধ্যে ২৯টিতে জয়ের ফুল ফুটিয়েছে। আজ আরেকবার ফুল ফোটাতে পারলেই সাফল্যের মালা গাঁথার পথে এগিয়ে যাওয়া যাবে আরেক ধাপ। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সাফল্য অনেক হলেও দেশের বাইরে খুব বেশি সাফল্য নেই। ২৯ জয়ের মধ্যে মাত্র ছয়টিতে দেশের বাইরে সিরিজ জিতেছে তারা। দেশের বাইরে প্রথম সিরিজ জিতে নেয় ২০০৬ সালে। কেনিয়াকে তাদের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে হারায় হাবিবুল বাশারের দল। এর বাইরে জিম্বাবুয়েকে তিনবার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার সিরিজ হারায় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। তবে এবার অন্যরকম এক ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে তামিমের দল। যেখানে কোনও ফরম্যাটে জয়েরই স্মৃতি ছিল না, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এখন সিরিজ জয়ের হাতছানি!
দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিন বিশ্রামে কাটিয়েছে গোটা দল। ২০ বছরের চেষ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ফুরফুরে মেজাজেই আছে তামিমরা। মাঠের প্রস্তুতি না নিলেও ইতিহাস গড়তে মানসিক প্রস্তুতিটা খুব ভাললো করেই নিয়েছে বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে টিম গেম খেলে সাফল্য এসেছে। দ্বিতীয় ম্যাচেও একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার লক্ষ্য। মেহেদী হাসান মিরাজের মতে, বাংলাদেশ যখন টিম গেম খেলে তখনি জিতে যায়, ‘আমাদের যেটা হয়েছে, আমরা টিম গেম খেলেছি। আমরা যখন টিম গেম খেলি তখনই বাংলাদেশ জিতে যায়। পরের ম্যাচেও সেই চেষ্টা থাকবে।’
বাংলাদেশের জন্য ওয়ান্ডারার্সের উইকেট খুব সহজ হওয়ার কথা নয়। এই মাঠে বেশিরভাগ ম্যাচেই শেষ হাসি হেসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ান্ডারার্সে হয়েছে ৫০ ওয়ানডেতে। তার মধ্যে ৩৭টির ২৭টিতেই জিতেছে প্রোটিয়ারা।। ব্যাটিং বান্ধব এই উইকেটে ৪০০ রান করেও হারার ইতিহাস আছে। ২০০৬ সালের ১২ মার্চ অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ৪৩৪ রানের লক্ষ্য দাঁড় করায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩৮ রান করে ম্যাচটি জিতে নেয়। মাঠের পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে এই মাঠে জয় পেতে হলে বাংলাদেশের ব্যাটারদের আবার জ্বলে উঠতে হবে।
শুধু তা-ই নয়, বোলিং লাইনআপকেও জ্বলে উঠতে হবে। থামাতে হবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ব্যাটিং তাণ্ডব। দ্বিতীয় ম্যাচে একই একাদশ নিয়ে মাঠে নামার সম্ভাবনা বেশি বাংলাদেশের। তবে স্বাগতিকদের একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে। দেখা যেতে পারে স্পিনার তাবরেজ শামসিকে।
আইসিসি বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। আর দক্ষিণ আফ্রিকা তলানিতে। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া প্রোটিয়া অধিনায়ক তেম্বা বাভুমা। টাইগারদের বিপক্ষে হারের পর বিশ্বকাপের সুপার লিগে তাদের পথচলাটা বেশ কঠিনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিনায়ক বাভুমা বলেছেন, ‘রবিবার আমাদের ম্যাচ জেতা ছাড়া কোনও উপায় নেই। আমাদের সব বিভাগকে ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। আমি যে সব পয়েন্ট অর্জন করেছি তা দেখেছি। আমাদের ওই খেলাটাই খেলতে হবে যেটা আমরা জানি এবং আমরা পারি।’
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে ইতিমধ্যে ১-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ। অতীত পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম ম্যাচ জিতলে ওই সিরিজ বাংলাদেশের পকেটেই থাকে! প্রথম ম্যাচ জয়ের পর সিরিজ হারের রেকর্ড মাত্র তিনটিতে। এর মধ্যে ২৪বার প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করেছে বাংলাদেশ। যেখানে সিরিজ জয় মোট ২৯টি। এখন আত্মবিশ্বাস নিয়ে ৩০তম সিরিজ জয়ের প্রত্যাশা করতেই পারে স্বাগতিক দল!
তবে একটি তথ্য ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। প্রোটিয়ারা গোলাপি জার্সিতে ম্যাচ খেলতে নামবে। পরিসংখ্যান বলছে গোলাপি জার্সিতে কখনোই ম্যাচ হারেনি প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশ যদি এই ম্যাচে জয় পায় তাহলে রচিত হবে আরও একটি ইতিহাসের। অধিনায়ক তামিমের জন্মদিনে সতীর্থরা এর চেয়ে ভালো উপহার কিইবা হতে পারে!