ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ভূগর্ভে পানির স্তর ঠিক রাখুন এগিয়ে আসছে ভয়ংকর পরিণতি
Published : Thursday, 24 March, 2022 at 12:00 AM
ভূগর্ভে পানির স্তর ঠিক রাখুন এগিয়ে আসছে ভয়ংকর পরিণতিসুপেয় পানির অভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষ বাধ্য হচ্ছে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় লবণাক্ত পানি পান করতে। ফলে তাদের নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সারা দেশেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নামছে।
দেশের কোথাও কোথাও পানির স্তর বছরে ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে অনেক এলাকায় টিউবওয়েল বা নলকূপে পানি উঠছে না। একই অবস্থা হচ্ছে শহরাঞ্চলে পানি সরবরাহে ব্যবহৃত গভীর নলকূপের ক্ষেত্রেও। সেচকাজে ব্যবহৃত গভীর নলকূপে পানি না ওঠায় অনেক এলাকায় চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজন হচ্ছে নলকূপ তুলে আবার আরো গভীরে স্থাপন করার। সেগুলোও কয়েক বছরের মধ্যে অকেজো হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভূগর্ভ দিয়ে নোনা পানির অনুপ্রবেশ ক্রমে মধ্যাঞ্চলের দিকে এগিয়ে আসছে। এতে ফসল ও উদ্ভিদের ধরন ক্রমেই বদলে যাচ্ছে। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া রোধ করা না গেলে দেশ এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ক্রমেই বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ফলে উপকূলীয় অনেক নিম্নাঞ্চল এমনিতেই জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নদী, খাল, বিল ও পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি জমা থাকে কম। অনেক নদীতে বছরে ছয় মাসও পানি থাকে না। বৃষ্টির পানি বা মিঠা পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারছে কম। এই অবস্থায় ক্রমেই বেশি করে ভূগর্ভের পানি উত্তোলন করায় স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভের শূন্য স্তরে সাগরের নোনা পানি দ্রুত ঢুকে পড়ছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, খুলনার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর—এই পাঁচটি উপকূলীয় উপজেলায় বসবাসকারী ৭৩ শতাংশ মানুষ অনিরাপদ লবণাক্ত পানি পান করে। ২০২১ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) একটি প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এই পাঁচ উপজেলার মানুষ যে পানি পান করে তাতে লবণাক্ততার পরিমাণ গড়ে প্রতি লিটারে এক হাজার ৪২৭ মিলিগ্রাম থেকে দুই হাজার ৪০৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত। প্রতি লিটার পানিতে এক হাজার মিলিগ্রামের বেশি লবণাক্ততা থাকলে তা পানের অনুপযুক্ত বিবেচনা করা হয়। এসব এলাকায় ৫২ শতাংশ পুকুর ও ৭৭ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় লবণাক্ততা পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি পান করার কারণে এলাকায় নারীদের জরায়ুর নানা রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, গর্ভকালীন খিঁচুনি, গর্ভপাত, এমনকি অপরিণত শিশু জন্মের হার বেড়ে গেছে। পুরুষরাও উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
পানি ছাড়া জীবন অসম্ভব। তাই সুপেয় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রধান কর্তব্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা দ্রুত নিতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় নিরাপদ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, মিষ্টি পানির জলাধার সৃষ্টি ও পানিকে লবণমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশব্যাপী ভূগর্ভের পানি উত্তোলন কমাতে হবে।