আজ
২৬শে মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময়
দিন। ১৯৭১ সালে এই ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ওয়্যারলেস এবং
বিশেষভাবে তৈরি বেতারযন্ত্রের কম্পনতরঙ্গে তা ছড়িয়ে যায় সারা দেশে।
তার
আগে ৭ই মার্চের চূড়ান্ত ঘোষণায় প্রস্তুত জাতি মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করে
ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুসেনাদের প্রতিরোধে। সেই রাতেই রাজারবাগ, পিলখানায় থাকা
বাঙালি বীর যোদ্ধারা বুকের রক্ত দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুক্তিযুদ্ধের
পক্ষে অস্ত্র তুলে নেন বিভিন্ন সেনানিবাসে থাকা সৈনিকরাও। মুক্তির মন্ত্রে
উজ্জীবিত জাতি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্রমেই কঠোরতর প্রতিরোধ
গড়ে তোলে। ৯ মাস ধরে চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে ১৬ই
ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। জাতি আজ বিপুল উৎসাহ ও
উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে।
পাকিস্তানিদের
অব্যাহত শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান। সত্তরের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানিরা বাঙালির হাতে ক্ষমতা না
দিয়ে শুরু করেছিল বাঙালিনিধন। ৯ মাস ধরে চালিয়েছে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই
গণহত্যায় দলগতভাবে অংশ নিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। গড়ে তুলেছিল রাজাকার,
আলবদরের মতো বিভিন্ন বাহিনী। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে তারা
দমাতে পারেনি। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত
বিজয় অর্জন করি। এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধের সব শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং
যাঁরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ
করছি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী সব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও
রাষ্ট্রকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেমে
থাকেনি। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একাত্তরের ঘাতকরা
ফিরে আসে রাষ্ট্রক্ষমতায়। দেশকে আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার
এবং ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলতে থাকে। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেশ
ক্রমে এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। ২০১৫ সালে আমরা নিম্নমধ্যম আয়ের
দেশ এবং ২০১৮ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। চলতি বছর
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত
সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে এ এক অনন্য অর্জন। স্বাধীনতাবিরোধীদের
ষড়যন্ত্র না থাকলে হয়তো আরো অনেক আগেই দেশ এই অবস্থানে পৌঁছে যেত।
জাতি
আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশ আজ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। সবার
সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা নিশ্চয় এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠব, আমরা আশাবাদী।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ নতুন করে এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু
করে দাঁড়াবে এটাই প্রত্যাশা।