ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রি হতো ছিনতাই করা মোবাইল ফোন
Published : Wednesday, 6 April, 2022 at 12:00 AM
মোবাইল ফোন ছিনতাই করে তা বিক্রির জন্য ছিনতাইকারী চক্রের নিয়োগ করা ছিল এজেন্ট। ওই এজেন্টের মাধ্যমে ছিনতাই করা মোবাইল রাজধানীর আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে শনাক্ত করতে না পারে সেজন্য মুছে ফেলা হতো আইএমইএ নম্বর। পরে এজেন্টের মাধ্যমে সাভার ও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন দোকানে চলে যেত সেগুলো। ছিনতাইয়ের পরে একটি ফোন পাঁচ থেকে ছয়বার হাতবদল হয়।
মোবাইল ফোন ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে সম্প্রতি রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পারেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও বিভাগের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগ বলছে, ১৬টি চোরাই মোবাইলসহ ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ টিপু সুলতান, মোহাম্মদ রফিক মিয়া, রুবেল মোল্লা ও সাগর হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ছিনতাইকারী চক্রের গ্রেফতার চার সদস্যের মধ্যে টিপু সুলতান রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন সংগ্রহ করতো। তবে এই চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ছিনতাইকারীরা মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের পর টিপুর কাছে দিয়ে যেতো। সিন্ডিকেটের মূল দায?িত্ব পালন করতো টিপু। তার সহযোগী হিসেবে ছিল রফিক। রুবেল চোরাই মোবাইল বিক্রি করতো। আর সাগর পেশাদার ছিনতাইকারী। প্রতিদিন সে ১০ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন সংগ্রহ করতো। টিপু সুলতানকে চক্রের সদস্যরা শুধু নামেই চিনতো, কখনও দেখেনি।
চোরাই কিংবা ছিনতাই করা মোবাইল ফোন কেনাবেচার জন্য আলাদা সিন্ডিকেট রয়েছে এই চক্রটির। কারণ, সেগুলো যেকোনও জায়গায় বিক্রি করা সম্ভব নয়।? এ চক্রের সদস্যরা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন পেজের মাধ্যমে এসব চোরাই ফোন বিক্রি করে আসছে। কেউ কেউ বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করে বিক্রির জন্য। গ্রেফতার টিপু সুলতানের নামে এর আগেও বিভিন্ন মামলা রয়েছে। সে পেশাদার ছিনতাইকারী, চোরাই-ছিনতাই মোবাইল কেনাবেচার ডিলার। ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে মোবাইল সংগ্রহ করে কেনাবেচায় জড়িতদের কাছে সরবরাহ করাই ছিল টিপুর কাজ। ছিনতাই মোবাইল হাতে পাওয়ার পর রুবেলের কাজ ছিল সেগুলোর আইএমইএম নম্বর ফ্ল্যাশ করে দিয়ে মুছে ফেলা। পরে মোবাইলটি নতুন করে ব্যবহার উপযোগী করে তুলতো। সাগর ছিনতাইকারী। সে বিশেষ করে দামি মোবাইল ফোনগুলো ছিনতাইয়ে জড়িত। সাগরের বোনও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, অফিস কেন্দ্রিক বিশেষ করে, সকালে অফিস শুরুর সময় এবং অফিস থেকে ফেরার সময় যাত্রীর চাপ বেশি থাকে। এই বিশেষ সময়টি তারা বেছে নিতো। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল প্রথমে ফ্ল্যাশ করে আইএমইএ নিয়ে নম্বর মুছে ফেলা হতো। পরে টিপু রাজধানীর আশপাশে সাভার ও কেরানীগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতো বিক্রির জন্য। এ চক্রের অন্য সদস্য রুবেলের কেরানীগঞ্জে একটি দোকান রয়েছে। ওই দোকানে এসব ছিনতাই মোবাইল বিক্রি করা হতো। যেসব মোবাইলের দাম ৫০ হাজার টাকার উপরে সেগুলো বিক্রি করা হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। মোবাইল ছিনতাইয়ের পর ছিনতাইকারীরা তাদের নিয়োগ করা এজেন্টের কাছে চলে আসতো। পরবর্তী সময়ে এজেন্টের মাধ্যমে চোরাই মোবাইল কেনাবেচা চক্রের সদস্যদের হাতে চলে যেত এসব মোবাইল। গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের বিক্রেতাদের এ বিষয়ে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। এই চক্রের সদস্যরা কখনও এক জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে থাকে না। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তাদের তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতেই মোহাম্মদপুর আদাবর শেরেবাংলা নগর ধানমন্ডি এলাকায় ছিনতাইয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার তথ্য পায় গোয়েন্দারা। প্রতিদিনই চার-পাঁচটি করে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এমন তথ্য পাওয়া যায়। তারই ধারাবাহিকতায় এই ছিনতাইকারী চক্রের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মহতারিম বলেন, ‘মাসখানেক আগে ছিনতাইকারী চক্রের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকায় অনেকের বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। বেশ কিছু ছিনতাইকারীকে গ্রেফতারের পর কয়েক দিন ধরে ছিনতাইয়ের প্রবণতা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায়। এই চক্রের সদস্যরা মূলত মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, শ্যামলী, আগারগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, হাতিরঝিল-এসব এলাকায় সক্রিয় ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ক্রেতাসাধারণ যেন চলার পথে ছিনতাইয়ের শিকার না হয়, সে ব্যাপারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মহোদয় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। মার্কেটমুখী কিংবা বিভিন্ন কাজে যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তারা যেন ছিনতাইয়ের শিকার না হয়, ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা প্রতিরোধে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিভিন্ন পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন।’