তানভীর
দিপু: এক পাশে বসত বাড়ি, অন্যপাশে ফসলি জমি। সংযোগ সড়কের কোন অস্তিত্ব না
থাকলেও কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার একটি খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে
সেতু। এর দুই পাশে নেই সংযোগ সড়কও। তাই সেতুটি কোন কাজেই আসছে না
এলাকাবাসীর। উপজেলার কোদালিয়া এলাকায় রুহিতা খালের উপর প্রায় ৩০ লাখ টাকা
ব্যায়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি।
সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে দুই পাশে
সংযোগ সড়ক থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা গেছে
উল্টো চিত্র। এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণ সরকারি
অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। যদিও উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা বলছেন,
জনগুরুত্ব বিবেচনা করেই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে
রুহিতা খালের উপর সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৪০০ টাকা
।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা ইউনিয়নের
কোদালিয়া মজুমদার বাড়ির দক্ষিণ পাশে রুহিতা খালের উপর ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য একটি
সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর দুই পাশে নেই সংযোগ সড়ক। সেতুর উত্তর পাশে
বসত বাড়ি ও দক্ষিণ পাশে বিশাল ফসলের মাঠ। গত আড়াই বছর ধরে খালের উপর
দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের দাবী
ফসলী জমি খনন করে এক ব্যক্তির মালিকানাধিন একটি মাছের প্রজেক্টের সুবিধার
জন্যই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
কোদালিয়া গ্রামের সর্দার ইছহাক
মজুমদার বলেন, সংযোগ সড়ক ছাড়া ব্রিজটি কোন কাজে আসবে না। সড়ক নির্মানের
জন্য ব্রিজের দুইপাশে সরকারি কোন জায়গাও নেই।
একই গ্রামের বাসিন্দা আবু
সাঈদ মজুমদার বলেন, রাস্তার দেখা নেই, ব্রিজ নির্মাণ করে বসে আছে। আগে
দেখতাম সড়ক নির্মান করে পর ব্রিজ বা কলভার্ট নির্মান করতো। এ ব্রিজ
নির্মাণের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো টা। এ ছাড়াও এখানে বর্ষাকালে গলাসমান পানি
থই থই করে। ফলে এটি এলাবাসীর কোন কাজেই আসবে না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ,
সেতুর একপাশে একটি মাছের প্রজেক্ট রয়েছে। ওই প্রজেক্ট মালিককে সুবিধা দিতেই
এখানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। কেননা সেতুটি ওই প্রজেক্টে আসা যাওয়া
ছাড়া আর কোনো কাজে আসছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর দক্ষিণ উপজেলা
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, জনগুরুত্ব
বিবেচনা করে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা ভাইস
চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু বলেন, বিনা প্রয়োজনে রুহিতা খালের উপর ব্রিজটি
নির্মাণ করা হয়েছে। এটি সরকারের অর্থ অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। তার দাবী
ব্রিজটি কার প্ররোচনায় নির্মাণ করা হয়েছে সে বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা খতিয়ে
দেখবেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন,
অপরিকল্পিত ভাবে সেতু করার সুযোগ নেই। অবশ্যই এর দুইপাশে সংযোগ সড়ক থাকতে
হবে। কারণ মানুষ যদি চলাচলই করতে না পারে, তা হলে ব্রিজ দিয়ে কি হবে। আপনার
মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।