নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে কুমিল্লার ধর্মসাগরপাড় নগর উদ্যানে বসে থাকা দুই কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে অসদাচরণ করে সেই ভিডিও ধারণ করে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দুই সদস্য। এরপর সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। শৃঙ্খলা পরিপন্থি হওয়ায় এই ঘটনায় ওই দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৪ এপ্রিল রাতেই ওই দুই সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, নববর্ষের দিন কুমিল্লা ধর্মসাগর পাড়ের নগর উদ্যানে পাশাপাশি বসে গল্প করছিল দুই কিশোর-কিশোরী। এ সময় পেছন থেকে ভিডিও ধারণ করতে করতে এসে তাদের সামনে গিয়ে পরিচয় জানতে চান ডিবি পুলিশের একজন সদস্য। দাঁড় করিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি। এ সময় কিশোরীর মাস্ক খোলার জন্য বলতে গিয়ে পাশে থাকা আরেক সদস্য (ডিবি) 'তুই' করে সম্বোধন করেন। এরপরই পরিচয় জানতে যাওয়া সদস্য ওই কিশোরকে ক্ষিপ্ত হয়ে আঞ্চলিক ভাষায় বকাবাদ্য করেন।
ডিবি সদস্যরা এ সময় মেয়েটির বাবার ফোন নম্বর চাইলে তারা ভয়ে মাফ চাইতে থাকে এবং মেয়েটির বাবা বিদেশ থাকেন বলে জানায় ছেলেটি। তখন পাশ থেকে একজন বলতে থাকেন, বিদেশ থেকে আইব এখন, নইলে অফিসে নিয়া যামু। অফিস থেকে অভিভাবক আইসা নিয়া যাইবো।
পার্কে আড্ডারত কিশোর-কিশোরীর ভিডিও ধারণ এবং তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় পুরো কুমিল্লাজুড়ে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম, তানভীর আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ না করলেও আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বিষয়টি পুলিশের শৃঙ্খলা পরিপন্থি। যে কারণে আমরা নিজ থেকে বিষয়টিকে আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের ব্যবস্থা নিয়েছি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
এর আগে কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ভিডিওটি ফেসবুকে দেখেছি। আমাকে কয়েকজন মৌখিকভাবেও জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করা হয় এবং রাতেই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে জেলা ডিবি পুলিশের ওসি সত্যজিৎ বড়ুয়া জানান, ভিডিওটির বিষয়ে জানতে পেরে আমি পুলিশ সুপার বরাবর একটি রিপোর্ট দিয়েছি। সে প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার নাগরিক প্রতিনিধি বদরুল হুদা জেনু বলেন, পুলিশ চাইলে যেকোনো অপরাধের প্রমাণস্বরুপ ভিডিও রাখতে পারেন। তবে পার্কের ঘটনায় যেভাবে ভিডিও করা হয়েছে এবং তা ছড়িয়ে গেছে- তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।