রহমতের মাস রমজান সর্ম্পকে মহান আল্লাহর ঘোষণা ছিল বেশি বেশি নেক কাজে নিয়োজিত থাকার সুযোগ নিশ্চিতের আহ্বান। হাদিসে এসেছে- ‘রমজানে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং অভিশপ্ত শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি) জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়ার অর্থই হলো- নেক আমল করা সহজ হয়ে যাওয়া। আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থই হলো- বদ আমলের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া। শয়তানকে শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলার অর্থ হলো- রমজানের আগে তারা স্বাধীনভাবে যথেচ্ছা বিচরণ করেছে এবং বান্দাকে কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা দিয়ে যে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; রমজানের প্রথম রাতেই তাদের বন্দী করা হয়, যেন রোজাদারকে ধোঁকা ও প্রতারণা দিয়ে বিভ্রান্ত করতে না পারে।
রহমতের মাস রমজানজুড়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নেক কাজে নিয়োজিত থাকা অনেক সহজ। তাই রমজানের রহমতের দশকে আল্লাহর অনুগ্রহ পেতে রোজাদারের করণীয় হলো-
* দিনের বেলা একনিষ্ঠতার সঙ্গে রোজা পালন করা।
* যথা সময়ে জামআতে নামাজ আদায় করা।
* রাতের তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ আদায় করা।
* বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা।
* দান–সদকা করা।
* ফেতরা ও জাকাত দেয়া।
* আল্লাহর জিকিরে মশগুল হয়ে তাকওয়া অর্জনে অধিক সচেষ্ট হওয়া।
রমজানের বিশেষ রহমত বা অনুগ্রহ পাওয়ার ঘোষণা-
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’
- ‘যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে সাওয়াব বা প্রতিদান পাওয়ার নিয়তে রমজান মাসে লাইলাতুল কদরে (রাত জেগে) ইবাদত করবে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল। রমজানে জিবরিল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরও অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরিল আলাইহিস সালাম তার সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। তিনি (বিশ্বনবি) তাকে কুরআন শোনাতেন। জিবরিল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।’ (বুখারি)
রমজানের রহমতের দশকে মহান আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ পেলেই রোজাদারের রোজা ও ইবাদত সফল এবং স্বার্থক। তবেই সে বিপদ-আপদ ও বালা–মুসিবত থেকে রক্ষা পাবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবে। নতুবা সে হবে মহান আল্লাহর রহমত তথা অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত।
সুতরাং প্রত্যেক রোজাদারের উচিত, আল্লাহর রহমত পাওয়ার জন্য পুণ্যের কাজে এগিয়ে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার দয়া-মায়া সংক্রান্ত গুণবচক নামগুলো বেশি বেশি স্মরণ করা এবং উক্ত গুণাবলী নিজেদের মধ্যে অর্জন করার চেষ্ট করা। আচরণে সর্বোচ্চ দয়া প্রদর্শন করা। ঠিক হাদিসের এ ঘোষণার মতো- ‘তুমি দুনিয়াবাসীর ওপর দয়া করো; তবে আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া করবেন।’ অর্থাৎ যে মানুষর প্রতি দয়া করে না মহান আল্লাহও তার প্রতি দয়া করেন না।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রহমতের দশকে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগি ও মানুষর সহনুভূতিশীল হওয়ার তাওফিক দান করুন। রোজার হকগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। রহমতের দশকে মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।