কুবিতে ছাত্রীদের জন্য আলাদা বাসের দাবি
Published : Saturday, 23 April, 2022 at 12:00 AM
কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিদ্যালয়ের (কুবি) নারী শিক্ষার্থীরা ছেলেদের সাথে যাতায়াত করতে বিব্রত বোধ করা, ব্যাক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া, সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করা, গাদাগাদি করে বাসে উঠা, শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাসের সংখ্যা কম হওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে যৌন হয়রানির মুখে পড়ায় যাতায়াতের জন্য পৃথক বাসের দাবি জানিয়েছেন।
তাদের দাবি, প্রতিদিন এমন নানামুখী সমস্যার কারণে ছাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়। অনেক সময় ব্যক্তিগত যৌন হয়রানীর মুখোমুখি হলেও লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে জানাতে পারেন না তারা। কেউ কেউ আবার ক্যাম্পাসের বাসে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে যাতায়াত করছেন গণপরিবহনে। এতে একদিকে যেমন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য পৃথক বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই ছাত্রীদের জন্য পৃথক বাস। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকলেও অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রীদের একটা অংশ। যারা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রী বলেন, আমাদের জন্য পৃথক বাসের প্রয়োজন। কিন্তু প্রশাসন এটাকে কখনও প্রয়োজন মনে করেনি। এখানে সহশিক্ষা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলা হয়। কিন্তু পৃথক বাহন না থাকাতে কারও কারও স্বাধীনতা রক্ষা হলেও আমরা যারা হিজাব পালন করতে চাই আমাদের স্বাধীনতা পুরোদস্তুর ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এদিকে পৃথক বাস না থাকাতে বিড়ম্বনা এবং হয়রানির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক গ্রুপগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা একাধিকবার নজরে আনেন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান যেদনী। চৌদ্দগ্রাম থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, কান্দিরপাড় থেকে ফিলাপ হয়ে আসে বাসের সিট। পদুয়ার বাজার থেকে কোনমতে ধাক্কাধাক্কি করে বাসে উঠে তারপর দাঁড়িয়ে যেতে হয় ভার্সিটি পর্যন্ত। মাঝে মাঝে দাঁড়াতে হয় বাসের দরজায়। যা খুবই বিব্রতকর।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং ছেলেমেয়ে একত্রে গাদাগাদি করে যাতায়াতের কারণে নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
লোক প্রশাসন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী উম্মে নুসরাত আক্তার বলেন, আমার বাসা চম্পকনগর(সাতরা)। শাসনগাছা থেকে বাসে উঠায় সিট পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে যেতে হয়। আমাদের জন্য যদি পৃথক বাস দেয়া হয় তাহলে আমরা দাঁড়িয়ে যেতেও অস্বস্তি বোধ করবো না।
পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য আলাদা বাস দেয়া হলে বৈষম্য জিনিসটা চলে আসবে। এখানে বিভিন্ন চিন্তার, মতাদর্শের লোকজন আছে। তবে এখানে যদি প্রশাসন আমাদেরকে কোন ব্যবস্থা নিতে বলে আমরা নিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো সহশিক্ষা কার্যক্রম চলে। এখানে ছেলে মেয়ে একসাথে ক্লাস করছে। তাহলে মেয়েদের আলাদা বাসের কি দরকার? আর বর্তমানে মেয়েরাও সমান অধিকার চায়। তবুও আমি প্রশাসনের সাথে কথা বলে বিষয়টি দেখবো।
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. এফ. এম. আবদুল মঈন বলেন, এমনিতেই আমাদের বাসের সংখ্যা কম। মেয়েদের জন্য পৃথক বাস দিতে গেলে ভোগান্তি বাড়বে। তবে উদ্যোগটা ভালো। আমরা পরিবহন পুল এবং উপদেষ্টাদের সাথে কথা বলে দেখবো কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা।