তানভীর দিপু:
কুমিল্লা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অন্তত হাফ ডজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দলীয়
মনোনয়ন পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন। এ যেন ভোটের চূড়ান্ত লড়াইয়ের আগে আরো
এক লড়াই। দলের আস্থার প্রতীক নৌকা মার্কা পেতেই মরিয়া এসব প্রার্থীরা।
অন্যদিকে দল নির্বাচন করবে কি, করবে না এমন চিন্তা উহ্য রেখেই মাঠে আছেন
বিএনপির রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে সম্পৃক্ত একাধিক নেতা। স্থানীয়
রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াইয়ে নির্বাচনে অংশ নেবার বিকল্প কিছু দেখছেন না
বলেই- এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির একটি অংশ সরকারি দলের
হয়ে কাজ করায় অপর অংশ নানাভাবে হয়রানীর শিকার হওয়ায় ছাড় দিতে নারাজ তারাও।
জানা
গেছে, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ বর্ধিত সভায় সাধারণ সম্পাদক
আরফানুল হক রিফাতের নাম কেন্দ্রে দলীয় মনোনয়ন দেবার বিষয়ে সুপারিশ করেছে
সভায় উপস্থিত সকল সদস্যরা। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর আসনের এমপি
আলহাজ¦ আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহার এর সভাপতিত্বে সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সেখান থেকে আরফানুল হক রিফাতের নাম ব্যতীত দলীয় মনোনয়নের জন্য অন্য কারো
নাম প্রস্তাব করা হয় নি। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে আরফানুল
হক রিফাত বলেন, আমি কুমিল্লা মহানগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিল করেছি।
প্রতিটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে আমার প্রতি।
দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শ্রদ্ধেয় শেখ
হাসিনা যদি চান আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে প্রস্তুত। মহানগর আওয়ামী
লীগের সভাপতি স্থানীয় সাংসদ আ ক ম বাহা উদ্দিন বাহারের হাত ধরে এই
কুমিল্লায় নৌকা জয়ী হবে। অথবা দল যাকেই নৌকা প্রতীয় দিবেন তাকে জয়ী করতে
আমি সচেষ্ট থাকবো।
এদিকে নির্বাচন করবেন কি না এ বিষয়ে স্পষ্ট ভাবে
মতামত না জানালেও সংরক্ষিত এমপি মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আঞ্জুম
সুলতানা সীমার নাম আলোচনা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। গত নির্বাচনে তিনি নৌকা
প্রতীকে নানাহ ষড়যন্ত্রের কারনে হেরে গেলেও আবার এই নির্বাচনে তার
প্রতিদ্বন্দীতার কথা জোরেশোরে উঠছে বিভিন্ন মহলে। মহলগুলো বলছে, সীমাকে
এবার মনোনয়ন দিলে ষড়যন্ত্রকারীরা খুব একটা সফল হবেন না। দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার
বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুম সুলতানা সীমা জানান, আমি নির্বাচন করবো কি না এই
বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনা । উনি যদি চান তাহলে যে কেউ ই নির্বাচন করতে পারবেন। সুতরাং এই
বিষয়ে আমার ব্যাক্তিগতভাবে বলার কিছু নেই।
অপরদিকে এমপি আঞ্জুম
সুলতানা সীমার ভাই প্রয়াত বর্ষীয়ান নেতা অধ্যক্ষ আফজল খানের পুত্র কুমিল্লা
চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদ পারভেজ খান ইমরানের নামও মনোনয়ন
প্রত্যাশীদের তালিকায়। মাসুদ পারভেজ খান ইমরান বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে আমি
আশাবাদি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।
নির্বাচনে
প্রার্থীতার বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের
সাবেক ভিপি ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক নূর উর রহমান
মাহমুদ তানিম বলেন, আমি দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি। ছাত্র রাজনীতি
থেকে শুরু করে মহানগর আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে আমার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।
সবদিক বিবেচনায় আমি দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আমি সর্বোচ্চ আশাবাদি। এর আগে
দলীয় সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘আমার ব্যাপারটি দেখবেন’ বলেও কথা
দিয়েছিলেন।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও মহানগর
আওয়ামী লীগ নেতা কবিরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ভিক্টোরিয়া কলেজের রাজনীতি থেকে
শুরু করে এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। আমিও কুমিল্লা সিটি
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবো। আশা রাখছি দল আমার বিষয়টি
বিবেচনায় রাখবে।
দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে প্রায় একই কথা বলেছেন জেলা
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ কমিটির
সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু। তিনি বলেন, কুমিল্লা মহানগরীর
নেতা-কর্মীরা আমাকে সমর্থন দিচ্ছে। তারা চাইছে আমি যেনো নির্বাচন করি। দলের
কাছে মনোনয়ন চাইবো। মনোনয়ন পেলে আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
দলের মনোনয়ন নিয়ে ভাবছেন না বিএনপির নেতারা:
এদিকে
বিএনপির দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ভাবছে না মেয়র পদে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
স্থানীয় রাজনীতির কথা চিন্তা করে জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়ে
ইতিমধ্যে নির্বাচনে প্রার্থীতা ঘোষণা করেছেন দলটি মহানগরের কয়েকজন নেতা।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে বহিষ্কার হতে পারেন এমন শংকা
মাথায় নিয়েই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা। বিএনপির কেন্দ্রীয়
দায়িত্ব থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও ও বর্তমান মেয়র মোঃ মনিরুল হক সাক্কু
জানান, আমি দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কুমিল্লার মানুষের আশা
আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে চেষ্টা করেছি। আগামী নির্বাচনেও আমি অংশ নিয়ে
কুমিল্লার মানুষের সেবা করার সুযোগ পেতে চাই। দল নির্বাচন না করলে
নির্বাচনে অংশ নিবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্টি থেকে বেশি
জনগণকে সাপোর্ট করি। যে কারণে আমি জনগেণের সাথেই থাকতে চাই। দল নির্বাচন
করলেও আছি, দল না করলেও আমি জনগণের সাথে থাকতে চাই। দল যদি নির্বাচন করে
তাহলে আমি দলের মনোনয়ন চাইবো, আর না করলে- আমি দলের জন্য বসে থাকবো কেন?
আমি তৃণমুলের রাজনীতি করি, তাই আমি মানুষের সাথে থাকতে চাই। আমার ইচ্ছা
আছে, বাকিটা আল্লাহর কাছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় সবুজ সঙ্কেত পেয়ে কুমিল্লা
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য কাওসার জামান বাপ্পি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে
নির্বাচনে অংশগ্রহনের আভাষ পোষ্টার ফেষ্টুন করে প্রতিদ্বন্দ্বীতার কথা
জানান দেন। তিনি ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় অংশ নেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে
কর্মসূচি পালন করেন। নানাভাবে তিনি কুমিল্লার মানুষের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, কুমিল্লার মানুষ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
পরিবর্তন চায়। সে কারণেই আমার মাঠে নামা। দল যদি নির্বাচনে আসে তাহলে
মনোনয়নের বিষয়ে আমি আশিাবাদি।
এ দিকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির
সাধারণ সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন গ্রুপের পক্ষ থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ
জেলা বিএনপির সদস্য কাওসার জামান বাপ্পি নাম প্রতিদ্বন্দ¦ীতায় এককভাবে
থাকলেও নতুন প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের
সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। দল নির্বাচন করলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন, দল না
নির্বাচন করলেও তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার কথা স্পষ্ট ভাবে
জানিয়েছেন। নিজাম উদ্দিন কায়সার জানান, যেহেতু নতুন নির্বাচন কমিশন এসেছে
আমি আশাবাদী। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরী করবেন এবং
আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। বিএনপির একটি গ্রুপ সরকারী দলের সাথে
আঁতাত করে ঠিকাদারি কাজ করার পাশাপাশি নানাভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের
মামলা হয়রানীতে সহযোগীতা করে আসছে। বিএনপির এই সরকারি দল গ্রুপটিকে প্রতিহত
করতে বিএনপির মূল গ্রুপ এখন মরিয়া।
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অন্য
প্রার্থীদের মধ্যে নাগরিক ফোরামের কামরুল আহসান বাবুল, স্বতন্ত্র প্রার্থী
মেজর মামুনুর রশিদ মামুন প্রমুখের নাম শুনা যাচ্ছে।
নির্বাচনের তফসিল
ঘোষনার পরই নির্বাচনের আাচরণ বিধি মানা নিয়ে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন
নিবাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ শাহেদুন্নবী চৌধুরী। তিনি সাফ জানিয়েছেন,
আচরন বিধি নির্বাচনী আইনের অংশ। সকল প্রার্থীকে নির্বাচনী আচরণ বিধি মানতে
হবে। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিতি করার জন্য সর্বোচ্চ
তৎপর।