তানভীর দিপু:
চতুর্থ
শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে কুমিল্লায়
মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করেছে জেলা
প্রশাসন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাধারণ পাঠ্য এর পাশাপাশি শুধু কম্পিউটার
শিক্ষা নয়, রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং শিখানোর কার্যক্রম চলছে প্রতিটি
উপজেলায়। শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব এবং রোবটিক্স ক্লাব গঠনের মধ্য দিয়ে
উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জনে সুযোগ করে দিয়েছে
জেলা প্রশাসন। ১৭টি উপজেলার ২০৮ টি প্রতিষ্ঠানের দুই হাজারেরও বেশি
মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যে রোবটিক্স ও প্রোগ্রামিং কর্মশালায়
প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়সহ ৯৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে
রোবটিক্স ক্লাবকে ফ্যাবল্যাবে রূপান্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্র্থীার কাজ শিখতে
ও করতে পারছেন। অন্যদিকে এক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চতর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
প্রশিক্ষক হিসেবে বুয়েট, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়,
ড্যাফোডিলসহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের প্রযুক্তি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ
নেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, চতুর্থ
শিল্প বিপ্লবে দক্ষ মানবসম্পদক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য
প্রযুক্তিতে বিশেষ করে বিজ্ঞান ও রোবটিক্স. প্রোগ্রামিং ও ফ্রি ল্যান্সিং
বিষয়ে নানান কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের কারণে এখন দুই শতাধিক
শিক্ষার্থী প্রাথমিক রোবট তৈরী করতে পারে। এ উদ্যোগকে সফল করতে পারলে
প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের উন্নত সমৃদ্ধ যে বাংলাদেশ বিনির্মানে যে দক্ষ
মানব সম্পদের কথা বলেছেন -তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আমি বিশ^াস করি এই
প্রকল্প অন্যান্য জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে দিলে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরীতে আরো
ভূমিকার রাখবে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছর
ধরেই কুমিল্লার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বাছাই করে শেখ রাসেল
ডিজিটাল ল্যাব এবং রোবটিক্স ক্লাব গঠনের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের
প্রাথমিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। প্রথমে কুমিল্লা মহানগরীর স্কুল গুলোকে নিয়ে
শুরু করলেও পরে ধাপে ধাপে এসব প্রকল্প ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে প্রতিটি উপজেলায়।
উপজেলা ভিত্তিক ক্লাবগুলোতেও দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ। শুধু
ছাত্র-ছাত্রী নয়, শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও একই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সরকারি
কর্মকর্তা ও কর্মচরিদেরও এসব প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।
অন্যদিকে
শুরুতেই কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ে এক ঝাঁক প্রযুক্তিজ্ঞাণ সম্পন্ন
শিক্ষার্থীকে দিয়ে পরিচালিত জেলা প্রমাসক কার্যালয়ের ফ্যাবল্যাবটি এখন
শিক্ষার্থীদেও আগ্রহের কেন্দ্র। বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষার্র্থী
প্রতিদিনই আসছেন এই ফ্যাবল্যাবে। যেখানে রোবট তৈরীর কর্মযজ্ঞ চলার পাশাপাশি
শেখানো হচ্ছে নানান কার্যক্রম।
কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের একাধিক
শিক্ষার্থী জানান, ল্যাবে না আসলে এত ছোট বয়সে রোবটিক্স কিংবা প্রোগ্রামিং
সম্পর্কে জানা সম্ভব হতো না। আমাদের যাদেও আগ্রহ আছে তারা এই ল্যাবে এসে
খুবই খুশি। এখানে আনন্দের সাথে রোবটিক্স এবং প্রোগ্রামিং শিখতে পারছি।
কুমিল্লা
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীরা খুবই আগ্রহ
নিয়ে রোবটিক্স এবং প্রোগ্রামিং শিখছে। আমি মনে করি কুমিল্লার শিক্ষার্থীরা
এক সময় বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত জ্ঞানে নেতৃত্ব দিবে।
দাউদকান্দি উপজেলা
চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সুমন বলেন, শিক্ষার্থীরা শুধু শিখছেই না, বরং
অেেনকেই এখন ফ্রিল্যান্সিং শিখে এবং করে আয় করতেও শুরু করেছে। কুমিল্লা
জেলা প্রশাসকের যে উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষার যে ফল তা ইতোমধ্যে
শিক্ষার্থীরা পেতে শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে,
শুধু প্রশিক্ষণ নয়- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে জেলার বেকারত্ব
দূরীকরণ এবং তরুল সমাজের কর্মসংসংস্থান সৃষ্টির দিকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
প্রায় ৫ শতাধিক তরুণকে ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইনিং, গ্রাফিক্স
ডিজাইনিং বিষয়ে উচ্চতর কোর্স শেষে পেওনিয়ার একাউন্টও খুলে দেয়া হয়েছে।