তানভীর দিপু ||
জাতীয়
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ। এ বছর জন্মবার্ষিকীর তিন
দিনব্যাপী মূল অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায়।
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি
হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। নজরুল
জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘বিদ্রোহী'র
শতবর্ষ’। দিবসটি উদযাপনে কুমিল্লায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
১৯২১
থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় এসেছিলেন ৫ বার।
তিনি যে ১১ মাস কুমিল্লায় অবস্থান করেছেন - সে সময়ের মধ্যে ছিলো কবির
জীবনের সবেচেয়ে মূল্যবান অধ্যায়। বিদ্রোহ, কবিতা, কারাবরণ, প্রেম- বিয়ে
এবং বিরহ কিছুই বাদ যায় নি এই সংক্ষিপ্ত সময়জুড়ে। কুমিল্লা শহর ও মুরাদ নগর
উপজেলার দৌলতপুরে রয়েছে কবির অসংখ্য স্মৃতি। তাই কুমিল্লাকে কবির জীবনের
অনন্য অধ্যায় হিসেবে মূল্যায়ণ করেন নজরুল প্রেমিরা।
গবেষকদের মতে,
১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কাজী নজরুল ইসলাম তার বিদ্রোহী কবিতাটি
লিখেন কলকাতায়। কবিতাটির প্রথম শ্রোতা ছিলেন কমরেড মুজফফর আহমেদ। মনে করা
হয়, নজরুল এই কবিতা লেখার পূর্বে কুমিল্লা থেকে মাত্র কলকাতায় ফিরে যান। ওই
সময় কুমিল্লার বিভিন্ন ঘটনা তাঁর অন্তর্জগতে দ্রোহের সৃষ্টি করে। তার
মধ্যে একটি- নার্গিসের সাথে সংসার জীবন শুরু হয়েও না হওয়া। তবে কবির
বিদ্রোহী জীবনের গাঢ় দাগকাটা অপর ঘটনাটি ওই সময়েরই বলে জোরালো ধারনা
গবেষকদের। জানা গেছে, ১৯২১ সালের ২১ নভে¤বর ব্রিটিশ নেতা প্রিন্স অব ওয়েলস
এর কলকাতায় আগমন উপলক্ষ্যে ভারতীয় কংগ্রেস হরতাল ডাকে। ওই হরতালে কবি নজরুল
গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে প্রতিবাদী গানে মিছিল করেন। এ অপরাধে রাজগঞ্জ থেকে
তাকে আটক করা হয়। এই ঘটনাই কবির বিদ্রোহী কবিতার প্রেক্ষাপটের অনেক
অনুসঙ্গেও একটি বলে মনে করেন গবেষকরা।
এবছর নজরুল জন্মবার্ষিকী
উপলক্ষ্যে জাতীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে কুমিল্লায়। ২৫ থেকে ২৭ মে তিন দিন ব্যাপি
অনুষ্ঠানের শুরু হচ্ছে আজ থেকে। ঐতিহাসিক কুমিল্লা টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান
মাহমুদ এমপি। সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানের
সভাপতিত্ব করবেন। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে অনুষ্ঠানটি শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে
স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর,
স্মারক বক্তব্য রাখবেন নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, কবিপৌত্রী খিলখিল
কাজী, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার,
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সিমিন হোসেন
রিমি এমপি এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল
হাসান ।
২৬ মে দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত
থাকবেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি আলহাজ¦ আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এবং সমাপনী
দিনে প্রধান অতিথি থাকবেন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ণ সমবায় মন্ত্রী মোঃ
তাজুল ইসলাম এমপি।
এদিকে কুমিল্লায় নজরুলকে নিয়ে জাতীয় উৎসব অনুষ্ঠিত
হওয়ায় খুশি কুমিল্লার নজরুল প্রেমি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ। নজরুলের
পদচারণায় ধন্য কুমিল্লায় নজরুল ইন্সটিটিউট কেন্দ্র তৈরীসহ নজরুল
স্মৃতিচিহ্ন রক্ষায় কাজ করেছেন সরকার তার পাশাপাশি এবার কুমিল্লাবাসী দাবি
একটি কাজী নজরুল ইসলাম সংস্কৃতি বিশ^বিদ্যালয়।
জেলা সাংস্কৃতিক
কর্মকর্তা সৈয়দ মুহম্মদ আয়াজ মাবুদ জানান, কুমিল্লা শহর ও মুরাদনগর উপজেলা
জাতীয় কবির স্মৃতি ধন্য। জাতীয় কবিকে ঘিরে এই জেলায় আলাদা একটি সাংস্কৃতিক
বলয়ও গড়ে উঠেছে। শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতির পাদপীঠ এই কুমিল্লায় তাই কাজী
নজরুল ইসলামের নামে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি বিশ^বিদ্যালয় গড়ে তোলার দাবি
জানাই।
কুমিল্লার অধিবাসী হেদায়েত উল্যাহ জানান, প্রাচীণ কুমিল্লার
শিক্ষা ও সংস্কৃতির যে ঐতিহ্য তার ধারাবাহিকতায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল
ইসলামের কুমিল্লায় আগমণ এবং এখানে তার শিল্পচর্চা সারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি
কর্মীদের আগ্রহের অন্যরকম কেন্দ্র। তাই এখানে কাজী নজরুল ইসলামের নামে
আমরা চাই এখানে একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি বিশ^বিদ্যালয় চাই। যেখানে শুধু
নজরুল নয়, সারা বিশে^র সংস্কৃতি নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণা হবে।
সাংস্কৃতিক
কর্মী আলমগীর কবির জানান, কুমিল্লায় নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি জাতীয় কবি
সম্পর্কে জানাতে হবে। শুধু জাতীয় উৎসব বা জন্মবার্ষিকী কিংবা
মৃত্যুবার্ষিকিতে -উৎসব অনুষ্ঠান নয় সারা বছরই নজরুল কেন্দ্রিক আয়োজন হওয়া
উচিত।
১৯৯২, ২০১৫ এরপর তৃতীয়বারের মত ২০২২ সালে নজরুল জাতীয় উৎসব কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
জানা
গেছে, কুমিল্লা নজরুল জন্মবার্ষিকীর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে সকাল সাড়ে
১০টায় আসন গ্রহণ করবেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ। ১১টায় প্রধান অতিথির আগমন, এর
এক মিনিট পর জাতীয় সঙ্গীত, ১১টা ৫ মিনিটে পবিত্র ধর্মগ্রন্থসমূহ পাঠ, ১১টা
১০ মিনিটে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। সোয়া ১১টায়
স্মারক বক্তব্য রাখবেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন
ভৌমিক, ১১টা ২৫ মিনিটে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কবিপৌত্রী খিলখিল কাজী।
সাড়ে ১১টায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখনে কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর
মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, ১১টা ৩৫ মিনিটে বিশেষ অতিথির বক্তব্য
রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি
সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি। ১১টা ৪০ মিনিটে সভাপতির বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। পৌনে ১২টায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য
রাখবেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। ১১টা ৫০ মিনিটে
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
এমপি।