স্টাফ
রিপোর্টার ॥ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আজ কিভাবে
বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠল, বাজেট অধিবেশনে দেশের সেই
উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতি আর বদলে যাওয়া বাংলাদেশের বাস্তবচিত্র
বৃহস্পতিবার প্রত্যক্ষ করল দেশবাসী। ভয়াল করোনা মহামারী মোকাবেলা করে
বাংলাদেশের পাল্টে যাওয়ার চিত্র এবং একটি সাহায্য গ্রহীতা দেশ থেকে দাতা
দেশে পরিণত হওয়া, দেশে উন্নয়নের সরব বিপ্লবের চিত্রও ফুটে উঠেছে সরকারের
বর্তমান মেয়াদের চতুর্থতম প্রস্তাবিত বাজেটে।
তথ্য-প্রযুক্তির পূর্ণ
ব্যবহার আর প্রাণঘাতী করোনার পূর্ণ সতর্কতা মেনে বৃহস্পতিবার দেশের ৫১তম
বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে গত দুই বছর করোনার
কারণে বাজেট উপস্থাপনে দেড় ঘণ্টার মধ্যে শেষ হলেও বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর
প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন সম্পন্ন করতে প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা সময় লেগেছে।
স্বাধীনতার
পর জাতীয় সংসদে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন
বঙ্গবন্ধু সরকারের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। দেশের প্রথম বাজেটের আকার
ছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
দেশের ৫১তম বাজেট উপস্থাপন করলেন। দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এই বাজেটের আকার
দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট।
দেশের ৫১তম বাজেটের
শিরোনাম রাখা হয়েছে- ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়
প্রত্যাবর্তন’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর এটি দেশের ৫১তম এবং পাঁচ মেয়াদে
আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম বাজেট। আর বর্তমান সরকারের এটি টানা ১৪তম এবং
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি চতুর্থ বাজেট উপস্থাপন।
স্পীকার
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় বর্তমান
সরকারের মেয়াদের চতুর্থ বাজেট পেশ করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে
স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ নিশ্চিত করে অধিবেশন পরিচালনা করায় বাজেট পেশকালে
অধিবেশনে উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। বরং সর্বত্র ছিল কঠোর সতর্কতা। বেলা
তিনটার আগেই মুজিবকোর্ট পরিহিত অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রবেশ
করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
করোনা সংক্রমণ এখনও কিছুটা থেকে যাওয়ার
কারণে বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, রাষ্ট্রের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে এবারও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে করোনা নেগেটিভ
সার্টিফিকেট থাকা সাংবাদিকরা অধিবেশন সরাসরি কাভার করতে পেরেছেন। তবে
বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ
প্রত্যক্ষ করেন। অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত অর্থবিলে স্বাক্ষর করেন
তিনি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপনের আগে তা অনুমোদন করেছে
মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভার কক্ষে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বিশেষ এই বৈঠক হয়। বৈঠকে
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী ও
প্রতিমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর এই বাজেট
প্রস্তাব ও অর্থবিল রাষ্ট্রপতির সই করার জন্য নেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ
আবদুল হামিদ বৃহস্পতিবার ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট এবং
২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করার সম্মতি দিয়েছেন।
বিকেল পৌনে তিনটায় জাতীয় সংসদ ভবনের অফিসে এ সম্মতি প্রদান করেন। এ সময়
অন্যদের মধ্যে চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব আবু হেনা মোৎ
রহমাতুল মুমিন, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এবং
বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর সংসদ
অধিবেশনে বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী।
সংসদে সংক্ষিপ্ত পরিসরে
উত্থাপিত লিখিত বাজেট বক্তৃতা ছিল ২০৮ পৃষ্ঠার। গত কয়েক অর্থবছরে বাজেট
পেশের পাশাপাশি তার চুম্বক অংশ পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় দেখানো হলেও গত
বছর অর্থমন্ত্রী পাঠ না করে প্রায় পুরো অংশই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন
করেন। কিন্তু এবার অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা ও ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে প্রায়
সোয়া দুই ঘণ্টা সময় ধরে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। সরকার ও বিরোধী দলের
সংসদ সদস্যদের তাঁকে বারবার টেবিল চাপড়িয়ে উৎসাহিত করতে দেখা গেছে। অর্থবিল
পেশের পর স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুলতবি
ঘোষণা করেন।
‘মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়াবে’:
আগামী ২০২২-২৩
অর্থবছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে তিন হাজার সাত মার্কিন ডলার হবে
বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অর্থমন্ত্রী
বলেন, ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে
বাংলাদেশ পার করছে অভাবনীয় এক সোনালি অধ্যায়। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য
দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা।
বর্তমান সরকারের অর্জন
সম্পর্কে বক্তব্য দিতে গিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, মাথাপিছু আয় ২০০৫-২০০৬
অর্থবছরে ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, যা বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ২ হাজার ৮২৪
মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
অনুদান বাদে এবারের বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫
হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট
ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০
শতাংশের সমান।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার
বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের
আকার জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।
পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১
হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি
টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও
শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।