ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধস
Published : Tuesday, 21 June, 2022 at 12:00 AM
প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধসচট্টগ্রামে প্রতি বর্ষায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। তাল তাল মাটির নিচে চাপা পড়ে বহু মানুষের আর্তচিৎকার। ২০০০ সালের পর গত ২২ বছরে পাহাড়ধসে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই চট্টগ্রামে আবারও পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন আকবরশাহ থানার ১ নম্বর ঝিল এলাকায় এবং দুজন মারা গেছেন বিজয়নগর এলাকায়। গুরুতর আহত আটজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় ঘটে পাহাড়ধসের এই মর্মান্তিক ঘটনা।
চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের বড় একটি ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের জুন মাসে। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিল ১২৭ জন। আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালে। সেই ঘটনায় চার সেনা কর্মকর্তাসহ ১৬৮ জনের অকালমৃত্যু হয়। এর আগে-পরেও অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি বড় ঘটনার পরই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কারিগরি কমিটি করা হয়েছে। প্রতিটি কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পাহাড়ধসে মর্মান্তিক মৃত্যু রোধে বহু সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু সেসব সুপারিশের বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে। আর তাই পাহাড়ধস থামছে না, মর্মান্তিক মৃত্যুও রোধ হচ্ছে না। ২০১৭ সালের ঘটনার পর উচ্চ পর্যায়ের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, ৯ মাস কাজ করার পর সেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তাতে পাহাড়ে করুণ মৃত্যুর জন্য মূলত পাহাড় বা পাহাড়ের ঢালে অবৈধ বসতি নির্মাণকে দায়ী করা হয়েছে। অন্য কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছপালা কেটে পাহাড় ন্যাড়া করে দেওয়া, কংক্রিটের দেয়াল বা প্রতিরক্ষা বেষ্টনী এবং পর্যাপ্ত নালা না থাকা ইত্যাদি। অন্য প্রতিবেদনগুলোতেও প্রায় একই কথা বলা হয়েছে।
জানা যায়, এক শ্রেণির সরকারি কর্মচারীর সহায়তায় কিছু প্রভাবশালী লোক পাহাড়ের নিচে সরকারি জমিতে খুপরি ঘর তৈরি করে ভাড়া দেয়। ভাড়া কম হওয়ায় দরিদ্র লোকজন সেখানে গিয়ে ভিড় জমায়। বর্ষায় বড় বৃষ্টিপাতের আগে কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে তাদের সরে যেতে বলেই তাদের দায়িত্ব সারে। অনিশ্চয়তা কিংবা ঘরের মালপত্র চুরি হওয়ার ভয়ে মাইকিং শুনেও অনেকের পক্ষে ঘরদোর ছেড়ে অন্যত্র সরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাদেরই ভাগ্যে নেমে আসে এমন করুণ মৃত্যু। অথচ আমাদের প্রশাসন দীর্ঘদিনেও বস্তি নির্মাণের এই অবৈধ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারেনি। এখনো চলছে অবাধে পাহাড়ের বৃক্ষ নিধন এবং মাটি কেটে ইটখোলাসহ নানা স্থানে নিয়ে যাওয়া। যাদের এসব নিয়ন্ত্রণ করার কথা, কোনো এক অজানা কারণে তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করে। সরকারি অনেক সংস্থার বিরুদ্ধেও পাহাড় কাটার অভিযোগ পাওয়া যায়। এদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অনৈতিকতা এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের শিকার হয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষ।
আমরা চাই, বিভিন্ন সময়ে গঠন করা কমিটিগুলোর সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। পাহাড় কাটা এবং অবৈধ বসতি নির্মাণ কঠোরভাবে বন্ধ করা হোক। হতাহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।