রেজাউর করিম শামিম ।।নজরুলকে
মহান করতে গিয়ে,প্রাসঙ্গিক অন্যান্যদের কলঙ্কিত করা যাবেনা-এ দাবি তুলে
ধরা হয়েছে কুমিল্লা থেকে।প্রফেসার আনোয়ারুল হক রচিত সাম্প্রতিক আলোচিত
গবেষণাগ্রন্থ ‘নজরুল নার্গিস প্রমীলা নবমূল্যায়ন‘গ্রন্থটির উপর আয়োজিত
পাঠ-প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে গ্রন্থটির রচয়িতাসহ বিভিন্ন আলোচক এই দাবি তুলে
ধরেন।
১৭জুন,কুমিল্লায় কবি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত
এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচক ছিলেন,কবি ও প্রাবন্ধিক,পাবলিক
সার্ভিস কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মনজুরুর রহমান,কবি-ছড়াকার ও
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জহিরুল হক দুলাল,কবি ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী
এবং প্রাবন্ধিক ও অধ্যাপক,ড. মেহেদি হাসান।
প্রফেসার আনোয়ারুল হকের
লেখা গ্রন্থটিতে উত্থাপিত বিভিন্ন ব্যতিক্রমি বক্তব্য তুলে ধরেন মনজুরুর
রহমান।এ প্রসঙ্গে নজরুল জীবনিকার কমরেড মোজাফ্ফর আহামদের মূল বইটি প্রদর্শন
করেন এবং সেখানকার বিতর্কীত অংশ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি, নজরুলের জীবনে
কুমিল্লার ঘটনা প্রবাহের গুরত্ব অত্যন্ত প্রাঙ্গিক বলে মন্তব্য
করেন।বলেন,তিনি কুমিল্লাতে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনকালে নজরুলকে
কুমিল্লায় স্বরণীয় করে রাখার চেষ্টা করেছেন।তিনি, বিশিষ্ট নজরুল
গবেষণক,জাতীয় ব্যক্তিত্ব ড. রফিকুল ইসলামের সরাসরি ছাত্র ছিলেন।সে সুবাধে
ওনাকে তিনি কুমিল্লা নিয়ে আসেন।পর্বতীতে কুমিল্লাতে নজরুল ইসস্টিটিউট
কেন্দ্রের মতো বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে।এক্ষত্রে স্থানীয়
সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের অবদান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।তিনি
বলেন,নজরুলের জীবনের দু‘টি বিবাহের প্রভাব-গুরত্ব অস্বীকার করার কোনই সুযোগ
নেই।কাকতালীয়ভাবে এই গুরত্বপূর্ন ঘটনাগুলো স্মরণীয় স্থান কুমিল্লা। যার
জন্যে এসম্পর্কীত যেকোন বিভ্রান্তি খন্ডনের প্রাথমিক দায়ও এখানকার
সাহিত্য-প্রেমিকদের নিতে হবে।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি
বিশ্বজিৎ চৌধুরী তাঁর আলোচনায় বলেন,কবি-প্রন্ডিত মহিতলালসহ অনেকেই বোধগম্য
কারনে যেমনি নজরুলকে দেখতে পারতেন না বলে যেমন নজরুলের সমালোচো করতেন।
তেমনি কমরেড মোজাফ্ফরও তার বন্ধু, নজরুল তাঁর নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েন বলে
নজরুলের বিবাহ,নার্গিস,আলী আকবরসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো বিতর্কীত করে তুলার
প্রয়াস পান।তিনি বলেন,পুর্নাঙ্গ নজরুলকে তুলে ধরতে হলে সব
ত্রুটিবিচ্যুটিসহই মূল্যয়ন করতে হবে।নজরুলকে মহান করতে গিয়ে, অন্যদের
বিতর্কীত করা যাবেনা।
কবি,ছড়াকার,কুমিল্লা সর্বজন পরিচিত সাংস্কৃতিক
ব্যক্তিত্ব জহিরুল হক দুলাল বিভিন্ন ঘটনাবলি তুলে ধরে বলেন,নজরুলকে নিয়ে
কুমিল্লার অহংকার অকারণ নয়। আলী আকবর আর কমরেড মোজাফফরের জন্যেই নজরুরের
কুমিল্লা উপস্থিতি উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে।তবে,মোজ্জাফরের ‘স্মৃতি কথায়‘আলী
আকবরসহ অন্যান্যদের খল নায়ক হিসাবে চিহিৃত ও বিতর্কীত করা সুবিবেচনা প্রসূত
নয়।তিনি নজরুল জীবনী লিখেছেন অথচ,নজরুলকে জিজ্ঞাসা করেননি,তিনি নার্গিসকে
বিয়ে করেছেন কি করেননি। তিনি ঐ বিয়ে,আলী অকবর,নার্গিসের চরিত্র সম্পর্কে
বিরূপ মন্তব্য করেছেন। কিন্তু তিনি দৌলতপুর যাননি।অনেক নজরুল জীবনীকারও
তাঁকে অন্ধের মতো অনুস্মরণ করেছে।এমনকি একজন,এক কবিকে নিয়ে লিখতে গিয়ে
দুরদরান্ত ঘুরে বেড়িয়েছেন অথচ নজরুলের বেলায় তিনি কুমিল্লা পর্যন্ত আসতে
পারেন নাই।তাঁরা যত বিখ্যাত ব্যাক্তিই হননা কেন,তাঁদের পরিমিতিবোধের অভাব
রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রবন্ধকার অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসান
বলেন,কমরেড মোজাফফরের লেখা অনুস্নরণ করে ‘নজরুল নার্গিসকে বিয়ে করেছেন কি
করেন নাই, তা নিয়ে দু‘টি ঘরোনার সৃষ্টি হয়েছ।কিন্তু তাঁদের মন্তব্যের
স্বপক্ষে প্রামানীক দলিলপত্র নেই। তিনি, প্রফেসার আনোয়ারুল হকের বইটিতে আলী
আকবর আর নার্গিসের স্বামী আজিজুল হাকিমের লেখালেখি বা প্রকাশন নিয়ে নতুন
যে সব তথ্য এসেছে,সেগুলো নিয়ে পুর্ণাঙ্গ কাজ করার অবকাশ রয়েছে।এতে তাঁদের
সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর হয়ে নব মূল্যয়ানের সুযোগ রয়েছে।
গ্রন্ঞকার,গবেষক
প্রফেসার আনোয়ারুল হক তাঁর বক্তব্যে, ভবিষ্যতে কোন জীবনিকার নজরুলের
কুমিল্লা এবং নার্গিস, তাঁদের বিয়ে ইত্যাদি বিষয়ে কোন মন্তব্য লিখতে গেলে,
অকাঠ্য যুক্তি-প্রমান ছাড়া এবং কুমিল্লার দৌলতপুরসহ সংশ্লিষ্ট জায়গা
সরজমিন প্রত্যক্ষ না করে যেন কিছু না লেখা হয়-সেই তাঁর দাবী জানান।
প্রফেসার
আনোয়ার,মোজাফফর আহাম্মদের আলোচিত গ্রন্থ ‘স্মৃতি কথা“য় যেসব বিরূপ
মন্তব্য-বক্তব্য তুরে ধরা হয়েছে।সেগুলোর প্রতিটি খন্ডনার্থে বিভিন্ন যুক্তি
তথ্য-প্রমানাদিসহ বক্তব্য তুলে ধরেছেন। সেগুলো বৃহত্তর পরিসরে আলোচনার
দাবী।
মনোজ্ঞ এই অনুষ্ঠানে কোন সভাপতি বা প্রধান অতিথি- এধরনের প্রথাগত
কোন আনুষ্ঠানিকতা ছিলোনা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন,রুবেল কুদ্দুস।পাঠ
প্রতিক্রিয়া যারা ব্যাক্ত করেন তাদের মধ্যে ছিলেন,কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক
আবুল কাসেম হৃদয়,নাট্যজন শাহজাহান চৌধুরী,হালিম আবদুল্লাহ,মাসুদ রানা
চৌধুরী,রতন ভৌমিক, আবু ইউসুফ,খলিলুর রহমান শুভ,রাহুল তারন পিন্টু,অধ্যাপক
রীতা সরকার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলো,ছোটগল্পের আসর ও মৃত্তিকা আবৃত্তি সংগঠক। সহযোগিতায় ছিলো জোড়া শালিক।