শান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
জাতীয়
কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানটি ১১
জ্যৈষ্ঠ থেকে ১৩ জ্যেষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ কুমিল্লায় যথাযোগ্য মর্যাদায়
উদযাপিত হলো। তাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে তৃপ্ত। আমরা অর্থাৎ কুমিল্লাবাসী
নজরুলকে নিয়ে ভীষণভাবে মাতামাতি করে থাকি। কারণ, কবি যে আমাদের একান্ত
আপনজন। তিনি ১৯২১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি এসেছিলেন, তারপর ১৯২৩ সালের
ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচবার এসেছেন। আনুমানিক সময় অর্থাৎ দিন গণনায় ১১ মাসের
অবস্থানের কথা বলে থাকি। আমি মনে করি, তিনি কুমিল্লার দু’বছর নয় মাস
অবস্থান করেছিলেন, তবে মাঝে মাঝে স্থানান্তরে যাতায়াত করেছেন মাত্র।
নজরুলকে
নিয়ে কুমিল্লাবাসীর এতটা উচ্ছ্বাস কেন ? আপন ভাবার কারণসমূহ কি ? এ সময়ের
মধ্যে তিনি কুমিল্লা হয়ে গিয়েছিলেন অথবা কুমিল্লা নজরুলের হয়ে গিয়েছিল।
দু’বিয়ে, দু’বার গ্রেপ্তার, সমকালীন কুমিল্লার গুণিজনদের সঙ্গে সখ্যতা,
রাজনীতিতে দীক্ষাগ্রহণ, সঙ্গীত জীবনের বিকাশ এবং সর্বজনীন পরিচিতির বলয়টা
তখন ব্যাপকতা লাভ করেছিল। এজন্যই হয়ত কুমিল্লাবাসী নজরুলকে নিয়ে এত
মাতামাতি।
যদি কুমিল্লার মুরাদনগর দৌলতপুর নিবাসী আলী আকবর খান নজরুলকে
কুমিল্লায় নিয়ে না আসতেন, নিয়ে এসে কান্দিরপাড়ের ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের
বাসায় না উঠতেন, শুধুমাত্র দৌলতপুরে দু’মাস কাটিয়ে জীবননাট্যের ঘটনা ঘটিয়ে
কলকাতায় ফিরে যেতেন, তাহলে কুমিল্লাবাসী কতটা নজরুলকে জানত ? আবার নজরুল
যদি আলী আকবর খানের সকল শর্ত মেনে নার্গিসকে বিয়ে করে দৌলতপুর থেকে যেতেন,
তাহলে আমরা কতটুকু নজরুলকে জানতাম ? এসব আলোচনা এখন বাতুলতা মাত্র। কিন্তু
এরূপ ঘটনা ঘটতে পারত, যদি শুধুমাত্র নার্গিসের প্রতি নজরুলের ভালো
লাগা-ভালোবাসা-প্রেম আবেগজনিত উচ্ছ্বলতায় ভরপুর হয়ে উঠত। কিন্তু ঘটনা
প্রবাহে আজ মনে হয়, ক্ষণিকের উত্তেজনা নজরুলকে উন্মাদ করে তুলতে পারেনি।
ভালোবাসার রশিটা ছোট, প্রেমের বাঁধনটা সুদূরপ্রসারী।
আমাদের সৌভাগ্য আলী
আকবর খান নজরুলকে যে উদ্দেশ্যেই কুমিল্লায় এনেছিলেন, আমরা চিরকালের জন্য
কবিকে পেয়ে গেছি। আলী আকবর খান নিজের মতো করে এককভাবে পেতে চেয়েছিলেন, তাই
তিনি কবিকে হারিয়ে ফেলেছেন। কুমিল্লাবাসী না চাইতেই কবিকে পেয়ে গেছে
বিধাতার আশীর্বাদের মতো।
যদি নজরুল কুমিল্লায় না আসতেন, কুমিল্লাবাসী
অর্থাৎ আমরা তাঁকে পাঠ্যপুস্তকেই খুঁজতাম, বাড়ির আঙ্গিনায় তাঁকে অভ্যর্থনা
জানাতে সুযোগ পেতাম না। এজন্য আজ নজরুল যেন শুধুমাত্র একান্ত আমাদেরই, অন্য
কারও নয়।
নজরুল ইসলাম কুমিল্লায় দ্বিতীয়বার এলেন ১৯২১ সালের নভেম্বরে,
কলকাতা চলে গেলেন ডিসেম্বরের শেষ দিকে, গিয়েই তিনি তাঁর কালজয়ী অমর কবিতা
‘বিদ্রোহী’ লিখলেন। তিনি যদি ‘বিদ্রোহী’ কবিতা না লিখে বাকীসব
সাহিত্যসম্ভার রচনা করতেন, তাহলে কবিকে আমরা কীভাবে বা কতটুকু মূল্যায়ন
করতাম ?
রবীন্দ্র বলয়ে এবং তাঁর প্রভাবিত কবিদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ
দত্ত (১৯৮২-১৯২২), অক্ষয় কুমার বড়াল (১৮৬০-১৯১৯), যতীন্দ্রনাথ বাগচী
(১৮৭৮-১৯৪৮), যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত (১৮৮৭-১৯৫৪), কুমুদরঞ্জন মল্লিক
(১৮৮২-১৯৭০), মোহিতলাল মজুমদার (১৮৮৮-১৯৫২) প্রমুখ।
নজরুলের পূর্বসুরী
কবিরা কম প্রতিভাবধর ছিলেন না। অপরদিকে তিরিশোত্তর কবি সমাজ, তাঁদের মধ্যে
জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-১৯৬০), বিষ্ণু দে
(১৯০৯-১৯৮২), অমিয় চক্রবর্তী (১৯০১-১৯৮৭), বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪) প্রমুখ
কবিরাও তো প্রতিভাধর ছিলেন এবং কবিতাঙ্গনে স্বকীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম
হয়েছিলেন। ভাবের দিক থেকে পাশ্চাত্যের একধরনের যন্ত্রণার সাথে প্রাচ্যের
প্রেম-প্রকৃতি-সমাজ মিশ্রিত হয়ে রবীন্দ্র-বিরোধী মানসিকতায়
রবীন্দ্র-পরিমণ্ডলে বসবাস করে এবং আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নিজেদের স্থান নির্মাণ
করেছিলেন তাঁরা। সেকালে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনও (১৯০৩-১৯৭৬) কবিতা রচনায়
নিজের স্থান করে ছিলেন-রবীন্দ্র-প্রভাবিত নয়, রবীন্দ্র বিরোধীও নয়।
তিরিশোত্তর কবি সমাজের সদস্যও নয়- কেবল লোক ঐতিহ্যের নবরূপায়ণে নতুন সুর
সংযোজন করে স্বাতন্ত্রিক হলেন। এতকিছু বিশ্লেষণের পরও ‘রবীন্দ্র-বিরোধিতার
ক্ষেত্রে প্রথম বলিষ্ট কবিকন্ঠ তাঁরই (নজরুলেরই)।’
বুদ্ধদেব বসু বললেন-
‘রবীন্দ্রনাথের
পরে বাংলা ভাষায় তিনিই (নজরুলই) প্রথম মৌলিক কবি। ...নজরুল ইসলামকে মনে হয়
রবীন্দ্রনাথের পরে অন্য একজন কবি। ... কোনো রকম সাহিত্যিক প্রস্তুতি না
নিয়ে শুধু আপন স্বভাবের জোরেই রবীন্দ্রনাথের মুঠো থেকে পালাতে পারলেন তিনি,
বাংলা কবিতার নতুন রক্ত আনতে পারলেন’।
তা কীভাবে সম্ভব হয়েছিল ? যদি
নজরুল ‘বিদ্রোহী’ কবিতা না লিখতেন, তাহলে তাঁকেও রবীন্দ্র-বলয়ের অন্যতম কবি
হিসেবেই গণ্য করা হতো। নজরুল যে ‘মৌলিক কবি’, ‘অন্য একজন কবি’ তার মূলে যে
অন্তর্নিহিত ভাববৈচিত্র্যের সমন্বিত আদর্শটি বিরাজিত, তাহলো কবির আজন্ম
লালিত ‘বিদ্রোহী’ সত্তা।
নজরুল ইসলাম নিপীড়িত সমাজ ও জনমানসের
প্রতিভূরূপে বিদ্রোহী সত্তার উদ্বোধন ও জয় ঘোষণা করেছেন। তাঁর বিদ্রোহের
লক্ষ্য সামাজিক অসাম্য ও অত্যাচারের অবসান। তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতাতে
চিন্তাধারার আতিরেক তরলতা, প্রকাশের অসংযম ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও ভাষা
বলিষ্ঠ, বেগমান ও স্পন্দিত। প্রতীকী অর্থে নজরুলের কবিসত্তা সামাজিক জাগরণ ও
সমাজসত্তার বিপ্লবী চেতনার প্রতিনিধি। বাংলা কবিতায় নজরুলই প্রথম সচেতন
রাজনৈতিক মেজাজ আনতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। স্বদেশি অনুপ্রেরণা, শোষণ মুক্তির
উদাত্ত আহবান প্রভৃতি নজরুলের কবিতার ধ্বনি এবং এই বোধের দ্বারা অনেকেই
পরবর্তীতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
একসময় ভাবি, নজরুল যদি কুমিল্লায় না
আসতেন তাহলে এই নজরুল কি এমনটি হতে পারতেন ? আমরাও কি তাঁকে এমনভাবে
চিনতে-জানতে-বুঝতে পারতাম ? কুমিল্লায় নজরুলের আগমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
আর বিকশিত নজরুলের জন্য অপার উন্মুক্ত সিংহদ্বার।
অন্যদিকে ‘বিদ্রোহী’
কবিতা না লিখে অন্যান্য সৃষ্টির সম্ভার হয়ত বা সমকালীন কবিদের কাতারেই
রবীন্দ্র বলয়ের মধ্যে আটকে থাকতেন। তাঁর জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী হয়ত
রবীন্দ্রনাথের মতো পালিত হতো না। শুধুমাত্র বিদ্রোহী কবিতাই নজরুলকে বাংলা
সাহিত্যে করে তুলেছে ‘অদ্বয় কূটাভাস’।
তাই আবারও মনে প্রশ্ন জাগে-নজরুল
যদি শুধুমাত্র ‘বিদ্রোহী কবিতাই লিখতেন, অন্যকোনো সাহিত্য রচনা না করতেন,
তাহলে আমরা অর্থাৎ বাংলাভাষা প্রেমীরা তাঁকে কীভাবে মূল্যায়ন করতাম ?
এককথায় বলা না গেলেও সাহস করে বলতে পারি- নজরুল বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী
কবি’ হিসেবে নিজের অধিষ্ঠানটি দখল করতে সক্ষম হতেন। কারণ, সমকালে বা তার
পূর্বে অথবা পরে এরূপ একটি কবিতা বাংলা সাহিত্যে রচিত হয়নি। কেউ রচনা করতে
পারেননি। তাহলে এই কবিতার মধ্যে আছেটা কী।
আমি সমগ্র মহাভারত থেকে মাত্র
দুটি শব্দ সংগ্রহ করে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শক্তিমত্তার চিত্রটি তুলে ধরতে
চাই। মহাভারতের দুটি শব্দ হলো- ‘গাণ্ডীব’ ও ‘একঘ্নী’।
আমরা জানি
মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথা আছে। এই যুদ্ধ হয়েছিল জেঠতাত ও খুড়তাত
ভাইদের মধ্যে, রাজা শান্তনুর দু’পুত্র- ধৃতরাষ্ট্র এবং পাণ্ড। ধৃতরাষ্ট্র
জন্মান্ধ। তাই পিতার মৃত্যুর পর জ্যেষ্ঠপুত্র সিংহাসনে আরোহন করার কথা।
কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হওয়ায় রাজ্যের রাজা হলেন পাণ্ডু। ধৃতরাষ্ট্রের একশত
পুত্র, পাণ্ডুর পাঁচপুত্র। ধৃতরাষ্ট্র জীবিত থাকতেই পাণ্ডুর মৃত্যু হয়।
তখন ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ররা জানাল যে, তাদের পিতাই বৈধ সিংহাসনের অধিকারী
ছিলেন, তিনি অন্ধ বলে বঞ্চিত হয়েছেন, এখন কাকা পাণ্ডু মৃত্যুবরণ করায় আমরাই
সিংহাসনের অধিকারী। পাণ্ডুর ছেলেরা বললেন- যেহেতু আমাদের পিতা রাজা ছিলেন,
তাই আমরাই তাঁর অবর্তমানে সিংহাসনের অধিকারী। সুতরাং যুদ্ধ অর্থাৎ
কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ। এ যুদ্ধের পরিণতিতে পাণ্ডুর তৃতীয় পুত্র অর্জুন
শ্রেষ্ঠ বীর হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছিলেন। তিনি যে ধনুক দিয়ে যুদ্ধ করে
শ্রেষ্ঠ বীর খেতাবধারী হলেন, সেই ধনুকের নাম ‘গাণ্ডীব’। তাই আমি বলতে চাই,
নজরুল বাংলা সাহিত্য জগতের কবিতাসাম্রাজ্যে যুদ্ধ করে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা
দিয়ে আপন মর্যাদাপূর্ণ স্থান তথা ‘বিদ্রোহী কবি’ হতে সক্ষম হয়েছিলেন।
‘বিদ্রোহী’ কবিতা মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের শ্রেষ্ঠ বীর অর্জুনের
‘গাণ্ডীব’ তুল্য। বাংলা সাহিত্যে নজরুল অর্জুনতুল্য এবং তার ‘বিদ্রোহী’
কবিতা ‘গাণ্ডীব’ স্বরূপ।
‘একঘ্নী’ শব্দের অর্থ অমোঘ ক্ষেপণাস্ত্র।
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পাণ্ডব পক্ষে যেমন শ্রেষ্ঠ বীর অর্জুন, তেমনই
কুরুপক্ষের শ্রেষ্ঠ বীর হলেন কর্ণ, মূলত তাঁরা একই মায়ের গর্ভের সন্তান। এ
ইতিহাস ভিন্ন। কর্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে শ্রেষ্ঠ বীর খেতাব পাবার জন্য
যুদ্ধের শেষদিকে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে। সেদিন তিনি অর্জুনকে
পরাস্ত বা হত্যা করতে পারলে তিনিই হবেন শ্রেষ্ঠ বীর। খুবই কঠিন ব্যাপার।
তাই তিনি তপস্যায় বসলেন ব্রহ্মাকে আরাধনা করার জন্য। একসময় ব্রহ্মা তুষ্ট
হয়ে কর্ণকে বললেন ‘আমি তোমার তপস্যায় মুগ্ধ, তুমি কি বর চাও ?’ কর্ণ বললেন,
‘দেবরাজ আমাকে এমন একটি বাণ (ক্ষেপণাস্ত্র) প্রদান করুন, যা দিয়ে একজনকে
অবধারিত হত্যা করতে পারি।’ ব্রহ্মা বললেন- ‘তা-ই হোক। আমি তোমাকে ‘একঘ্নী’
বাণ প্রদান করলাম। তা দিয়ে শুধুমাত্র একজনকেই হত্যা করতে পারবে।’ কর্ণ এ
অস্ত্র লাভে আনন্দিত হয়ে সযত্নে রেখে দিলেন এবং অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
অবর্তীণ হয়ে তা নিক্ষেপ করে অর্জুনকে হত্যা করে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তিনিই
হবেন শ্রেষ্ঠ বীর।
পৌরাণিককালে যুদ্ধের নিয়ম হলো সকাল বেলা নির্ধারিত
সময়ে যুদ্ধ শুরু হবে এবং বিকেলে নির্ধারিত সময়ে সেদিনের মতো যুদ্ধ ক্ষান্ত
বা পরের দিনের জন্য মূলতুবি থাকবে। আর প্রতিদিনের জন্য উভয়পক্ষ একজন
সেনাপতি নির্বাচিত করে দিবে। আর সেদিনের যুদ্ধে যদি কোনো পক্ষের সেনাপতি
নিহত হন, তাহলেই সামগ্রিকভাবে পরাজয় মেনে নিতে হবে। তাই একদিন পাণ্ডব
পক্ষের সেনাপতি হলেন হিড়িম্বা রাক্ষসীর পুত্র বীর ঘটোৎকচ। সেদিক ঘটোৎকচ
এমনভাবে যুদ্ধ শুরু করল, কুরুপক্ষ নিশ্চিত পরাজিত হবেই। কুরুপক্ষের
সেনাধ্যক্ষরা চিন্তিত হলেন, উপায় খুঁজতে শুরু করলেন। তাঁরা জানতেন কর্ণের
কাছে ‘একঘ্নী’ বাণ রয়েছে। তাই কর্ণকে বলা হলো তোমার ‘একঘ্নী’ বাণ এখনই
ঘটোৎকচকে নিক্ষেপ করো কর্ণ রাজী হচ্ছেন না। কারণ, তিনি শ্রেষ্ঠ বীর হওয়ার
জন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে অর্জুনকে নিক্ষেপ করবেন এবং শ্রেষ্ঠ বীর হবেন।
অন্যান্য সেনাধ্যক্ষরা বললেন- আজই যখন জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়ে যাচ্ছে, তুমি
অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছ কই ? শেষ পর্যন্ত এই ‘একঘ্নী’
বাণ ঘটোৎকচকে নিক্ষেপ করা হয়, অবধারিতভাবে ঘটোৎকচ নিহত হয়।
এ প্রসঙ্গে
বলতে চাই- নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা হলো ‘একঘ্নী’ বাণ। সময়ের দাবিতে এই
কবিতা শতবর্ষে বহুবার নিক্ষিপ্ত হয়েছে, তার উত্তাপে ব্রিটিশ দেশ ছেড়ে গেছে,
১৯৭১ সালে পাক হানাদারবাহিনী আত্মসমর্পণ করে কোনো প্রকারে প্রাণ নিয়ে
পালিয়েছে, যখনই মানবতা লাঞ্ছিত হয়েছে, অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা
করেছে মহাভারতের ‘একঘ্নী’ বাণের মতো ‘বিদ্রোহী’ নিক্ষিপ্ত হয়েছে, সবকিছু
ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে।
এইজন্যই বলছি, নজরুল যদি শুধুমাত্র ‘বিদ্রোহী
কবিতা লিখে আর কোনো সাহিত্য রচনা না করতেন, তাহলেও বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ
বীরের স্বীকৃতি লাভ করতেন। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনা ও প্রকাশের শতবর্ষ পূর্ণ
হয়েছে, হাজার বছর কেন যতদিন পৃথিবীর বুকে মানবতা লাঞ্ছিত হবে, অপশক্তি
অন্যায়-অত্যাচার করবে- ‘বিদ্রোহী’ ‘একঘ্নী’ বাণ হয়ে প্রতিরোধের ভূমিকায়
অবতীর্ণ হবে। ‘বিদ্রোহী কবিতা তা-ই কালজয়ী অমর কবিতা। বাংলা সাহিত্যের
‘গাণ্ডীব’ ও ‘একঘ্নী’ বাণ, নজরুল হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর।
জয় হোক ‘বিদ্রোহী’ কবিতা।