ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হচ্ছে মঞ্চ
Published : Thursday, 23 June, 2022 at 12:00 AM, Update: 22.06.2022 11:42:51 PM
পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হচ্ছে মঞ্চস্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দুই প্রান্তে জনসভা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুর আদলেই তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। মঞ্চের ঠিক সামনে পানিতে ভাসতে থাকবে বিশাল আকৃতির একটি নৌকা। তার পাশে ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। দেখে মনে হবে সেতুর পাশ দিয়ে বড় একটি নৌকা চলছে। ২৫ জুন সেতু উদ্বোধনের পর ব্যতিক্রমী এ মঞ্চে উঠবেন প্রধানমন্ত্রী। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
জেলা প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় জনসভায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রায় ১৫ একর জমির ওপর ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে বসানো হয়েছে ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। থাকবে দেড় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। সভাস্থলে ৫০০ অস্থায়ী শৌচাগার, ভিআইপিদের জন্য আরও ২২টি শৌচাগার, সুপেয় পানির লাইন, ৩টি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, নারীদের আলাদা বসার ব্যবস্থা, প্রায় ২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সভাস্থলে দূরের দর্শনার্থীদের জন্য ২৬টি এলইডি মনিটর, ৫০০ মাইকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নদীপথে আসা মানুষের জন্য ২০টি পন্টুন তৈরি করা হচ্ছে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জনসভায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হবে। পানি থেকে শুরু করে তাঁদের সব ধরনের সুবিধা দিতে তাঁরা প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ ছাড়া ২০ শয্যার একটি ও ১০ শয্যার আরও দুটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে সাজগোজের কাজ। জনসভা ঘিরে তিন বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে আলোকসজ্জার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সভাস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বিশাল এ আয়োজন ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ।
জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজ করছে ক্যানভাস বাংলাদেশ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নকর্মী কবির হোসেন বলেন, মঞ্চ তৈরির দায়িত্ব নেওয়ার পর দিন-রাত কাজ করছেন তাঁরা। ব্যতিক্রমী ওই মঞ্চ তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। মঞ্চের সামনে পানি থাকবে। তার ওপর ছোট–বড় বেশ কয়েকটি নৌকা ভাসতে থাকবে। মঞ্চটি পুরো পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হয়েছে। এখন চলছে সাজসজ্জার কাজ। শনিবারের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
জনসভাস্থলের দুই বর্গকিলোমিটার জায়গা তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পেয়েছে পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মোজ্জামেল হক বলেন, সভাস্থলে ওয়াচ টাওয়ার, এলইডি মনিটরসহ নিরাপত্তাবিষয়ক সব ধরনের কাজ তাঁরা শেষ করেছেন। স্মরণকালের সেরা আয়োজন হবে এখানে। জনসভায় আসা অতিথিদের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সভাস্থলে নারীদের বসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভিআইপি অতিথি, বিদেশি অতিথি ও কূটনীতিকদের জন্য আলাদা জোন করা হয়েছে। ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি ১০ ভাগ কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাবে।
ফায়ার সার্ভিসের ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সভাস্থল ও নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাঁদের ১০০ থেকে ১২০ জন ফায়ারম্যান কাজ করবেন। এ ছাড়া বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (এসএসএফ) তাঁদের যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই তাঁরা কাজ করবেন।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনে খুশি বাংলাবাজার ঘাট এলাকার বাসিন্দারা। তাঁরা দিন বদলের স্বপ্ন দেখছেন। ঘাট এলাকার ষাটোর্ধ্ব বাদশা হাওলাদার বলেন, ‘এই বয়সে পদ্মা সেতু দেখে মরতে পারবÑএর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। আমরা এলাকাবাসী খুবই খুশি। আমাদের এলাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন। আমরা তাঁকে দেখতে পাব, এটা মহা আনন্দের। আমরা তাঁর অপেক্ষায় আছি।’
বাংলাবাজার ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা (৭০) বলেন, ‘পদ্মা সেতু না থাকায় ঘাটে ফেরি পারাপারে আসা অ্যাম্বুলেন্সে বহু মানুষকে যথা সময়ে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে না পারায় চোখের সামনে মরতে দেখেছি। অনেক কষ্টে ছিলেন এ অঞ্চলের মানুষ। এখানে আর সেই কষ্ট থাকব না। দেশে উন্নয়ন হবে। শেষ বয়সে আইসা আমাগো মনের আশা পূরণ হইছে। আমরা খুবই খুশি।’