দেশের
সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ‘আওয়াম’ শব্দের অর্থ জনগণ আর লীগ অর্থ দল বা গোষ্ঠী।
সেই অর্থে আওয়ামী লীগের অর্থ জনগণের দল বা গোষ্ঠী। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন
জনকল্যাণের ব্রত নিয়ে ঢাকার রোজ গার্ডেনে যে দলটির আত্মপ্রকাশ, দুই যুগেরও
কম সময়ের ব্যবধানে সেই দলটির নেতৃত্বেই স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
এর চেয়ে বড়
অর্জন কোনো রাজনৈতিক দলের হতে পারে না। প্রতিষ্ঠাকালে দলটির নাম ছিল পূর্ব
পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীকালে দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি
বাদ দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করা হয়। তখনকার দিনে
এটি ছিল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত এবং এর মধ্যেই নিহিত ছিল দলটির রাজনৈতিক
আদর্শ।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে আসতে হয়েছে আওয়ামী
লীগকে। কিন্তু আলোর পথযাত্রী আওয়ামী লীগ সব বাধা-বিপত্তি মাড়িয়ে এগিয়ে
গেছে। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ দলের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাঙালির
মুক্তির সনদ ছয় দফা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি শাসকরা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলানোর চেষ্টা করে; কিন্তু প্রবল
গণ-আন্দোলনের মুখে সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে
২৫ মার্চ রাত থেকে গণহত্যায় নামে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। ২৬শে মার্চ
প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং এর পরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার
করা হয়। শুরু হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী
যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ১৯৭২ সালের ১০
জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে
দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালরাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের
শিকার হয়ে বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের এক বিশেষ
কাউন্সিল অধিবেশনে প্রবাসে নির্বাসন জীবনযাপনকারী শেখ হাসিনাকে
সর্বসম্মতভাবে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। অনেক বাধা উপেক্ষা করে সেই
বছরের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২১ বছর
পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠন করে। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮টানা
তিন মেয়াদে জনগণের ম্যান্ডেট পায় আওয়ামী লীগ।
৭৩ বছর বয়সের প্রাচীন দল
হলেও আওয়ামী লীগ এবং তার নবপ্রজন্মের নেতৃত্ব শক্তিশালী। জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা
অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হচ্ছে। জনগণের জন্য, জনগণ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
এই দলটির প্রতি এখনো জনগণের অবিচল আস্থা রয়েছে। সেই জন-আস্থার প্রতিদান
হিসেবে এই করোনাকালে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণে আরো সক্রিয় ভূমিকা নিক আওয়ামী লীগ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দলটির অসাম্প্রদায়িক অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক।