পদ্মা সেতুতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
Published : Thursday, 23 June, 2022 at 12:00 AM
বিডিনিউজ : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে শেষ মুহূর্তের নানা খুঁটিনাটি কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন নিয়োজিত কর্মীরা। শেষ মুহূর্তে কাজের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতীক ও লতাপাতায় আঁকা রেলিং ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো।
সেতুর প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী শনিবার উদ্বোধনের আগেই অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং বসে যাবে সেতুজুড়ে, আর এই কাজে কর্মীদের দম ফেলবার ফুসরত নেই।
তিনি জানান, দুবছর আগে কোভিড মহামারী এবং তারপর চলতি বছরে রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে বিদেশ থেকে রেলিং নিয়ে আসাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। পরে আকাশ ও সমুদ্র পথে রেলিং আনা হয় দুবাই ও যুক্তরাজ্য থেকে।“এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থাপন করা হচ্ছে রেলিং, বসানো হচ্ছে সিসি (ক্লোজড সার্কিক) ক্যামেরা,” বলেন শফিকুল ইসলাম।
বিশেষভাবে তৈরি করা এই অ্যালুমিনিয়ামের রেলিং ‘শত বছর টেকসই’ হবে মন্তব্য করে প্রকল্প পরিচালক বলেন, “নাট দিয়ে ফিটিং করা ১৫ ইঞ্চি উচ্চতার এই রেলিং স্থাপন করা হচ্ছে সেতুর দুই পাড়ের প্যারাপেট ওয়ালের উপরে। আশা করছি ২৪ তারিখ বিকালের মধ্যেও সব কাজ সম্পন্ন করা হবে।”
ইতোমধ্যে সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সেতুর রাস্তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ নানা বিলবোর্ডও বসে গেছে।
এদিকে, টোল আদায়ে যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে সেসব ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা পরীক্ষা করতে পদ্মা সেতুতে টোল দিয়ে গাড়ি পারাপারে মহড়াও সেরে নিয়েছে সেতু বিভাগ। যান চলাচল মনিটরিং করতে সেতু এলাকার পুরোটা জুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলেন জানান পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমান।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম আরও জানান, সেতুর দুই প্রান্তে মাওয়া জাজিরায় দুটি টোল প্লাজা আছে, আর প্রতিটিতে বুথ আছে ছয়টি করে। এর মধ্যে একটিতে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে টোল আদায় করার ব্যবস্থা থাকছে। বাকি পাঁচটিতে যানবাহন থামিয়ে হাতে টাকা সংগ্রহ করে চলাচলের অনুমতি দেবেন টোল আদায়ে নিয়োজিত কর্মীরা। চাহিদা অনুযায়ী বুথ সংখ্যা বাড়ানো হবে।
তিনি জানান, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় টোল আদায় করার বুথে গাড়ি থামবে না। এখানে টোল আদায়ের পদ্ধতি হলো – যানবাহন মালিকেরা অগ্রিম টাকা দিয়ে কার্ড সংগ্রহ করবেন, যানবাহন টোল প্লাজার কাছাকাছি এলে সেই কার্ড থেকে টাকা কেটে নেওয়া হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। তবে এ ব্যবস্থা চালু করতে মাস ছয়েক সময় লাগতে পারে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস জানান, পদ্মা সেতুর টোল আদায় ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন এবং চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ৬৯৩ কোটি টাকায় ৫ বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে তাদের সঙ্গে। তারা আদায় করা টোলের টাকা জমা করবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে, আর সরকার চুক্তি অনুযায়ী তাদের পাওনা পরিশোধ করবে।
সেতুতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য দুই পাড়ে রাখা হচ্ছে ফায়ার স্টেশন। এছাড়া ওজন স্টেশনও থাকছে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান নিয়ন্ত্রণ করা এই স্টেশনের কাজ। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে গাড়ি অপসারণে ব্যবহৃত রেকারও রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে নিজস্ব অর্থায়নে; যদিও শুরুতে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল এই সেতুতে। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করলে তাদের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে দেশের টাকায় এই সেতু নির্মাণেরে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেই সেতুর পদ্মা সেতু নির্মাণযজ্ঞ শুরু হলেও তার পরিকল্পনা তারও আগের।
শনিবার সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপর সেতুর দুই পাড়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন তিনি।