প্রেসিডেন্টকে ‘মহামান্য’ ডাকা নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। একইসঙ্গে প্রেসিডেন্টের পতাকাও বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর এই ঘোষণা দেন। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
প্রেসিডেন্ট পদ থেকে গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রনিল বিক্রমাসিংহে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই প্রেসিডেন্টকে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ‘মহামান্য’ শব্দটি ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং প্রেসিডেন্টের পতাকা বিলুপ্ত করার ঘোষণা দেন তিনি।
টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘প্রেসিডেন্টের পতাকা বিলুপ্ত করা হবে। কেননা, দেশকে শুধু একটি পতাকা ঘিরেই জড়ো হতে হবে। সেটি হচ্ছে জাতীয় পতাকা।’
তিনি বলেন, ‘আমি কখনও কোনও অসাংবিধানিক কাজে সহায়তা করবো না।’ এ সময় ব্যক্তিকে রক্ষার বদলে দেশকে রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, শ্রীলঙ্কার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে খাবার, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে। জনগণকে আসন্ন বিপজ্জনক পরিস্থিতি অনুধাবন করতে হবে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ, পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং তিন বাহিনীর কমান্ডারদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান রনিল বিক্রমাসিংহে। এই কমিটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বাইরে থেকে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দেশ ছেড়ে পালানো সাবেক প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগপত্র শুক্রবার গ্রহণ করেছে পার্লামেন্ট। শ্রীলঙ্কা ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ পরে সেখান থেকে সিঙ্গাপুর পৌঁছে পদত্যাগপত্র পাঠান গোটাবায়া। বিক্ষোভকারীরা বাসভবনে ঢুকে পড়ার কিছুক্ষণ আগে সেখান থেকে বেরিয়ে যান তিনি।
শনিবার পার্লামেন্ট অভিমুখী সড়কে শতাধিক পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যারিকেড ও পানি ছিটানোর মেশিন রাখা হয়েছে। অপর পাশের রাস্তায় টহল দিচ্ছে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত নিরাপত্তা বাহিনী।
নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক সপ্তাহ সময় পাচ্ছেন আইনপ্রণেতারা। এই সময় পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন রাজাপাকসের ঘনিষ্ঠ, ছয় বারের প্রধানমন্ত্রী এবং নিজ দলের একমাত্র পার্লামেন্ট সদস্য রনিল বিক্রমাসিংহে। বিক্ষোভকারীরা রনিল বিক্রমাসিংহেরও পদত্যাগ চায়। শুক্রবার তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল। ফলে তিনি নির্বাচিত হলে আবারও বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিরোধীদের মূল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন সাজিথ প্রেমাদাসা।
অর্থনৈতিক সংকটের কবলে পড়া শ্রীলঙ্কায় গত কয়েক মাস ধরেই বিক্ষোভ চলছে। তবে গত সপ্তাহে সেই বিক্ষোভ চূড়ান্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কলম্বোর বিভিন্ন সরকারি ভবন দখলে নিয়ে নেয় বিক্ষোভকারীরা। আর্থিক সংকটের জন্য রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করছে তারা। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, পিটিআই।