খুনখারাবিসহ
ভয়ংকর অপরাধ দ্রুত বাড়ছে। বাড়ছে ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যাসহ নারী
নির্যাতনের ঘটনা। ফিরে এসেছে এসিড নিক্ষেপের মতো জঘন্য অপরাধ। অপরাধকর্মে
অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র।
অপরাধীদের হাত থেকে রেহাই
পাচ্ছেন না আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য কিংবা তাঁদের সহযোগিতাকারীরা।
পত্রিকার পাতা খুললেই এমন সব খবর চোখে পড়ে, যাতে মানবিক বোধসম্পন্ন
প্রত্যেক মানুষের হূদয় দুমড়েমুচড়ে যায়। গতকালের কালের কণ্ঠেও এমন বেশ কিছু
খবর প্রকাশিত হয়েছে, যা থেকে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির
চিত্রই প্রকাশ পায়। গত দেড় বছরে ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ ও র্যাবের ১৭
‘সোর্স’ খুন হয়েছেন, যদিও পুলিশের কাগজপত্রে সোর্স বলে কিছু নেই। তবু
সাধারণভাবে মানুষ জানে, তাঁরা বিভিন্নভাবে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে
থাকেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টন এলাকা থেকে এক নারী এবং শাহবাগ থানা
এলাকা থেকে এক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। ঢাকার
সাভারের আশুলিয়ায় বংশী নদী থেকে সজিব ভুঁইয়া নামে এক স্কুলছাত্রের লাশ
উদ্ধার করা হয়েছে, যার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক
সেবিকাকে হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছে স্থানীয় জনতা।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত
হয়েছে এবং বহু বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। বগুড়া, নওগাঁ ও কুমিল্লা থেকে বেশ
কিছু ধর্ষণ ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা
হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বৃহস্পতিবার যুবলীগ নেতার ওপর হামলা চালানো
হয়। হামলায় যুবলীগ নেতা ও তাঁর গাড়িচালক আহত হয়েছেন। এ সময় তাঁর প্রতিপক্ষ
মনিরুজ্জামান জুয়েলকে সশস্ত্র অবস্থায় দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
ভাইরাল হওয়া একাধিক ছবিতে দেখা যায়, একটি অত্যাধুনিক সাবমেশিনগান হাতে নিয়ে
তিনি দাঁড়িয়ে ধূমপান করছেন।
ওপরে যে কয়টি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে,
তা সারা দেশে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর সব অপরাধের সামান্য একটা অংশ মাত্র। গত কয়েক
দিনের পত্রিকা ওল্টালে এই ধরনের অসংখ্য ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যাবে। এমন
পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাবোধ আজ কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে,
ভাবতেও কষ্ট হয়। শুধু খুনখারাবি নয়, অপরাধের প্রতিটি শাখা সমাজে ডালপালা
বিস্তার করছে। মাদকের সহজলভ্যতা তরুণ সমাজকে ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি যেন প্রতিযোগিতা করে বাড়ছে। ফলে মানুষের
নিরাপত্তাবোধ ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে। অথচ সম্মান নিয়ে নিরাপদে বসবাস করা
মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর একটি।
আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্বল
নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই দেশে খুন, ধর্ষণসহ ভয়ংকর অপরাধ বৃদ্ধির মূল কারণ।
বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, রাজনৈতিক প্রশ্রয় এবং আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের
পার পেয়ে যাওয়া অপরাধের লাগাম টানার ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতাই প্রকাশ
করে। অন্যদিকে শাস্তির ভয় কম থাকায় অপরাধীরা ক্রমে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমরা
চাই, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। দ্রুততম সময়ে
প্রতিটি ঘটনার সঠিক তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন করা হোক।