পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন রাত ৮টার আগে কেনাকাটা সারছেন। দোকানপাট-শপিং মল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে যথাসময়ে। সেই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের শিডিউল বদলে দিয়েছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও। নিয়ম মেনে নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন তারা। সোমবার (১৮ জুলাই) বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিং মল ও আলোকসজ্জা বন্ধ থাকবে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
ঘোষণা অনুযায়ী একই দিন রাত ৮টার পর থেকে নির্দেশনা বাস্তবায়নে অভিযান শুরু করে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ বেশ কিছু এলাকায় অভিযান চালানো হয়। প্রথমে মাইকে লাইট বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়। না শুনলে পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডিপিডিসি।
সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলে সোমবার (১৮ জুলাই) ও মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) নগরবাসীকে অলিখিত নতুন রুটিন মেনে চলতে দেখা গেছে। তারা বলছেন, সরকারি নির্দেশনা মানতেই হবে। দোকানপাট-শপিং মল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তার আগেই প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সেরে ফেলছেন। এভাবেই ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন নতুন এক রুটিনে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে নিয়মিত কেনাকাটা করে থাকেন আসাদুজ্জামান শাওন। তিনি বলেন, আগে অন্যান্য কাজ শেষ করে রাত ৯-১০টার সময়ও কেনাকাটা করতেন। নির্দেশনার কথা জেনে সোমবার থেকে আগে দোকানে যাচ্ছেন, তারপর অন্যান্য কাজ সারছেন।
রামপুরার দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা রিকশা চালক লিয়াকত আলী জানালেন, নির্দেশনার কথা জানি না। সোমবার থেকে হঠাৎ রাত ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেদিন থেকে শপিং মল বা বাজার কেন্দ্রিক যাত্রীর সংখ্যাও কমে গেছে। বুধবার তো মাইকিং করতেও শুনলাম। এখন থেকে এভাবেই চলতে হবে।
এদিকে, সরকারি নির্দেশনার আলোকে মঙ্গলবার থেকে সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের তালিকা তৈরি করছে ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ডিপিডিসি ও ডেসকো। সেই অনুযায়ী বুধবারের (২০ জুলাই) তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে, যা কোম্পানি দুটির ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট লিংকে গিয়ে জানতে পারছেন গ্রাহকরা।
তবে বিদ্যুতের অন্য চার বিতরণ কোম্পানির মধ্যে নেসকো ছাড়া পিডিবি, আরইবি ও ওজোপাডিকোর কোনও তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এসব কোম্পানির বিশাল এলাকা হওয়ায় স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসগুলো লোডশেডিংয়ের শিডিউল ঠিক করছে। চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম থাকায় ঢাকার বাইরে কোথাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরুদ্ধে গ্রামাঞ্চলের মানুষ নানা অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, একঘণ্টা করে লোডশেডিংয়ের কথা বলা হলেও তিন-চার ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ মিলছে না। এমন অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা করছেন অনেকে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে নারাজ।
কোরবানির ঈদের দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে বুধবার ঢাকায় ফেরা আব্দুল জব্বারের সঙ্গে কথা হয় আগারগাঁও এলাকায়। তিনি বলেন, লোডশেডিং ভুলে গিয়েছিলাম আমরা। এখন আবার নতুন রূপে তা দেখা যাচ্ছে। গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ দেখে এলাম। এ নিয়ে লোকজনকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেলেও মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় কী।
রাতের লোডশেডিং শিডিউলে দৈনন্দিন জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ার কথা জানিয়ে উত্তরার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা। হঠাৎ করে লোডশেডিং ফিরে আসায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাতে লোডশেডিং হওয়ায় ঘুমে সমস্যা হচ্ছে। রাতে বাসায় ফেরার সময় ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার শঙ্কাও থাকছে।