ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ফিরে দেখা আপনভুবন
Published : Tuesday, 26 July, 2022 at 12:00 AM
ফিরে দেখা আপনভুবনশান্তিরঞ্জন ভৌমিক ||
আমার জীবনের পড়ন্ত বেলায় ২৪ জুন ২০২২খ্রি:, শুক্রবার এক অনাবিল আনন্দঘন ঘঠনা ঘটে গেলো। পেছনের কথা একটু বলতে হয়।
আমার বাবা হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন, বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি যে স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৩৬খ্রি: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রথম বিভাগে পাশ করেছিলেন, বি.এ পাশের আগ থেকেই সে স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন এবং বি.এ পাশের র্পও স্কুল পরিবর্তন করেননি। তাঁর ৪০ বছরের চাকরি ১৯৮৪ সালে যথারীতি শেষ হলেও পরবর্তী ১০ বছর অর্থাৎ ১৯৯৪ খ্রি: পর্যন্ত স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকতা করেছেন। পরে যখন শরীর-মন সায় দিচ্ছিল না, তখন আপন গৃহেই পড়াশোনা নিয়ে সময় কাটাতেন। ২০০২খ্রি: ২০ আগস্ট স্বল্পসময় রোগ ভোগের পর মৃত্যুবরণ করেন।
আমি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র। সব ব্যাপারেই বাবাকে অনুসরণ করতে চেষ্টা করেছি। বিশেষত ছাত্রজীবন থেকেই শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতাম। ১৯৬৭ খ্রি: বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম,এ পাশের পর অন্য ধরনের চাকরির সুবিধা থাকা সত্ত্বেও ১ মে ১৯৬৮খ্রি: চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া ডিগ্রি কলেজে বাংলার প্রভাষক (অধ্যাপক) হিসেবে যোগদান করি। তারপর বেসরকারি ও সরকারি কলেজে ৩৪ বছর ১১ মাস চাকরি করে আমার কর্মজীবন শেষ করি ২০০৩ সালের মার্চ মাসের ২৮ তারিখ। তারপর থেকে অবসরজীবন অর্থাৎ প্রথাগত চাকরি জীবন থেকে বিদায়। দু’একটি অনুরোধ এসেছিল, আমার পূর্ব সিদ্ধান্তানুযায়ী অনঢ় থেকেছি এবং অবসরজীবন কীভাবে উপভোগ করব, তা পূর্বেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম, সেভাবেই নিজেই নিজেকে পরিচালিত করে চলেছি। অবসরজীবনে মানুষকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে জানতে, জগতের রহস্যকে বুঝতে, প্রথাগত ধর্মচর্চার মধ্যে যে সত্যবোধ রয়েছে তা উপলব্ধি করতে এবং প্রমাণ-যুক্তি দিয়ে নিজের যাপিত বিশ্বাসকে আরও বিকশিত করতে নিজের অবসরজীবনকে তেমনভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলাম এবং সেভাবেই নিরলসভাবে চলেছি। কিন্তু মাঝখানে ছন্দপতন ঘটল অপ্রত্যাশিত। এর মধ্যে ২০০৩খ্রি: মে মাসে মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়, ২০০৮খ্রি: ফেব্রুয়ারিতে ছেলেকে বিয়ে দেই। তারা নিজেদের মতো সংসার সাজিয়ে দূরে চলে যায়। গৃহে রইলাম দু’জন- আরতি (আমার স্ত্রী) ও আমি। ২০১০ খ্রি: ১৭ ডিসেম্বর আরতির আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। আমি নি:সঙ্গ হয়ে পড়ি, অতি কষ্টে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া করে যখন একটু স্থিতু হয়েছি, ২০১৪ খ্রি: ১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদূত এসে হঠাৎ সামনে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু মৃত্যুদূত ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। আমি এখনও আছি, বেঁচে-বর্তে আছি। এখন বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। ভালোই আছি। আমার পড়াশোনা, লেখালেখি আমাকে এখন নি:সঙ্গ থাকতে দিচ্ছে না। যতই বয়স বাড়ছে ততই জীবনকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে, পৃথিবীটা সুন্দর লাগছে, মানুষগুলো আপন হয়ে যাচ্ছে, অজানাকে জানতে প্রচণ্ড আকাক্সক্ষা জন্মেছে- আমি এখন ক্লান্তিহীন একজন নাবিক। নৌকাটা পুরানো, তাই তেমনভাবে যেন চলতে চাচ্ছে না। এটাই হয়ত জগতের নিয়ম। এ নিয়ে তেমন ভাবি না।
আমার চাকরি জীবনের এক বৃহৎ অংশ অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য সময় কাটিয়েছি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। এ কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও বাংলা অনার্স পড়েছি ১৯৬১-১৯৬৬ সাল অর্থাৎ পাঁচ বছর। শিক্ষকতা করেছি দু’পর্বে ১৬ বছর। কুমিল্লা মহিলা কলেজে ১০ বছর। বাকি সময়টা বাঙ্গুনীয়া কলেজ-মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ-চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ। যেহেতু কুমিল্লা শহরের দুটি কলেজে ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছি। আমার অস্তিত্বের ঠিকানা এখানেই। এছাড়া ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষকতা আমাকে এ কলেজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। পরিচয়টা এভাবেই চলমান। তার প্রধান কারণ, এ কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা এখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে, আমাকে বার বার স্মরণ করছে।
ভিক্টোরিয়া কলেজের বাংলা অনার্স ক্লাশের ১৯৯৫-৯৬ শিক্ষাবর্ষের ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ২৪ জুন ২০২২খ্রি: কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ উপকন্ঠে ঢুলিপাড়া একলাকায় ‘ফান টাউন’ নামে একটি চমৎকার রেস্তোরায় ২২ বছর পর একত্রিত হয়েছিল ‘প্রাণের মেলা’ উপভোগ করার জন্য। তাদের আরও দশজন সহপাঠী ছিল, যোগাযোগ করতে পারেনি। খবর বা যোগাযোগ হলে নিশ্চয়ই তারাও যোগদান করত। এই ‘প্রাণের মেলা’র বিশেষত্ব হলো- তারা যখন অনার্স পড়ছিল, তাদের সময়ের পাঁচজন শিক্ষক এখনও জীবিত আছেন, তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রফেসর কবীর চৌধুরী, প্রফেসর গোলাম মোস্তফা, মাসুদা বেগম (সহযোগী অধ্যাপক, এখনও ভিক্টোরিয়া কলেজে কর্মরত) এবং আমি। প্রফেসর আনোয়ারুল হক ও মাসুদা বেগম ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি, কিন্তু মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। শিক্ষকদের মধ্যে বয়সের তুলনায় আমি প্রবীণ। উল্লেখ্য, আমরা সকলেই ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স-এর ছাত্র-ছাত্রী ছিলাম। বলা চলে- যে ছাত্ররা ‘প্রাণের মেলা’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, আমরা তাদের পূর্বসূরী।
অন্যধরনের বিশেষত্ব হলো যে পঁচিশজন ছাত্র-ছাত্রী মিলনমেলায় যোগদান করেছে, তারা সকলেই স্ব স্ব কর্মধারায় প্রতিষ্ঠিত। তারা বিবাহিত ও সন্তান-সন্তুতির পিতা-মাতা। তাদের সন্তানরা পড়াশোনা করছে, স্ত্রীগণ গৃহিণী বা কর্মজীবী, স্বামীরা নানা পেশায় প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ‘প্রাণের মেলায়’ কেউ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেনি। জানা গেল- তারা ২২ বছর আগে কলেজের অনার্স পড়ার সময় যেমনটি সহপাঠী ছিল, সেভাবেই সে সম্পর্ক নিয়ে দিনটি উদ্যাপন করতে চেয়েছে, শুধু পাঁচ জন শিক্ষকের সাহচর্যে। সুতরাং বিষয়টি অনুভব করার মধ্যে এক ধরনের চমৎকারিত্ব ও নস্টালজিয়া যাপিত ছিল, ছিল উপভোগ্য এবং ব্যতিক্রমধর্মী। বিষয়টা এরূপ- ‘হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।’ জীবনের মাঝখানের ২২টি বছরকে ভুলে গিয়ে এই যে প্রাণের মেলার স্পন্দন, তার ব্যাখ্যা চলে না। শুধু উপভোগের আতিশর্যে শিহরণ অনুভব করা যায়। এই সময়ে, যান্ত্রিক জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া, নিয়ম-নীতির বেড়া অতিক্রম করে প্রথাগত সংসারজীবনকে শুধু একদিনের জন্য সবকিছু ভুলে গিয়ে একবারের জন্য পেছনে ফিরে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ তার কোনো ধারাপাত বা যোগ-বিয়োগ অংকের ফল মিলানো সত্যিকার অর্থেই কঠিন। এ অংকটা সম্পূর্ণ নতুন। উদাহরণ দিচ্ছি।
স্ত্রী ততটা লেখাপড়া করেনি, স্বামীটি উচ্চ শিক্ষিত তবে স্ত্রীকে সম্মান করে। সংসার পরিচালনায় স্ত্রীর ভূমিকাকে প্রাধান্য দেয়। একবার কোনো কারণে স্বামীটি স্ত্রীর কাছে থেকে দু’বারে ২৫০+২৫০ টাকা ধার নেয়। স্ত্রীটি তার নোট খাতায় লিখেছে এভাবে-
বুধবার ১৫ তারিখ- ২৫০
শনিবার ২৭ তারিখ-২৫০
যোগফল-৪/১০/০
একদিন স্ত্রী বলল-আমার টাকাটা ফেরত দাও। স্বামীটি ইচ্ছে করেই বলল-কত ধার নিয়েছি ? স্ত্রীটি তার নোট খাতা দেখাল। স্বামীটি হাসলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ ১০০ টাকা দিয়ে বললেন পরের সপ্তাহে বাকী টাকা ফেরত পাবে। স্ত্রী নোট খাতায় জমা করল
২৫০
২৫০
৪১০০
ফেরত ১০০

অর্থাৎ পাওনা রলো ৪ টাকা।
প্রাণের মেলায় ২২ বছর পর আমার প্রাণপ্রিয় ছাত্র/ছাত্রীরা একত্রিত হয়ে কতটুকু জীবনের স্বাদ পেলো ? হিসাব করে লাভ নেই। কতটুকু নিয়ে ফিরে যাবে, তাও তাদের অজানা।  তারপরও হিসেব করেছি। আমি যখন ১২ টায় তাদের সঙ্গে মিলিত হলাম, তখন আমার জীবন থেকে ৩০ বছর হারিয়ে গিয়েছিল। আমি ভুলে গেছি আমি একজন বৃদ্ধ শিক্ষক, শরীরে বয়সের জড়া বা জং ধরেছে, পত্রহীন হয়ত বা একটা বটবৃক্ষ। না, তা রাত্র ৯টা পর্যন্ত মনে ছিল না। অনুভব করেছি-একদিন হয়ত দেহে বা শরীরের মৃত্যু ঘটবে। আমি মরব না। ৩৫ বছর যাদেরকে নিয়ে আপন জগৎ সৃষ্টি করেছি, আমার আত্মার স্পর্শে অগণন আত্মাকে জাগিয়ে তুলেছি, আমি তাদের মধ্যে বেঁচে থাকব অনন্তকাল-চিরকাল। এটাই পরম্পরা জীবনের স্রোত, যা সৃষ্টিকে সামনে নিয়ে চলেছে অবিরাম। কোন উৎসমূল থেকে তার উৎপত্তি, তা জানি না। তার শেষ কোথায় তাও জানার সুযোগ নেই। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শুধু জেনেছি- আমরা একটি অখন্ড সত্তা বা আত্মার অংশবিশেষ। তাকেই বলা হয়েছে পরমাত্মা-পরমপুরুষসত্তা, অখন্ড অদ্বয় চৈতন্য বিশেষ। তাকে পৃথক ভাবাই মূর্খতা। সেখানে আমি-তুমি বলে কোনোকিছু নেই, শুধু আমরা একক ও অভিন্ন।
সৃষ্টিকর্তা যদি এক অখন্ড সত্তা হয়ে থাকেন, তাহলে জীবের আকৃতি ভিন্ন, সেজন্য প্রকৃতিও ভিন্ন। কিন্তু সত্তা বিচারে একক, বহুত্বে বৈচিত্র্য, এককে এশ্বর্য। তাহলে-
কিসের তরে অশ্রু ঝরে, কিসের লাগি দীর্ঘশ্বাস।
হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করব মোরা পরিহাস।
রিক্ত যারা সর্বহারা সর্বজয়ী বিশ্বে তারা
গর্বময়ী ভাগ্যদেবী নয়কো তারা ক্রীতদাস।
হাস্যমুখে অদৃষ্টেরে করব মোরা পরিহাস।।
শেষ কথা-
ভিক্টোরিয়া কলেজের বাংলা বিভাগের অনার্স এর ১৯৯৫-১৯৯৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীরা ২৪ জুন ২০২২খ্রি: আমরা জীবনের পড়ন্ত বেলায় যে আনন্দ ও আত্মার পরশ দিয়ে উজ্জীবিত করেছে, তাতে আমি পূর্ণতায় অহংকারী নাবিক, অনন্তকালের পথিক।
‘প্রাণের মেলার’ বিশেষত্ব ছিল দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীদের লাগামহীন স্বাধীনভাবে স্মৃতিচারণ, বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ও ফেলেআসা সোনালী দিনের অব্যক্ত অনুভূতির সহজ-সরল উচ্চারণ-এটাই হয়ত জীবনের মৌলিক রূপ। জানি, দেয়াল দিলে ঘর হয়, দেয়াল ভেঙ্গে দিলে পৃথিবীকে স্পর্শ করা যায়। সেদিন আমার প্রাণের ছাত্র-ছাত্রীরা পৃথিবীকে একদিনের জন্য স্পর্শ করতে পেরেছিল। আমি তাদের মধ্যে আমাকেও খুঁজে পেয়েছিলাম।
যখন রাত ৯-৩০ মিনিটে বাসায় ফিরছিলাম, তখন বার বার মনে পড়ছিল তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবি উপন্যাসের সেই পংক্তিটুকু- ‘জীবন এত ছোট ক্যানে’।
প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর কবিতা রয়েছে, অর্থবহ ও সমাজ-পরিমণ্ডলে শাশ্বত উক্তির আড়ালে অনেক অভিজ্ঞতার বাণীবহ উচ্চরণ। যেমন-
বেলাশেষে-
‘একজন স্বামী, একজন স্ত্রী
একজন চুরাশি, একজন আশি
ওরা কখনও কাউকে বলেনি
তোমায় ভালোবাসি।’
এটা হলো বাঙালি পরিবারের অকৃত্রিম চালচিত্র। জীবনের বহুলাংশ কেটে যায় পাশাপাশি অবস্থানে, সংসার-জীবনের সুখ-দু:খের মধ্যেও অভিনীত হয় কত লুকোচুরি, জন্ম নেয় প্রজন্ম সকল। কিন্তু ভালোবাসা থেকে যায় অব্যক্ত, নিত্যদিনের ধারাবাহিক কর্মস্রোতের মতো। কিন্তু আমরা বা আমার ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের ২২/২৩টি বছরকে একদিনের জন্য মুছে দিয়ে কী বার্তা দিয়ে গেলো, তা তো বলা যাবে না। তাহলে যে তার কৃত্রিম ঠিকানায় ফিরে যেতে পারবে না। তাই বলতে ইচ্ছে করছে
সখি, ভালোবাসা করে কয়-
তা কি শুধু কেবলি যাতনাময় ?
না, কোনো বেদনা নেই। এক ঘেঁয়ে জীবনে বৈচিত্র্য নেই, সুখ-দু:খের পালাবদলে যে উদ্দীপন তা না থাকলে পৃথিবী সুন্দর হয় না। আমরা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ নিয়েই জীবনের মালা গাঁথি, নানা ধরনের ফুলের সমারোহ ঘটাই।
 শেষ কথা:
ঘুমের দেশে ভাঙিল ঘুম, উঠিল কলস্বর,
গাছের শাখে জাগিল পাখি, কুসুম মধুকর।
.....................
ফাগুন মাস আবার এল বহিয়া ফুলডালা
জানালা-পাশে একেলা বসে ভাবিছে, রাজবালা-‘কে পরালে মালা’ !
[বি:দ্র: এই লেখাটা যখন শেষ করলাম, তখন একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতারমালা পরানো হয়েছে। একজন শিক্ষককে তাঁর ছাত্র ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেছে। দু:খজনক হলেও সত্যি যে, এ দু’জন শিক্ষকই সংখ্যালঘু অর্থাৎ হিন্দু। তার আগেও কয়েকজন হিন্দু শিক্ষককে উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে লাঞ্ছিত করে যে বার্তা দেয়া হয়েছে তা নিন্দনীয় ও আত্মঘাতি। এখনই যদি সামাজিক আন্দোলন ও সরকারি হস্তক্ষেপ না করা হয়, জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা শিক্ষককে অপমান ও লাঞ্ছিত করে তারা মানুষ নয়, জানোয়ার।
শিক্ষাজগতে যারা ছাত্র-শিক্ষক, তাদের ধর্মীয় জাতিগত কোনো পরিচয় নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অতি পবিত্র অসাম্প্রদায়িক দেবালয়। এ দেবালয়ে যারা শিক্ষা নিতে আসে এবং শিক্ষা দিতে আসেন- তাঁরা প্রকৃত জ্ঞানচর্চার ধারক ও বাহক। তাঁদের পরিচিতি ও অবস্থান অবশ্যই অন্যকোনো বিবেচনার উর্ধ্বে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণই প্রকৃত গুরু-গুরুজন-পথপ্রদর্শক।]