বাংলাদেশের
সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠ। এই ঘনিষ্ঠতা
আরো এক ধাপ এগিয়েছে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সফরের মধ্য দিয়ে। গত
শনিবার বিকেলে এক রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি ঢাকায় আসেন এবং রবিবার সকাল ১১টায়
ঢাকা ছেড়ে যান। সংক্ষিপ্ত এই সফরকালে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে
আব্দুল মোমেনের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়। এ সময় চারটি সমঝোতা স্মারক ও
চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চীনের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা
বাড়ছে।
চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এমন একসময়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন,
যখন তাইওয়ান প্রশ্নে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
চীনের আপত্তি অগ্রাহ্য করে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি
পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা শুরু হয়। জানা যায়, দুই
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যকার বৈঠকে তাইওয়ান সম্পর্কিত সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে
ধরেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী বৈঠকে
দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদির পাশাপাশি গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) এবং
গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ‘এক চীন’
নীতির প্রতি বাংলাদেশ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করায় কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন চীনের
স্টেট কাউন্সেলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
২০১৬ সালে চীনের
প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সেই সফরের মধ্য দিয়ে
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন করে গতি পায়। বর্তমানে চীনের সহযোগিতায়
বাংলাদেশে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ
ক্রমেই বাড়ছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বর্তমান সফরের সময় যে চারটি সমঝোতা
স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে তার মধ্যে আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা,
পিরোজপুরে কচা নদীর ওপর নির্মিত প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু হস্তান্তর,
সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি নবায়ন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মেরিন
সায়েন্সেস শিক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা।
চীন বর্তমান বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম
অর্থনৈতিক শক্তি এবং বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী। ‘হিমালয় থেকে সুন্দরবন’
পর্যন্ত যে অভিন্ন ঐতিহ্য তারই উত্তরাধিকারী দুটি দেশ। বাংলাদেশ
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের লক্ষ্য
রয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া। এই বাস্তবতায় দেশ দুটির
মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সম্প্রসারণ খুবই জরুরি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে
হলে দ্রুত শিল্পায়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তাসহ
শিল্প বিকাশের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে।
এসব কাজে চীন বাংলাদেশকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে। সেই সহযোগিতা আরো এগিয়ে
নিতে হবে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে বিসিআইএমসহ (বাংলাদেশ,
চীন, ভারত, মিয়ানমার) যেসব আঞ্চলিক ও পারস্পরিক উদ্যোগ রয়েছে, সেগুলোকে
দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য খুব বেশি
মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের সঙ্গেও চীনের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা
আশা করি, চীন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আমরা চাই,
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরো শক্তিশালী হোক।