১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকায় ব্লকরেইড ও বিশেষ অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। আজ (১১ আগস্ট) রাত থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। বুধবার (১০ আগস্ট) ডিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে নাশকতা, নৈরাজ্য ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং সোশাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা প্রতিরোধকল্পে আগে থেকেই অপরাধ দমনে প্রস্তুতি গ্রহণ ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে। এ লক্ষ্যে কোনও সন্ত্রাসী/নাশকতাকারী/জঙ্গি গ্রুপ যাতে কোনও বাসা, আবাসিক হোটেল, মেস, বস্তিসহ যেকোনও এলাকায় আশ্রয় বা অবস্থান নিতে না পারে সেজন্য এলাকাভিত্তিক ব্লকরেইড, তল্লাশি ও চেকপোস্ট কার্যক্রম পরিচালনা এবং অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার রোধে ১১ আগস্ট থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ব্লকরেইড ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনারের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশেষ পরিকল্পনার মাধ্যমে ঢাকা মহানগর এলাকার সব আবাসিক হোটেল, মেস এবং বস্তি এলাকায় ব্লকরেইড ও তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বিশেষ অভিযানের সময় উঠান বৈঠকের কার্যক্রম বেগবান করতে হবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদের হুমকি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করতে হবে। জনগণকে পুলিশি কার্যক্রমের সম্পৃক্ত করতে হবে। কোনও ধরনের সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠী যেন ঢাকা মহানগরীতে অন্তর্ঘাতমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে ও বিশেষ অভিযান সফল করার অনুরোধ করা হলো।
কমিশনারের পাঠানো চিঠিতে ছয়টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- জঙ্গি, নাশকতাকারী, তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও সব অপরাধী সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক সুনির্দিষ্ট কৌশলগত স্থান চিহ্নিত করে সম্পূর্ণ এলাকা বা স্থান সুপরিকল্পিতভাবে অকস্মাৎ চতুর্দিকে পুলিশি কর্ডন করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, বস্তি, মেস, আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, ক্লিনিক, পরিত্যক্ত কারখানা, সন্দেহভাজন কোচিং সেন্টার, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সন্দেহভাজন প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি ও ব্লকরেইড কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। উঠান বৈঠক, চেকপোস্ট ও তল্লাশিসহ দৃশ্যমান পুলিশি কার্যক্রম বেগবান করা, বিট এলাকায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির আগমন পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সোশাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় গুজব ও অপপ্রচার রোধকল্পে অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে যেকোনও চক্রান্ত প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিএমপির প্রতিটি থানায় ভাড়াটিয়া এবং প্রতিটি মেসের সদস্যদের তথ্য হালনাগাদ করে সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের মাধ্যমে ডিবি এবং সিটিটিসিকে অবহিত করতে হবে। বিশেষ অভিযান পরিচালনার ফলাফল প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে ডিএমপি সদর দফতরের উপ-কমিশনার (ক্রাইম)-কে জানাতে হবে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৫ আগস্টের নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি চৌকি, চেকপোস্ট ও বিশেষ টহল অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ধানমন্ডি ও এর আশপাশের এলাকাগুলোর আবাসিক হোটেলগুলোতে বিশেষ নজরদারি ও প্রয়োজনে কয়েকদিন কোনও অতিথি রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. শহীদুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে ব্লকরেইড ও বিশেষ অভিযান চালু করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করে এলাকাভিত্তিক চেকপোস্ট, মেস বাসা বাড়িতে অপরিচিত লোকজনকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবাসিক হোটেলগুলোতে প্রতিদিনই তল্লাশি করা হচ্ছে। রাতে অলি-গলিতেও চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে।