ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
বঙ্গবন্ধু ও আব্রাহাম লিঙ্কন
Published : Monday, 15 August, 2022 at 12:00 AM
বঙ্গবন্ধু ও আব্রাহাম লিঙ্কনজুলফিকার নিউটন  ||
আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটিসবার্গ বক্তৃতাটি জগদ্বিখ্যাত। ১৮৬৩ সালের নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখে এই বক্তৃতাটি দিয়েছিল লিঙ্কন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তখন তিনি। যুদ্ধ চলছিল উত্তরে-দক্ষিণে; দক্ষিণের লোকেরা দাসপ্রথার বিশ্বাস করতো এবং দাস রাখতো; উত্তরের লোকেরা তার বিরুদ্ধে ছিল; লিঙ্কন নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তখন এই বিরোধিতার। এর মধ্যে অবশ্য আরো একটা ব্যাপার ছিল, সেটা হলো উত্তরের এককেন্দ্রিকতার অভিপ্রায়ের বিপরীতে দক্ষিণের অবস্থান। উত্তর-দক্ষিণের সেই বিরোধ থেকে যে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ১৮৬৩-তে সেটি চলছিল। যুদ্ধে নিহতদের স্মরণ করে আব্রাহাম লিঙ্কনের ওই বক্তৃতা। গেটিসবার্গে যুদ্ধ হয়েছে; ওই যুদ্ধক্ষেত্রের একাংশকে যুদ্ধে নিহতদের জন্য কবরস্থান হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। লিঙ্কন ওই কবরস্থানে দাঁড়িয়ে একটি অতিসংক্ষিপ্ত লিখিত বক্তৃতা দেন, যেটি দিতে তার দশ মিনিটও সময় লাগে নি। বক্তৃতায় তিনি বলেনÑ
Fourscore and seven years ago our fathers brought forth on this continent, a new nation, conceived in Liberty, and dedicated to the proposition that all men are created equal.
 Now we are engaged in a great civil war, testing whether that nation, or any nation so conceived and so dedicated, can long endure. We are met on a great battle-field of that war. We have come to dedicate a portion of that field, as a final resting place for those who here gave their lives that that nation might live. It is altogether fitting and proper that we should do this.
 But, in a larger sense, we cannot dedicate-we cannot consecrate-we cannot hallow-this ground. The brave men, living and dead, who struggled here, have consecrated it, far above our poor power to add or detract. The world will little note, nor long remember what we say here, but it can never forget what they did here. It is for us the living, rather, to be dedicated here to the unfinished work which they who fought here have thus far so nobly advanced. It is rather for us to be here dedicated to the great task remaining before us-that from these honored dead we take increased devotion to that cause for which they gave the last full measure of devotion-that we here highly resolve that these dead shall not have died in vain-that this nation, under God, shall have a new birth of freedom-and that government of the people, by the people, for the people shall not perish from the earth.

তিনিও বোঝেন নি এই বক্তৃতা কতটা গুরুত্ব পাবে। যারা শুনেছে তারা অভিভূত হয়ে পড়েছিল; লিঙ্কনের সন্দেহ হয়েছিল যথেষ্ট প্রভাব ছিল কি না। পরে বোঝা গেছে, কী অসাধারণ ছিল সে বক্তৃতা। যারা পড়েছে, তারা বারবার পড়েছে; এবং এখনো পড়ে।
গেটিসবার্গ বক্তৃতা অসাধারণ কেন? প্রথম কারণ এই বক্তৃতায় তিনি গণতান্ত্রিক সরকারের একটি সংজ্ঞা দেন। খুব ছোট সেই সংজ্ঞা কিন্তু খুবই যথার্থ। গণতান্ত্রিক সরকার হচ্ছে এমন সরকার যা জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের দ্বারা পরিচালিত এবং জনস্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত। দ্বিতীয় কারণ এর ভাষা এতো সংক্ষেপে গণতান্ত্রিক, সরকারের সংজ্ঞা কমই পাওয়া গেছে রাজনীতির ইতিহাসে। তৃতীয় কারণ কথাগুলো উঠে এসেছিল তত্ত্ব হিসাবে নয়, অভিজ্ঞতা হিসাবে লিঙ্কন যুদ্ধ করেছিল। কেন করেছিল তার ব্যাখ্যা ওই বক্তৃতায় আছে। রয়েছে তার গভীর আশাবাদ গণতান্ত্রিক সরকারের মৃত্যু নেই, লিঙ্কন বলেছিল এই আশাবাদ একজন যোদ্ধার। এর আন্তরিকতা সেদিন ছিল মর্মস্পর্শী, আজও তাই।
আব্রাহাম লিঙ্কন বলেছিল গণতান্ত্রিক সরকারের মৃত্যু নেই। তাঁর সেই আশাবাদ সফল হয়েছে কি- খোদ আমেরিকায়, এবং সারা বিশ্বে? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়া মোটেই কঠিন নয়। তবে এর জবাব সকলে একভাবে দেবেন না। লিঙ্কনের সময়েও মতবিরোধ ছিল মতবিরোধ আজও আছে। কেউ বলবেন, আমেরিকার মতো গণতান্ত্রিক দেশ আর হয় ; এবং আমেরিকার একচ্ছত্র নেতৃত্বে সারা বিশ্ব আজ গণতন্ত্রের জন্য প্রশস্ত ক্ষেত্রে পরিণত। কেউ বলবেন, মোটেই তা নয়। আমেরিকা আজ সাম্রাজ্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদীরা গণতন্ত্রী হতে পারে না, বিশ্বে এখন গণতন্ত্র অত্যন্ত বিপন্ন-ওই আমেরিকার কারণেই। এই দুই বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্যটা আকাশ-পাতালের এবং তার কারণ দৃষ্টিভঙ্গির ব্যবধান।
আব্রাহাম লিঙ্কন নিজে গণতন্ত্রকে কিভাবে দেখছিল সেদিন? গেটিসবার্গ বক্তৃতা সে খবর দেয় আমাদেরকে খুব সংক্ষেপে, কিন্তু অত্যন্ত স্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক সরকারের কথা বলেছিল, যদিও রাষ্ট্রের কথা নয়। গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের দ্বারা গঠিত, জনগণের দ্বারা পরিচালিত, এবং জনস্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত কিন্তু এটা তো তার সবটা বক্তব্য নয়। ওই বক্তৃতার গুরুতেই এর চেয়েও মূল্যবান একটি কথা বলেছেন লিঙ্কন; বলেছেন, ‘পৃথিবীতে সব মানুষই সমান' কথাটা নতুন নয়। অনেকেই বলেছেন এর আগে। মার্কস-এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট ইশতেহার’ (১৮৪৮) তো এই বক্তব্যের ওপরই প্রতিষ্ঠিত। আব্রাহাম লিঙ্কন নিজেও ওই কথাগুলো জেফার্সনের কাছ থেকে নিয়েছেন, এমনটা বলা হয়। আমেরিকা স্বাধীনতা যুদ্ধের রণধ্বনিই ছিল ওই কথা- “সব মানুষ সমান।”
আমেরিকা ছিল ইংল্যান্ডের উপনিবেশ; উপনিবেশের অধীনতা ছিন্ন করে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্য অর্জনের সময় আওয়াজ উঠেছিল সাম্যের। সব মানুষ সমান, ইংরেজও আমেরিকানরা সমান সমান, তাই আমেরিকানরা ইংরেজদের অধীনে থাকবে না, যুক্তি ছিল এটি। সেই রণধ্বনিকে নতুন ক্ষেত্রে প্রসারিত করছিল লিঙ্কন, আমেরিকার নিজের ভূমিতেও যে সব মানুষ সমান, নিগ্রোরা যে অমানুষ নয়, সাদাদের তুলনায় এই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল তিনি গেটিসবার্গ বক্তৃতা ওই কথাটি দিয়েই শুরু।
কিন্তু এটা সাধারণত লক্ষ্য করা হয় না। চোখ গিয়ে পড়ে গণতান্ত্রিক সরকারের সংজ্ঞার ওপর। অথচ সংজ্ঞায় পৌছাবার আগে লিঙ্কন যে মানুষে মানুষে সাম্যের কথাটা বলে নিয়েছেন, বলে তবেই পৌঁছেছেন তার সংজ্ঞায় সেটা যদি না খেয়াল করি আমরা তাহলে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা মোটেই পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। আব্রাহাম লিঙ্কন জনগণের কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো জনগণ? জনগণ তো শ্রেণীতে শ্রেণীতে বিভক্ত, বিভক্ত বর্ণে বর্ণে। শ্রেণী ও বর্ণের ওই বৈষম্য যদি দূর না করা যায় তবে জনগণ এক হবে কি করে, এবং সমগ্র জনগণের স্বার্থ অভিন্ন হবে কোনো উপায়ে? গণতন্ত্রের প্রয়োজনে সাম্যের কথা দিয়ে শুরু করেছেন, শেষ করেছেন সমগ্র জনগণের কথা দিয়ে, আশা করেছেন জনগণের মধ্যে বৈষম্য থাকবে না।
গণতন্ত্রের জন্য সাম্য যে অপরিহার্য শর্ত এই কথাটা বঙ্গবন্ধু বলেছেন, আব্রাহাম লিঙ্কনের পরে, আরো স্পষ্ট করে, আরো বেশী জোর দিয়ে। বঙ্গবন্ধু যে রাষ্ট্র গড়েছিল তার মূল কথাটাই ছিল সাম্য। সেদিনের রাশিয়ার জন্য বর্ণের চেয়ে বড় সত্য ছিল শ্রেণী । বঙ্গবন্ধু শ্রেণীভেদকে অবলুপ্ত করতে চেয়েছিল, তাঁকেও যুদ্ধ করতে হয়েছিল, ওই গৃহযুদ্ধই। সাম্য ছাড়া গণতন্ত্র নেই এটা বঙ্গবন্ধু জানতেন, আব্রাহাম লিঙ্কনও জানতেন। বঙ্গবন্ধু আরো এগিয়ে গেছেন, কেননা আব্রাহাম লিঙ্কন যেখানে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে রক্ষা করে তার ভেতরে ক্রীতদাসদেরকে
মুক্ত করতে চেয়েছিল, সেখানে লেনিনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রকে ভেঙে ফেলে মানুষে মানুষে সাম্যের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যে রাষ্ট্র (তিনি আশা করতেন) ক্রমে দুর্বল এবং পরিণতিতে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে।  তারপর কি হয়েছে? যে গণতন্ত্র লিঙ্কন চেয়েছিল তার হাল কি বর্তমান বিশ্বে? লিঙ্কনের সংজ্ঞার সঙ্গে মিলিয়ে দেখি যদি তবে দেখবো গণতন্ত্র আমেরিকাতে নেই। তিনি সাম্য চেয়েছিল, সে-সাম্য আসে নি। পুঁজিবাদের মূল ভিত্তিই হচ্ছে মানুষের সঙ্গে মানুষের অসাম্য। অসাম্য আমেরিকায় সুপ্রতিষ্ঠিত সেখানে ধনী আছে, গরীব আছে; সাদা আছে, কালো আছে।
বঙ্গবন্ধু যে সাম্যবাদী রাষ্ট্র গড়ে তুলেছিল সে রাষ্ট্রও বাংলাদেশ গড়ে ওঠেনি। তার ফলে আমেরিকা আজ সারা বিশ্বের মাতব্বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মাতব্বরটি বিশ্বময় পুঁজিবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় লিপ্ত। অর্থাৎ সারা বিশ্বে বৈষম্যের রক্ষক সে। তার তৎপরতা সাম্রাজ্যবাদী, যেখানে যত মানুষ আছে সবার ওপর সে তার কর্তৃত্ব দিচ্ছে চাপিয়ে লিঙ্কন ক্রীতদাসদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিল, সারা বিশ্বে, এবং তাঁর আমেরিকাতেও, কোটি কোটি মানুষ আজ ক্রীতদাস হয়ে রয়েছে; তারা পুঁজির দাসত্ব করছে।
ভবিষ্যৎ ভাবলেও বিষন্ন হবার কারণ ছিল আব্রাহাম লিঙ্কনের। কেননা যে গণতন্ত্রের জন্য তিনি লড়ছিল সে গণতন্ত্র তো নিরাপদ হয় নি পৃথিবীতে; তার জন্য দায়ী তাঁর নিজের দেশই। একজন মার্কিন আততায়ী হত্যা করেছে লিঙ্কনকে, সে কলঙ্ক গোটা আমেরিকার; আমেরিকা নিজের দেশসহ সারা পৃথিবীতে আজ গণতন্ত্র হত্যার কাজে লিপ্ত, সে কলঙ্কও ওই আমেরিকারই। পৃথিবীর লিঙ্কনেরা উজ্জ্বল হন- ওই কলঙ্কিতদের অন্ধকারে। নিয়ম সেটাই; ভরসাও তাই।
আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ ধারায় প্রবাহিত করার পেছনেও বঙ্গবন্ধু অবদান ছিল অনন্য। মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী মুসলিম লীগ, আবার আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগে রূপান্তরÑ এ দেশের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে মুজিবের রাজনৈতিক জীবন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ইচ্ছার ধারক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭০ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের জাতীয় প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জনগণের অবিসংবাদিত জাতীয় নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, সব সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একত্রিত হয়ে এক অখণ্ড বাঙালি জাতিতে পরিণত। হয়েছিল, যেটা আগে কখনো হয়নি। বস্তুত ওই সময় আমাদের এই অঞ্চলের সর্বস্তরের বাঙালিদের মাধ্যমে অভূতপূর্ব স্বদেশপ্রেম জাগ্রত হয়েছিল, যেটা গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে অর্থাৎ বিগত স্বদেশি যুগের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু সেই আন্দোলনটা ছিল খণ্ডিত আন্দোলন। এর সীমাবদ্ধতা ছিল এই, তখনকার মুসলমান সমাজের বৃহত্তর অংশ। নানাবিধ কারণে এ আন্দোলনে যোগ দেয়নি। গত কয়েক দশকে আমাদের সময়কালে এই অঞ্চলের বাঙালি মানস চেতনায় যে অভূতপূর্ব। স্বদেশপ্রেমের স্ফুরণ ঘটেছিল, সেই অনুভূতি ছিল একটা সামগ্রিক অনুভূতি, যা জাতি-ধর্ম-বর্ণ। নির্বিশেষে এই বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানÑ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। বিগত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় যেটা সম্ভব হয়নি, আমাদের সময়কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সেটা সম্ভব হয়েছিল।
বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তিনি তো আবহমান বাংলার চিরকালের প্রাণপ্রবাহ। বাংলার পাখির গানে, নদীর কলতানে, বাতাসের উচ্ছ্বাসে, আকাশের গরিমায়, সূর্যের শৌর্যে, চাঁদের কিরণে, নক্ষত্রের ছায়াপথে, ভোরের শিশিরে, মসজিদের আজানে, মন্দিরের কাঁসরধ্বনিতে, গীর্জার ঘণ্টায়, জারি সারি ভাটিয়ালির সুরে, বসন্তের উল্লাসে, বর্ষার ক্রন্দনে, শরতের শ্যামলিয়ায়, বৈশাখের ভৈরবীতে, বাঙালিতে হাসিকান্না, প্রেম ভালবাসায়, মিলনে বিরহে তিনি চিরদিনের জন্যে চিরকালের জন্যে জাগ্রত, জীবন্ত। তাঁর মৃত্যু হয়নি। তিনি আরও বেশি জীবিত চিরকালের বাঙালির মনে ও মমনে।
এই বিচিত্র বর্ণাট্য জীবনের ছবি ভাষায়, রঙে বা আলোকচিত্রে সম্পূর্ভভাবে তুলে ধরা সম্ভব নয়। কারণ, “তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ।” এই মহত্ত্বের কোনো ছবি তোলা যায় না। একমাত্র জাতীয় চেতনার বিশাল উপলব্ধিতে তাঁর অবস্থান। তবু কেউ ভাষায়, কেউ রঙে, কেউ এই অ্যালবামটিও বাংলার মহানায়কের স্মৃতি ধরে রাখার এমনি একটি প্রচেষ্টা। বর্তমান ও ভাবী প্রজন্মের বাঙালির কাছে হবে এই অ্যালবাম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত। মৃত্যুর তুচ্ছতা অতিক্রম করে যে মহানায়ক নিজের স্বপ্ন ও সংগ্রামের আলোকে আজ আলোকিত, তাঁর সেই আলোকেই আমরা ভবিষ্যতের পথ চিনে নিতে চাই। তিনি আমাদের মুক্তিদাতা। আজকের এবং আগামীদিনেরও। তাঁর আদর্শের উত্তরাধিকার বাঙালির সবচেয়ে বড় সম্পদ ও পাথেয়।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া হয়নি। তাই বলে স্বপ্নটা মিথ্যে হয়ে যায়নি। এক গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, সকলের জন্য সমান সম্ভাবনাপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গড়ার কাজ বাকি রয়ে গেছে। যারা গণতন্ত্রের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজনীতির অঙ্গনে সক্রিয়, তাদের কর্মপরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু চিরকাল প্রেরনার উৎস হয়ে থাকবেন। তার তিরোধান দিবসে সমগ্র জাতির সংগে একাত্ম হয়ে তারা তাদের এই অঙ্গীকারই ব্যক্ত করবেন।