Published : Monday, 15 August, 2022 at 12:00 AM, Update: 15.08.2022 1:43:54 AM
রণবীর ঘোষ কিংকর ||
জাতির
জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারীদের মধ্যে অন্যতম খুনি কর্ণেল (অব.)
খন্দকার আব্দুর রশিদ। বিদেশে আত্মগোপনে থাকায় ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত
খন্দকার আব্দুর রশিদকে আজও দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
তার অবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবী
চান্দিনাবাসীর।
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের নৃশংস ভাবে
হত্যার ৪৭তম জাতীয় শোক দিবসে সরকারের কাছে এ দাবী জানান চান্দিনা উপজেলা
তথা খুনি আব্দুর রশিদদের গ্রামবাসী। তার ফাঁসি কার্যকর করে চান্দিনাবাসীকে
কলঙ্ক মুক্ত করার আহবান জানান তার নিজ গ্রাম ছয়ঘড়িয়াসহ চান্দিনাবাসী।
১৯৭৫
সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বীর দর্পে
ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলছিলেন আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুর রশিদ। ১৯৮৮ সালে তার
ভাই খন্দকার আব্দুল মান্নান চান্দিনা থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। ১৯৯৬
সালের প্রথম নির্বাচনে (৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ) ফ্রিডম পার্টির ব্যানারে কুড়াল
প্রতীকে অংশ নেন খন্দকার কর্ণেল রশিদ। একই সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
১৯৯৮
সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার জজ আদালত ১৫ আসামীর সাথে খুনি আব্দুর রশিদ এর ফাঁসির
আদেশ দেন। ২০০৯সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিমকোট ১২জনের ফাঁসি আদেশ বহাল রাখায়
ওই ১২ আসামীর মধ্যে খন্দকার আব্দুর রশিদ এর নামেও শীর্ষ তালিকায়। ২০১৫ সালে
সরকার খন্দকার আব্দুর রশিদ এর বাড়িসহ ৪ একর ৭৪ শতাংশ জমি বাজেয়াপ্ত করেন।
তারপর থেকে তার গ্রামের বাড়ি ছয়ঘড়িয়ায় ওই সীমানা প্রাচীরে ঘেড়া দ্বিতল
ভবনের ওই বাড়িতে জনমানুষের যাতায়াত না থাকায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কের
পাশের একটি মাঠে নির্মাণ হচ্ছে বৈদ্যুতিক পাওয়ার গ্রীড।
ছয়ঘড়িয়া
গ্রামের বাসিন্দা একাধিক বাসিন্দা জানান, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নারকীয় ওই
হত্যা কান্ডের পর থেকে আমরা কলঙ্কের মধ্যেই আছি। যেখানেই যাই, কোথাও গিয়ে
নিজের গ্রামের নাম বলতে পারি না। কারণ গ্রামের নাম ‘ছয়ঘড়িয়া’ শুনলেই মানুষ
বলে, ‘ওই খুনির গ্রামের মানুষ আপনি?’ তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে যায়। ওই
খুনিকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
একই
গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক রোকন উদ্দিন
ভূইয়া জানান, খুনি রশিদকে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করলেও তার মরদেহ
এই গ্রামের মাটিতে ঠাঁই হবে না। খুনি রশিদ এই দেশের মাটি ও মানুষের সাথে
প্রতারণা করেছে এই গ্রামের মাটি তাকে ষ্পর্শ করবে না।
একই গ্রামের
বাসিন্দা ও কেরণখাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সুমন ভূইয়া জানান, ছয়ঘড়িয়া
গ্রামসহ চান্দিনাবাসী অপেক্ষায় রয়েছে কবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। তার
ফাঁসি কার্যকর হলে কলঙ্ক মুক্তির পাশাপাশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে
চান্দিনাবাসি। তাঁর ফাঁসি কার্যকর ছাড়া আমরা আর একটি আগষ্টও অতিক্রম করতে
চাই না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাত বার্ষিকীর
আগেই কলঙ্কিত খুনির ফাঁসি কার্যকর করে ছয়ঘড়িয়া গ্রাম তথা চান্দিনাবাসী
কলঙ্ক মুক্ত করতে সরকারের কাছে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
চান্দিনা উপজেলা
পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন বক্সী জানান, ‘খুনি আব্দুর রশিদ
শুধু চান্দিনারই নয়। বাংলাদেশ তথা বিশ্বের এক কলঙ্কিত ব্যক্তির নাম। আমরা
জানি সরকার তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে
যাচ্ছেন। তারপরও বলবো আমরা যতদ্রুত সম্ভব ওই কলঙ্ক থেকে মুক্তি চাই।’