ই-পেপার ভিডিও ছবি বিজ্ঞাপন কুমিল্লার ইতিহাস ও ঐতিহ্য যোগাযোগ কুমিল্লার কাগজ পরিবার
ট্রাফিক পুলিশ সংকট কুমিল্লায়
প্রয়োজনের অর্ধেক লোকবল দিয়ে চলছে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ
Published : Tuesday, 23 August, 2022 at 12:00 AM, Update: 23.08.2022 12:50:08 AM
ট্রাফিক পুলিশ সংকট কুমিল্লায়নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক জনবল দিয়ে চলছে কুমিল্লার ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ। পর্যাপ্ত পরিমানে ট্রাফিক সদস্য না থাকায় কুমিল্লা নগরীতে যানজট নিরসনসহ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যেমন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি অতিরিক্ত চাপ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের। নগরীর কিছু কিছু এলাকা যানজটে নাকাল হয়ে চরম ভোগান্তির তৈরী হচ্ছে দিনের পর দিন। কুমিল্লার ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর রাসেল ভুইয়া জানান, বর্তমানে যে পরিমানে ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কাজ করছে শুধু কুমিল্লা নগরীতেই তার দ্বিগুণ জনবল প্রয়োজন। বাসস্ট্যান্ড, বাজার, শপিংমল, হাসপাতাল এলাকাগুলোতে কমিউনিটি পুলিশের যে সদস্যরা কাজ করে তা দিয়েও পর্যাপ্ত হয় না। নগরীতে গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্পটে অপরিহার্য হিসেবে প্রতিদিনই ট্রাফিক সদস্য থাকতে হয়। কিন্তু যে পরিমানে লোকবল আছে তা দিয়ে যানজট নিরসন অসম্ভব। তারপরও আমরা কাজ করছি।
ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে বর্তমানে ৬ জন সার্জেন্ট, ১০ জন এটিএসআই এবং ৩৯ জন কনস্টেবল পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। এছাড়াও আরো ৩০জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্যও নিয়োজিত রয়েছেন। তারা দুই শিফটে কাজ করছে। গুরুত্বের বিবেচনায় বিভিন্ন মোড়গুলোতে প্রতিদিন লোকবল দিয়ে কাজ করা হয়।  
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকা যানজটে নাকাল অবস্থা। যে পরিমানে ট্রাফিক পুলিশ আছে তা পর্যাপ্ত না।  কিছু কমিউনিটি পুলিশ সদস্য দায়িত্বে থাকলেও তারা ঝিমিয়ে পড়েছে। যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করছেন না যথাযথ ভাবে। স¤প্রতি শাসনগাছা ফ্লাইওভার নিচে এবং টার্মিনালের প্রবেশ পথসহ সড়কগুলো সংস্কারের একপাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে এ বাস টার্মিনাল এলাকা অতীতের চেয়ে বর্তমানে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিনের এ ভোগান্তি থেকে রেহাই চান যাত্রী ও বাস শ্রমিকরা।
মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানিগঞ্জ যাবেন রাবেয়া বেগম নামে এক যাত্রী। তিনি শাসনগাছা বাস টার্মিনালের একটি বাসে উঠে বসে আছেন প্রায় ৩০ মিনিট। সড়কে বাস ও গণপরিবহনে জট থাকায় টার্মিনাল থেকে বাস বের হতে পারছে না সড়কে। জট ভেঙ্গে চলাচল স্বাভাবিক করতে ট্রাফিক, কমিউনিটি পুলিশ কিংবা কোন লাঠিয়ালকেও দেখা যাচ্ছে না।
দীর্ঘ এ যানজটে বসে আছে রাবেয়া বেগমসহ বিভিন্ন বাসে শত শত যাত্রী।
একাধিক বাস চালক ও হেল্পার জানান, শাসনগাছা টার্মিনালের যানজট দীর্ঘ হচ্ছে প্রতিদিন। টার্মিনালের উপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রবেশ ও বাহির হওয়ার সড়কগুলো সুরু হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিনের খানাখন্দ ও গর্তে ভরা সড়ক সংস্কার চলছে ধীরগতিতে। সংস্কারে ধীরগতির কারণে বর্তমানে টার্মিনালে পরিবহন প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। বিকল্প সড়ক হিসেবে শহরতলীর ধর্মপুর ঘুরে আসতে হয়।
তাদের অভিযোগ, কুমিল্লা ট্রাফিক বিভাগ থেকে ১২-১৩ কমিউনিটি পুলিশ সদস্যকে যানজট নিরসনে দায়িত্ব দেওয়া হলেও জট নিরসনে তারা যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এতে করে যাত্রীদের সঙ্গে চালক ও শ্রমিকরাও ঘন্টার পর ঘন্টা ভোগান্তিতে থাকেন।
কুমিল্লা জেলা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, শাসনগাছা বাস টার্মিনালে জট নিরসন করে প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ স্বাভাবিক রাখতে ১২-১৩ জন কমিউনিটি পুলিশ সদস্য দায়িত্ব আছেন। তারা ইদানিং ঝিমিয়ে পড়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ এ কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করলেও তাদের পারিশ্রমিক দেন জেলা বাস মালিক সমিতি। তিনি আরও বলেন, ট্রাফিক বিভাগের প্রতি অনুরোধ শাসনগাছা বাস টার্মিনাল এলাকার যানজট নিরসনে যেন একটু নজর দেন।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাসেল ভূঁইয়া বলেন, শাসনগাছা টার্মিনালের চতুর্মুখী সড়ক থেকে বাস ও গণপরিবহন আসা-যাওয়া করে। শুধু শাসনগাছা নয় পুরো কুমিল্লা নগরীর যানজট নিরসনে যে পরিমান পুলিশ সদস্য প্রয়োজন তার জন্য আমরা উপর মহলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ সদস্যদের কাজে লাগানোর জন্যও বিভিন্ন এলাকার স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করছি। শাসনগাছা এলাকায় সংস্কার কাজ চলমান থাকায় সেখানে যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার।  
কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দা ও বিশিষ্ট লেখক কাজী মোঃ আলমগীর বলেন, আমরা গত কয়েক বছর যাবতই গণমাধ্যমে জানতে পারছি যে কুমিল্লায় ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বাড়বে। নানান নতুন ব্যবস্থাপনায় নগরী থেকে যানজট নিরসন হবে। কিন্তু সবই কথার কথা। কুমিল্লাবাসী এসব কথার কোন বাস্তবায়নই পাচ্ছে না।